২০১৫ সালের ১৫ অগস্ট জন্মদিনের কেক কাটছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
‘ভুয়া কাগজপত্রে অসদুপায় অবলম্বন’ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনে জন্মদিন পালন করে যাওয়ায় সাবেক বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবেদনকারীর অভিযোগ, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা হারিয়ে খালেদা জিয়া মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে ১৫ অগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালন শুরু করেন। কেবল জাতির পিতাকে অসম্মান করে স্বাধীনতাবিরোধী-সহ দেশবিরোধীদের হাস্যরসের খোরাক যোগাতে এ জন্মদিন পালন শুরু করেন তিনি। যা জাতির সঙ্গে স্পষ্ট প্রতারণা।
আবেদনকারীর দাবি, বিভিন্ন মাধ্যমে খালেদা জিয়ার পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ অগস্ট পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ অগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য তিনি শোকের ওই দিনে জন্মদিন পালন করেন।
মামলায় আরও বলা হয়, কেবল ভুয়া জন্মদিনের ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হননি খালেদা জিয়া। বরং ব্যাপক প্রচার করেতা পালন করছেন। তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট নির্মম ভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার সদস্যদের নামে নানা রকম কুৎসা, বানানো গল্প প্রচার ও গুজবের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানী ঘটানো হয়। এ ভাবে কুরুচিকর বক্তব্যের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করা-সহ স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধপরাধীদের নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়— যা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আইন, রাষ্ট্র এবং সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড।
১৯৯১ সালের ২০শে মার্চ তারিখে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সরকারী সংবাদ সংস্থা বাসস থেকে পাঠানো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবনী ছাপা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, তাঁর জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯শে অগষ্ট।
মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অগস্ট এবং ১৯৯৭ সালের ২৭ অগস্ট বেশ কিছু সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। সেখানে লেখা হয়, এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ১৯৯১ সালের ২০শে মার্চ তারিখে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সরকারী সংবাদ সংস্থা থেকে পাঠানো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবনী ছাপা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, তাঁর জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯শে অগষ্ট।
এ ছাড়া খালেদা জিয়ার কাবিন নামায় জন্মদিন উল্লেখ করা আছে, ১৯৪৪ সালের ৯ অগস্ট এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের তার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে তার জন্মদিন উল্লেখ করা হয়েছে ৫ আগস্ট ১৯৪৬।
১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া এ ভাবে ভূয়া জন্মদিন পালন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছর খালেদা জিয়া কেক না কাটলেও তাঁর জন্মদিন পালন করতে মিলাদের আয়োজন করে বিএনপি।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর হাকিম মহম্মদ মাজাহারুল ইসলামের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম।
ম্যাট্রিক পরীক্ষার মার্কশিট অনুসারে খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর। বিয়ের কাবিননামা অনুসারে ওনার জন্মদিন ১৯৪৪ সালের ৯ই অগষ্ট।
মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট মেহম্মদ মাজহারুল ইসলাম বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আগামী ১৭ অক্টোবর সশরীরে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী দুলাল মিত্র জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৯৮ ধারায় ১৫ অগস্ট জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা জন্ম দিনকে সত্য বলে প্রচার করে তা পালন করা এবং ৪৬৯ ধারায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম নষ্ট করার অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার বাদী একজন নাগরিক ও সচেতন সাংবাদিক হিসাবে জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা ও বর্ণনাকৃত অপরাধজনক কর্মকাণ্ড করায় মারাত্মক ভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে এ মামলা দায়ের করেন বলেও তার আইনজীবী আরও জানান। এ মামলায় ৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে বলেও জানান দুলাল মিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy