Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bangladesh News

সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে বিপুল সম্পদ, এ বার সে দিকে নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ

সাগর সকালে নীল, রাতে কালো। ভাল করে দেখলে আরও কত রং। গভীরেও বর্ণময় বৈচিত্র। ডুব দিলেই অন্য জগৎ। সীমাহীন সম্পদ। আবিষ্কারের অপেক্ষায়। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে তেমনি ঐশ্বর্যের সন্ধান। টেনে তুললে ফুলে ফেঁপে উঠবে দেশটা। পাল্টাবে অর্থনীতি। উন্নয়নে আরও জোয়ার অনিবার্য।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ১৪:১৫
Share: Save:

সাগর সকালে নীল, রাতে কালো। ভাল করে দেখলে আরও কত রং। গভীরেও বর্ণময় বৈচিত্র। ডুব দিলেই অন্য জগৎ। সীমাহীন সম্পদ। আবিষ্কারের অপেক্ষায়। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে তেমনি ঐশ্বর্যের সন্ধান। টেনে তুললে ফুলে ফেঁপে উঠবে দেশটা। পাল্টাবে অর্থনীতি। উন্নয়নে আরও জোয়ার অনিবার্য। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পলিমাটি জমছে বছরে ২০০ কোটি টন। টেনে আনছে নদী। নদী-সাগরের দেয়া নেয়া কম নয়। বিপদ বাড়ে, সাগর যদি তেজ দেখিয়ে নদীতে ঢোকে। তখন নোনা জলে ফসল নষ্ট। দুর্যোগে ও সমুদ্র প্রকোপে জেরবার জনপদ। ক্ষতি যতটুকু তার চেয়ে লাভ অনেক বেশি। খনিজ, জ্বালানি সম্পদ জমে বঙ্গোপসাগরের বুকের ভেতর। সেটা নাগালে আনাটাই কাজ। এরই নাম 'ব্লু ইকোনমি' বা নীল সমুদ্রের অর্থনীতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তারই তোড়জোড়।

বঙ্গোপসাগরের সম্পদ কাজে লাগাতে পারলে কেল্লাফতে। কী নেই সেখানে। রয়েছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম। ১৩টি জায়গায় সোনার চেয়ে দামি বালি। যাতে মিশে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট। অগভীরে জমে 'ক্লে'। যার পরিমাণ হিমালয়কেও হার মানায়। যা দিয়ে তৈরি হয় সিমেন্ট। এই ক্লে হাতে পেলে চিন্তা কী। সিমেন্ট কারখানাগুলো রমরমিয়ে চলবে। কাঁচামালের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হবে না। তেল-গ্যাসের সন্ধানও মিলেছে। চেষ্টা করলে তাও আয়ত্তে। দরকার শুধু তল্লাশি চালিয়ে তুলে আনার। এ একেবারে স্থায়ী আমানত। খোয়া যাওয়ার ভয় নেই। ব্যাঙ্কে টাকা তোলার মতো বিষয়টা সহজ না হলেও তেমন কঠিনও নয়। প্রযুক্তিগত উদ্যোগটা নিখুঁত হওয়া দরকার।

কাজটা করতে বিদেশি কোম্পানিকে ব্লক ইজারা দেওয়া হয়েছে। তাদের আঠারো মাসে বছর। দেরি হওয়ার কৈফিয়ত ঠোঁটে মজুত। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের উদ্বেগ অমূলক নয়। তিনি জানিয়েছেন- সমুদ্রে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, খনন, আহরণ বিশাল কারিগরী বিষয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে কাজটা করা জরুরি। ঠিকমত অনুসন্ধান, জরিপ চালাতে না পারলে জাতীয় সম্পদের অপচয় মাত্রা ছাড়াবে। ২০১৯-এর মধ্যেই সমুদ্র অর্থনীতিতে বিপ্লব আনতে হবে। দেরি হলে চলবে না। এটাও ঠিক, সমুদ্র সম্পদ পাতকুয়ার জল নয়। দড়িতে বালতি বেঁধে অবলীলায় টেনে তোলা যায় না। কেরামতির দরকার। বিশেষজ্ঞরা সেটা বোঝে। পাশের দেশ মায়ানমার বঙ্গোপসাগরে বড় গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। গ্যাস তোলাও চলছে নির্বিঘ্নে। মায়ানমার পারলে বাংলাদেশ পারবে না কেন।

আরও পড়ুন: টিনের কৌটোয় বাংলাদেশের খাদ্য যাচ্ছে চিন, তাইওয়ান, ভিয়েতনামে

বঙ্গোপসাগর নামটার সঙ্গে বঙ্গ জড়িয়ে। ইংরেজিতে বললে, 'বে অব বেঙ্গল।' সেখানেও বেঙ্গল নামটাই থাকছে। সমুদ্রটা কিন্তু শুধু বাঙালির নয়। ভারতের দক্ষিণ সীমান্ত কন্যাকুমারিকাতেও হাজির বঙ্গোপসাগর। জুড়ে আছে বাংলাদেশ, মায়ানমারের সঙ্গেও। বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে বিরোধ ছিল তিন দেশের মধ্যে। ২০১২-তে মায়ানমার, ২০১৪-তে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর ভাগাভাগি সমস্যা মিটেছে। বাংলাদেশের ভাগে যা পড়েছে তা বিশাল। ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। হাতে আছে ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অধিকার। চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩০৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ, অপ্রাণিজ সম্পদের সার্বভৌম কর্তৃত্ব। এটা আদায় করেছেন হাসিনা। সম্পদশালী হয়েও কূপমণ্ডুক হওয়াটা কাজের কথা নয়। সমুদ্র মন্থন করে অমৃত তোলার মতো অনতিবিলম্বে তুলতে হবে অনাস্বাদিত ঐশ্বর্য। যা বদলে দেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Blue Economy Bay Of Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE