Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh News

গণহত্যার স্মৃতি, দুই দিবসে একই যন্ত্রণার শরিক বাংলাদেশ আর আর্মেনিয়া

মধ্য কলকাতার রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নামে কলেজের সামনে ছাত্রদের ভিড় সব সময়। ছুটি না থাকলে ফাঁকা নয় কখনই। ১৯৪৪-এ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান যখন এখানে পড়তেন তখনও এমনই ছিল।

পশ্চিম পাকিস্তানের গণহত্যা শুরু হয় ২৫ মার্চ থেকে।

পশ্চিম পাকিস্তানের গণহত্যা শুরু হয় ২৫ মার্চ থেকে।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ১২:৩৭
Share: Save:

মধ্য কলকাতার রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নামে কলেজের সামনে ছাত্রদের ভিড় সব সময়। ছুটি না থাকলে ফাঁকা নয় কখনই। ১৯৪৪-এ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান যখন এখানে পড়তেন তখনও এমনই ছিল। তখনকার নাম ইসলামিয়া কলেজ। আইএ পড়তেন মুজিবুর। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন কবি গোলাম কুদ্দুস। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একনিষ্ঠ ভক্ত মুজিব সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর বেতার ভাষণ শুনতেন। মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগত। থাকতেন কলেজের কাছেই বেকার হস্টেলে ২৪ নম্বর ঘরে। তাঁর স্মৃতিতে কক্ষটি সুরক্ষিত। ছাত্র রাজনীতি করতেন মুজিব। সেটা ক্লাস বন্ধ করে নয়। ৩৬ বছর পর অখণ্ড পাকিস্তানে নির্বাচনে বিপুল জয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা তাঁর। হতে পারেননি। পশ্চিম পাকিস্তান হতে দেয় নি। বাধ্য হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা দাবি। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা। পশ্চিম পাকিস্তানের গণহত্যা শুরু ২৫ মার্চ। ন'মাস পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জয়। তার মধ্যে ৩০ লাখ বাঙালির প্রাণ হরণ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন থেকে রক্তের নদী বওয়া শুরু। ধীরে ধীরে প্রমাণিত, অস্ত্রের থেকে শহিদের রক্তের তেজ বেশি।

১৯৪৭ থেকে বিনাশের ইতিহাস। বঞ্চনা শোষণের সঙ্গে বাংলা ভাষাকে কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত। পূর্ব পাকিস্তান মানবে কেন। গর্জে উঠেছে। ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে শহিদ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ভাষা আন্দোলন ক্রমে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপান্তরিত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন থেকে রক্তের নদী বওয়া শুরু

২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি। যে ভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হয়েছে, সে ভাবেই এ দিনটিও শহিদ শ্রদ্ধার স্মারক হোক। বাংলাদেশের সংসদে দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকারের প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, প্রস্তাব আইন হয়ে এলে তারাও স্বীকার করবে। তাদের স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি তৈরি। ঢাকা সহ সারা দেশে সাত দিনের 'স্বাধীনতা র‌্যালি'। স্বাধীনতার দিন ২৬ মার্চ বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সকাল ৭টায় সভা করে জাতীয় স্মৃতি সৌধে, আর সকাল সাড়ে ৯টায় শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। ২৭ মার্চ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা। আলোচনার পরিবর্তে দেশব্যাপী র‌্যালি আর রচনা প্রতিযোগিতা।

৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। ১৯৩টি সদস্য দেশ সম্মতি দিয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। প্রস্তাবটা এনেছিল আর্মেনিয়া। সেখানে স্বাধীনতার আগে পরে রক্তপাত কম হয়নি।১৯৯১-তে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হওয়ার পরেও নাগোর্নোকারাবাঘের দখল নিয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার দীর্ঘ যুদ্ধ হয়েছে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৯৯৪-তে যুদ্ধ বিরতি ঘোষিত। রক্তের দাগ এখনও মুছে যায় নি। বাংলাদেশে শহিদ রক্তের রেখা আরও যন্ত্রণাময়, অনেক বেশি গভীর।

(ছবি: সংগৃহীত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE