Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
adhir chowdhury

বহরমপুরে হারলে বাদাম বিক্রি করব! বলছেন অধীর, টিকে থাকার লড়াইয়ে টানা পাঁচ বারের কংগ্রেস সাংসদ

রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, বিবিধ কারণেই এ বার অধীরের সামনে কঠিন লড়াই। অধীর সেই সূচকগুলিকে স্বীকৃতিও দিচ্ছেন। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মুখে বলছেন ‘ইজ়ি টাস্ক’।

Adhir Chowdhury said that he will leave politics if he is defeated in Baharampur seat

নির্বাচনী প্রচারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ১১:০০
Share: Save:

সপ্তাহ দু’য়েক আগে কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে পাশে নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, ‘‘বহরমপুরে হেরে গেলে রাজনীতি থেকে ছুট্টি নিয়ে নেব।’’ কিন্তু রাজনীতি ছাড়লে করবেন কী? আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে কংগ্রেস নেতা জানিয়ে দিলেন, দরকারে তিনি বাদাম বিক্রি করবেন। কিন্তু হেরে গেলে আর রাজনীতিতে থাকবেন না। তাঁর কাছে এ বারের ভোট, ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’। ‘টিকে থাকার লড়াই’।

বহরমপুরে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। বিজেপি প্রার্থী করেছে এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক নির্মলচন্দ্র সাহাকে। গত লোকসভা ভোটে অধীরের জয়ের ব্যবধান সাড়ে তিন লক্ষ থেকে ৮০ হাজারে নেমে এসেছিল। এ বার কি তাঁর লড়াই কঠিন? অধীরের জবাব, ‘‘ইজ়ি টাস্ক (সোজা কাজ)। আমি নড়বড়ে নই।’’ আর যদি না জেতেন? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জবাব, ‘‘রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে কী করবেন? এ বার জবাব, ‘‘কত কিছু করার আছে! দরকারে বাদাম বেচব।’’ অধীরের বক্তব্য, তিনি আগেই বলে রেখেছেন রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে হবে, বহরমপুরে তৃণমূল হারলে সেটা মমতা তাঁর হার বলে মানবেন।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, বিবিধ কারণেই এ বার অধীরের সামনে কঠিন লড়াই। অধীর সেই সূচকগুলিকে স্বীকৃতিও দিচ্ছেন। তবে মুখে বলছেন ‘ইজ়ি টাস্ক’। এই প্রথম অধীরের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ কোনও সংখ্যালঘু প্রার্থী। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৯— পাঁচ বার অধীর বহরমপুর থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু কখনও সংখ্যালঘু প্রার্থীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই হয়নি তাঁর। সেই সমীকরণকে নস্যাৎ করেননি অধীরও। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল এটা দিয়েই সংখ্যালঘু ভোট বিভাজিত করার চেষ্টা করছে। ওরা দাদা আর ভাই (পড়ুন ‘ভাইজান’) শব্দ দিয়ে পার্থক্য করতে চাইছে। দাদা হিন্দু টার্ম, ভাই (ভাইজান) মুসলিম।’’ অধীরের এ-ও অভিযোগ যে, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলই বিজেপির পক্ষে প্রচার করছে।

টিকে থাকার লড়াই

একদা উত্তরবঙ্গের কোচ, কামতাপুরি, নমঃশূদ্র, তফসিলি অংশে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু সে সব এখন অতীত। মালদহ, মুর্শিদাবাদকেও এখন আর কংগ্রেসের গড় বলা যায় না। তা-ও যেটুকু শক্তি রয়েছে, এই দুই জেলাতেই। যে কারণে অনেকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসকে ‘মামু’ (মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের আদ্যক্ষর মিলিয়ে) পার্টি বলেন। কিন্তু কেন এমন হল? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির জবাব, ‘‘আমি ম্যাজিক জানি না। আমাদের সংগঠন নেই, অর্থবল নেই। আমাকে বসানো হয়েছে সভাপতির চেয়ারে। আমি একা কী করব? তার মধ্যেই চেষ্টা করছি।’’ তবে যাঁরা কংগ্রেসকে ‘মামু পার্টি’ বলেন, তাঁদের উদ্দেশে অধীর বলেছেন, ‘‘কেউ উপহাস করতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, অহঙ্কারই পতনের কারণ হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটা টিকে থাকার লড়াই। অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। আগে টিকে থাকতে হবে। তার পর এগোনোর কথা ভাবা যাবে।’’

‘মমতা আমার সব শেষ করে দিয়েছে’

গত বছর অগস্ট মাসে দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটের জল্পনা শুরু হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বলে আসছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ইন্ডিয়া’র গুরুত্বপূর্ণ শরিক। আমাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’ কিন্তু অধীর তাঁর তৃণমূল-বিরোধিতা জারি রেখেছিলেন। এমনকি, বহরমপুরে মমতাকে দাঁড়ানোরও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়া প্রসঙ্গে অধীর বলেন, ‘‘দিল্লিতে কার সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা আমি জানি না। আমি সেখানে ছিলাম না।’’ অধীর বলেন, ‘‘আমি শুনেছিলাম ওরা (তৃণমূল) দুটো আসন ভিক্ষা দিতে চেয়েছিল। তা-ও মালদহে। মুর্শিদাবাদে নয়।’’ বহরমপুরেও নয়? অধীর বলেন, ‘‘না। আমি কখনও মমতার দয়ায় ভোটে জিতিনি। জিততে চাইও না।’’ তৃণমূলনেত্রীর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে অধীরের বক্তব্য, ‘‘মমতা আমার সব শেষ করে দিয়েছে। তা-ও আমি আত্মসমর্পণ করিনি। আত্মসম্মান নিয়ে রাজনীতি করেছি।’’ বাম জমানার শেষ দিকে তৃণমূলের সম্পর্কে তাঁর কী মনোভাব ছিল, সাক্ষাৎকারে তা-ও খোলসা করেন অধীর। তাঁর কথায়, ‘‘২০০৭, ২০০৮ সালে আমিই ম্যাডামকে (সনিয়া গান্ধী) বলেছিলাম, তৃণমূল আমাদের ন্যাচরাল অ্যালাই (স্বাভাবিক সঙ্গী)। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে দেখলাম, তৃণমূল আসলে কংগ্রেসকে শেষ করতে চাইছে। তখন থেকে আমি কংগ্রেস পার্টিকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করছি। আমার কাজ যেটুকু রয়েছে, সেইটুকুকে রক্ষা করা।’’

হার্মাদমুক্ত বাম

প্রবল বাম জমানায় মুর্শিদাবাদ জেলায় বাম-বিরোধী রাজনীতিতেই অধীরের উত্থান। কিন্তু সেই তাঁকেই পাকেচক্রে গলায় সিপিএমের নির্বাচনী প্রতীক কাস্তে-হাতুড়ি-তারা আঁকা উত্তরীয় পরতে হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে একদা লড়াই ছিল, সেই তাঁদেরই হাত ধরতে হল? অধীরের কথায়, ‘‘যে বামেদের বিরুদ্ধে আমার লড়াই ছিল, তারা হার্মাদযুক্ত বাম ছিল। সেই হার্মাদেরাই এখন তৃণমূলের দামাদ হয়েছে। এখন আমি হার্মাদমুক্ত বামেদের হাত ধরেছি। দামাদযুক্ত তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতিতে কিছুই চিরস্থায়ী নয়। রাজনীতিতে শত্রু-মিত্রও সব সময় এক থাকে না। এর মধ্যে কোনও লুকোছাপা নেই।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE