অসহায়: অপুষ্টির শিকার বেশির ভাগ শিশু আর তাদের মায়েরা। —নিজস্ব চিত্র।
উখিয়া আর কতুপালং-এর মাঝে একটি মাঠে মাস তিনেকের শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বছর সাতেকের ছেলেটি। শিশুটি তার দিদির ছেলে। দিদি ত্রাণ নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়েছে। সে যখন এল, দেখলাম এগারো-বারো বছরের মেয়ে!
পালংখালি শিবির থেকে কয়েক হাত দূরে ছেলে কোলে দাঁড়িয়ে এক মহিলা। দেখে মনে হয় বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। কিন্তু কথা বলে জানা গেল, তাঁর বয়স পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ! সন্তানের সংখ্যা এগারো।
এক-দু’জন নয়। লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর বেশির ভাগ মেয়ের কোলেই হয় মাস চার, কিংবা মাস সাত কিংবা বছর খানেকের সন্তান! পালংখালির শিবিরে সরকারি জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী জানালেন, সেখানে শিবিরে দশ মাসের শিশু কোলে একটি কিশোরী এসেছিল। তার বয়স বড়জোর পনেরো। সেই কিশোরীও আবার ছ’মাসের গর্ভবতী!
আরও পড়ুন:বোরখা পরে পালাতে হয়েছে পূজা-অনিতাদেরও
রাষ্ট্রপুঞ্জের এক সংগঠন জানাচ্ছে, ২৫ অগস্টের পর থেকে কতুপালং থেকে শুরু করে পালংখালি, বান্দারবনে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী মহিলাদের বেশির ভাগেরই সন্তান সংখ্যা কম করে পাঁচ। অনেকেই ফের সন্তানসম্ভবা। ফলে আগামী কয়েক মাসে আরও হাজারখানেক রোহিঙ্গা শিশু বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেবে। মায়ানমার সরকার এঁদের কোনও নাগরিকত্ব স্বীকার না করায় সরকারি সুবিধা কিংবা চিকিৎসা কোনওটাই এঁরা পাননি। কোনও টিকাকরণ হয়নি। জন্ম-নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সচেতনতাও নেই। শরণার্থী শিবিরে অবশ্য তাঁদের প্রোটিন বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। টিকাকরণ হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশ কী ভাবে চলবে, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভর করছে সেটা।
মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে পালংখালি পর্যন্ত জাতীয় সড়কের উপর থেকে শরণার্থীদের সরানোর কাজও শুরু হয়েছে। রাস্তার পাশে দু’হাজার একর সরকারি খাস জমি। সেখানেই শরণার্থীদের রাখার ব্যবস্থা করছে সরকার। শরণার্থীদের নাম নথিভুক্ত করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার যে নজির তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রচার চোখে পড়ছে কক্সবাজার থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত, বস্তুত সারা দেশেই। আবার এও ঠিক, আপাতত বাংলাদেশ যে এত শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে পেরেছে, তার কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জের একাধিক সংস্থা এগিয়ে এসেছে ত্রাণ নিয়ে। ত্রাণ আসছে ভারত থেকেও। মঙ্গলবারও বালুখালি ১ এবং ২ নম্বর শিবিরে ভারত থেকে পাঠানো ত্রাণ বিলি করেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy