Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National news

খুলনা-কলকাতা ট্রেন ছুটল বলে

সুদর্শন, প্রতিভাবান রবীন্দ্রনাথের কনে পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা। উদ্যোগী দুই বৌঠান জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, কাদম্বরী দেবী, ভাইঝি ইন্দিরা দেবী। ঠাকুর পরিবারের পাল্টি ঘর পিরালী ব্রাহ্মণদের আড্ডা ছিল যশোরের নরেন্দ্রপুর গ্রামে। জ্ঞানদানন্দিনীর বাপের বাড়ি সেখানেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অমিত বসু
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ১৩:২৬
Share: Save:

সুদর্শন, প্রতিভাবান রবীন্দ্রনাথের কনে পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা। উদ্যোগী দুই বৌঠান জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, কাদম্বরী দেবী, ভাইঝি ইন্দিরা দেবী। ঠাকুর পরিবারের পাল্টি ঘর পিরালী ব্রাহ্মণদের আড্ডা ছিল যশোরের নরেন্দ্রপুর গ্রামে। জ্ঞানদানন্দিনীর বাপের বাড়ি সেখানেই। গ্রামের সব মেয়েরাই যে আগেভাগে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে কে জানতো। শেষে যশোর পেরিয়ে খুলনায় খোঁজ। পাত্রী ভবতারিনী অজানা অচেনা নয়। ঠাকুর এস্টেটের সেরেস্তা বেণীমাধব রায়চৌধুরী আর তাঁর স্ত্রী দাক্ষায়ণী দেবীর কন্যা। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে ফুলতলা। আরও তিন কিলোমিটার এগোলে দক্ষিণডিহি। সেখানে ছুটলেন দুই বৌঠান। দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, ভ্রাতুষ্পুত্র সুরেন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বাদ। রবীন্দ্রনাথের যাওয়াটা দরকার ছিল। লজ্জায় হবু শ্বশুরবাড়ির পথ মাড়াননি। বিয়ে করতেও তিনি শ্বশুরবাড়ি যাননি। ভবতারিনী চলে আসেন জোড়াসাঁকোর মহর্ষি ভবনে। বিবাহ পর্ব সেখানেই চুকে যায়। ভবতারিনীর নাম পাল্টে রবীন্দ্রনাথ দেন মৃণালিনী। তখন খুলনায় যাওয়া আসা চলত জলপথেই। খুলনা-কলকাতার যোগাযোগ বজরাতেই। রেল বা সড়ক পথ কোথায়। সত্যজিৎ রায়ের 'অপুর সংসার' এর অপুর বিয়েও খুলনায়। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই বর সেজে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়ে অপু। বন্ধু ফুলুর সঙ্গে কলকাতা থেকে খুলনা যাত্রা নৌকাতেই।

অপুর শ্বশুরবাড়ি সিনেমার। রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরালয় বাস্তব। এখনও আছে। বাংলাদেশ সরকার রক্ষণাবেক্ষণে যত্নবান। দোতলা বাড়ির নীচে চারটে ঘর। ওপরে দু'টো। চিলেকোঠায় গ্যালারি। শৌচাগারটি বাড়ির পেছনে। ১৮৮৩-তে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে বাইশ বছর বয়সে। মৃণালিনীর বয়স তখন মাত্র নয়। তাঁর জন্ম ধরা হয় ১৮৭৪-এর ১ মার্চ। বিয়ের পর মৃণালিনী দেবী কতবার বাপের বাড়ি গেছেন তার রেকর্ড নেই। ঘন ঘন যে রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে যেতে পারতেন না সেটা নিশ্চিত। সংসার আগলে বসেছিলেন।

১৯৯৫ পর্যন্ত অন্যের ভোগদখলে থাকা বাড়িটি ১৯৯৯ তে রবীন্দ্র কমপ্লেক্সের স্বীকৃতি পায়। তিন একর ১৪ শতক জায়গা জুড়ে স্মৃতির স্পর্শ। রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনী দেবীর ছবির সমারোহ। লাইব্রেরিও আছে। বাড়িটি আগে ছিল টিনের চালের। সংস্কারের পর আধুনিক হয়ে ওঠে। কলকাতা থেকে গিয়ে এ বার সব কিছু স্বচক্ষেই দেখা যেতে পারে। নদী পথে যাওয়ার দরকার নেই। বাস, ট্রেন দুই-ই পাওয়া যাবে। বাসের ট্রায়াল রান শুরু হয়ে গেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকেই ট্রেন চলাচলের কথা ছিল। শুল্ক-অভিবাসন দফতরের পরিকাঠামোর কাজ শেষ না হওয়ায় একটু দেরি হবে। ফেব্রুয়ারিতেই যাতে চলতে পারে তার চেষ্টা হচ্ছে।

খুলনা-কলকাতার দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার স্পিডে গেলেও আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছনোর কথা। তা হবে না। আরও ঘন্টা আড়াই বেশি লাগবে। শুল্ক-অভিবাসন দফতরের চেকিংয়ে সময় যাবে। সীমান্তে পেট্রাপোল-বেনাপোলের চেকপোস্ট। বাসে যেতেও সেখানেই চেকিং। ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস এই রুটেই যাওয়ার কথা ছিল। রাস্তা বদলে গেদে দর্শনা দিয়ে যাচ্ছে। কলকাতা থেকে সরাসরি যে বাস ঢাকায় যায় সে বাস পেট্রাপোল-বেনাপোলে চেকিং হয়। থামে ঘণ্টা দুই। লাঞ্চের জন্য মাগুরায় দাঁড়ায়। মাছ-মুরগির ঝোল ভাত খেতে যতটা সময়। মাঝ রাস্তায় যাত্রী নামার অনুমতি নেই। খুলনা-যশোরের মানুষ কলকাতার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের আশায় দিন গুনছে। আপাতত সপ্তাহে চার জোড়া ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত। যাত্রী বাড়লে ট্রেনও বাড়ান হবে।

আরও পড়ুন: ঢাকার কাছে মৈত্রী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দুমড়ে গেল গাড়ি, মৃত পাঁচ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata-Khulna Train Train service Indo-Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE