Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আমি খ্যাতি বাড়ানোর জন্য আবৃত্তি শেখাই না

আমি খ্যাতি বাড়ানোর জন্য আবৃত্তি শেখাই না ছন্দ কেটে গেলে কবিতা বেতালা গানের মতো লাগবে। আবৃত্তির ক্লাসরুমে বলছেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়যখন ‘আবৃত্তির ক্লাসরুম’ প্রথম শুরু হয় আনন্দবাজারের পাতায়, আমি একটু সংশয়ে ছিলাম। কেমন চলবে কাগজ-কলমের এই ক্লাস? কিন্তু ক্লাস চলছে। এবং মোটামুটি ভালই চলছে মনে হয়। মনে হওয়ার কারণ, প্রচুর চিঠি পাচ্ছি মেল-এ। প্রশ্ন এবং নিজস্ব মতামত। সারা পৃথিবী থেকে। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, দিল্লি, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ। কলকাতা তো আছেই। কয়েকটি চিঠির উল্লেখ করি।

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

যখন ‘আবৃত্তির ক্লাসরুম’ প্রথম শুরু হয় আনন্দবাজারের পাতায়, আমি একটু সংশয়ে ছিলাম। কেমন চলবে কাগজ-কলমের এই ক্লাস? কিন্তু ক্লাস চলছে। এবং মোটামুটি ভালই চলছে মনে হয়। মনে হওয়ার কারণ, প্রচুর চিঠি পাচ্ছি মেল-এ। প্রশ্ন এবং নিজস্ব মতামত। সারা পৃথিবী থেকে। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, দিল্লি, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ। কলকাতা তো আছেই। কয়েকটি চিঠির উল্লেখ করি।
মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সৌম্যেন্দ্র সাহা। তিনি স্পোর্টস সায়েন্টিস্ট। এবং গায়ক। জানিয়েছেন, বাংলা উচ্চারণ নিয়ে লেখাটি তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে। প্যারিস থেকে পৃথ্বীন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন বাংলাভাষার উচ্চারণ নিয়ে তাঁর আশঙ্কার কথা। যে ভাবে ‘ভ’কে ইংরেজি অক্ষরে ‘V’ লেখা হচ্ছে, এবং আরও কিছু কিছু অনুরূপ ব্যবহার হচ্ছে, তাতে তিনি আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে বাংলাভাষার বানান ও উচ্চারণ বিকৃত হয়ে যাবে। পৃথ্বীন্দ্র একজন ভাষাবিদ। সিডনি থেকে অনুপ মুখোপাধ্যায় ‘কৃষ্ণ’ শব্দের উচ্চারণ নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছেন। বাংলায় আমরা বলি, ‘ক্রিষ্ণো’, আর ওড়িয়া বা মরাঠিতে ‘ক্রুষ্ণো’। উত্তরে বলি, দুটোই ঠিক। এ বিষয়ে পরের কোনও একটি সংখ্যায় বিস্তারিত বলা যাবে। কলকাতার ছাত্রী ঊর্মিমালা মাঝে মাঝে প্রশ্ন পাঠায় কণ্ঠস্বর নিয়ে। তবে ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে একটু অসুবিধে হয়। ওগুলো করে দেখানো সহজ। লেখা একটু মুশকিল।
বিরূপ মন্তব্যও আছে। ওড়িশার একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জীবনবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন আমি যেন উচ্চারণ শেখানো বন্ধ করি। আরও জানিয়েছেন যে, তাতে আমার খ্যাতিতে ভাটা পড়বে না। সবিনয়ে জানাই, আমি খ্যাতি বাড়ানোর জন্য উৎসুক নই। আনন্দবাজারের অনুরোধে আমি আমার অর্জিত সামান্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাটুকু ভাগ করে নিচ্ছি মাত্র। সে জানাটুকু সামান্যই। তবে সেই সামান্যটুকু ভাগ করার মধ্যে কোনও অপরাধ আছে বলে মনে করি না।
আগের সংখ্যার লেখায় দুটি মুদ্রণপ্রমাদের উল্লেখ করি। শেষ অংশে লেখা হয়েছে ‘woman’। সঠিক শব্দটি হবে women। তার কিছু আগে ছাপা হয়েছে ‘শ’ আর ‘ভ’ ওষ্ঠবর্ণ। ওটা ‘শ’ হবে না, ‘প’ হবে। ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন বন্ধু প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, আর পত্রলেখক নন্দন সেনগুপ্ত। তাঁদের ধন্যবাদ।
উচ্চারণ নিয়ে পরে আরও কথা হবে। আজ ছন্দের কথা বলি।
সন্ধে ছ’টার সময় গড়িয়াহাটের মোড়ে দাঁড়িয়েছেন কখনও? একটা চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। একটা অটো ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে আসছে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল একটা বাস, একটা সাইকেল ঘন্টি বাজিয়েই যাচ্ছে, তার মধ্যে হাত-পা নাড়ছে এক উত্তেজিত দোকানদার। সব মিলিয়ে একটা chaos। এবার রয়ে সয়ে এক একটা জিনিসকে আলাদা করে দেখুন। দেখবেন, তাদের সবারই একটা নিজস্ব চলন আছে। সিগন্যাল সবুজ হতেই তিরবেগে ছুটে গেল যে-বাইক, কিংবা যে-অটো এদিক ওদিক বেঁকে, খানিক সোজা গিয়ে আবার বেঁকে গেল, কিংবা যে-গাড়িটা গতি কমিয়ে পাশে দাঁড়াল—তাদের সবারই একটা নিজস্ব চলনভঙ্গি আছে। এই চলনভঙ্গিটাই হল ছন্দ। দাঁড়িয়ে থাকা বাস থেকে লাফ দিয়ে নামলেন যিনি, তাঁর এক রকম ছন্দ, আবার লঘুপায়ে পাশ দিয়ে চলে গেল তিন কলেজপড়ুয়া—তাদের আর এক রকম ছন্দ। একটার সঙ্গে অন্যটা মেলে না। কিন্তু নিজস্ব ভঙ্গিতে সবাই ছন্দোময়।

কবিতাও তাই। প্রত্যেক কবিতারই একটা নিজস্ব চলনভঙ্গি আছে। ভাল আবৃত্তিকার হতে গেলে আপনাকে সেই ভঙ্গিটা ধরতে হবে। কোনও কবিতা একটু ধীর গতিতে চলে, কোনও কবিতার দোলা একটু বেশি, আবার কোনও কবিতা যেন লাফিয়ে লাফিয়ে যায়। কবিতার এই যে চলা—এটাই ছন্দ।

কবিতার অন্ত্যমিল আর ছন্দ কিন্তু এক নয়। কবিতায় অন্ত্যমিল থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। কিন্তু কবিতায় ছন্দ থাকবেই। কবিতা বলতে এখানে আমরা পদ্য বা ভার্স ফর্মের কথা বোঝাচ্ছি, অন্তর্নিহিত কবিত্বকে নয়। ছন্দের ক্ষেত্রে ফর্মটাই বিচার্য।

ছন্দ মানে একটা চলা আর থামার খেলা। সেই চলা আর থামাতেই তৈরি হয় পূর্ণ চলন। এ যেন পা তোলা আর পা ফেলা। কবিতায় দুটো শব্দে কখনও বা একটু ফাঁক তৈরি হয়, কখনও বা কোথাও বেশি ঝোঁক পড়ে। একটা উদাহরণ দিই।

নিত্য তোমায়/ চিত্ত ভরিয়া

স্মরণ করি

বিশ্ববিহীন/ বিজনে বসিয়া

বরণ করি

তুমি আছ মোর/ জীবনমরণ

হরণ করি

এখানে ‘স্মরণ করি’, ‘বরণ করি’ আর ‘হরণ করি’-র পরে একটু থামছি। থামতেই হবে। ওই ফাঁকটুকু না দিলে পা-তোলা পা-ফেলা ছন্দটা কেটে যাবে। আবার ‘নিত্য’, ‘চিত্ত’, ‘স্মরণ’— এই সব পদের উপর বেশি ঝোঁক পড়ছে। তাতে পঙক্তিটা ছোট ছোট টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এই ছোট ছোট টুকরোগুলোকে বলে পর্ব। ওপরের পঙক্তিগুলোতে প্রথম দুটো পর্ব বড়, তৃতীয়টা ছোট। এই ছোট পর্বকে বলে ভাঙা পর্ব। বড় পর্বের দোলাটুকুর সঙ্গে মেলানোর জন্য ছোট পর্বের শেষে একটু থামতে হয় আমাদের। ওই যে বললাম— ছন্দ মানে চলা আর থামার খেলা।

আবার দেখুন নীচের দুটো পঙক্তি।

মহাভারতের কথা/ অমৃত সমান

কাশীরাম দাস কহে/ শোনে পুণ্যবান।

আগের পঙক্তিগুলো যেভাবে পড়ছিলেন, এই পঙক্তিগুলো সেভাবে পড়া যাবে না। কেননা তাদের চলন আলাদা।

আবার দেখুন, ছিপখান/ তিনদাঁড়

তিনজন/ মাল্লা

চৌপর/ দিনভোর

দেয় দূর/ পাল্লা

এই পঙক্তিগুলো অন্যভাবে চলছে।

এই যে তিনটে উদাহরণ দিলাম, বাংলা সাহিত্যে এই তিনটেই মোটামুটি ছন্দের চলন। প্রথমটার নাম মাত্রাবৃত্ত, দ্বিতীয়টা অক্ষরবৃত্ত, তৃতীয়টা স্বরবৃত্ত।

কীভাবে চিনবেন তিনটে ছন্দ? অনেক দিন আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় ছন্দ শিখিয়েছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আনকোরা পাঠকদের জন্য। সেই লেখাগুলো নিয়ে পরে তাঁর একটি বই বেরোয় ‘কবিতার ক্লাস’ নামে। প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে একটি সহজ নিয়মে ছন্দ শিখিয়েছিলেন তিনি। আমাদের ক্লাসটা যেহেতু ব্যাকরণের ক্লাস নয়, আর আমিও যেহেতু ছান্দসিক নই, তাই ‘কবিতার ক্লাস’কেই আমি অনুসরণ করছি।

অক্ষরবৃত্ত ছন্দে প্রতিটি অক্ষরের ওজন সমান। প্রতিটি অক্ষর একমাত্রা। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে সাধারণ অক্ষর একমাত্রা, যুক্তাক্ষর দু’মাত্রা। শব্দের শুরুতে সে অবশ্য একমাত্রারই ওজন পায়। আর স্বরবৃত্তে প্রতিটি সিলেবেল বা দল একমাত্রা। সিলেবেল মানে একসঙ্গে আমরা যতটা বলতে পারি। যেমন ‘বন্ধন’ শব্দে তিনটি অক্ষর। কিন্তু আমরা বলি বন্-ধন্। তাই সিলেবেল দুটি। এই ‘বন্ধন’ শব্দটি যখন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে থাকবে, তখন সেটি তিনমাত্রা, মাত্রাবৃত্তে চার মাত্রা, আবার স্বরবৃত্তে মাত্র দুই মাত্রা।

পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী—এই সব ছন্দের কথা একটু বলি। এগুলো আসলে ছন্দ নয়, শব্দবন্ধ। পয়ারে আট-ছয় মাত্রা থাকে। সেটা অক্ষরবৃত্তেও গোনা যেতে পারে। মাত্রাবৃত্তেও যেতে পারে। পয়ারেরই পর্বসংখ্যা বেড়ে হয় মহাপয়ার। আবার প্রথম-দ্বিতীয়, চতুর্থ-পঞ্চম, তৃতীয়-ষষ্ঠ পঙক্তিতে একই রকম পর্ব বিভাজন থাকলে ত্রিপদী। গভীরে না গিয়ে খুব সহজে বললাম।

আবার আছে মুক্তছন্দ, গদ্যছন্দ। মুক্তছন্দে দু’তিন রকমের ছন্দ মিলেমিশে থাকে। পাঠকের মনে হয় ছন্দটা তেমন নেই। কিন্তু কোথাও যেন আছে। গদ্যছন্দে ছন্দটা আরও নিগূঢ় ভাবে মিশে থাকে। ‘গদ্যছন্দ’ প্রবন্ধে একটি প্রাকৃত শ্লোকের অনুবাদ করে রবীন্দ্রনাথ এদের তফাত বুঝিযেছেন। একটি অনুবাদ—

‘বৃষ্টিধারা ঝরে গগনে

শীতল পবন বহে সঘনে,

কনক বিজুরি নাচো রে, অশনি গর্জন করে।

নিষ্ঠুর অন্তর মম প্রিয় নাই ঘরে।’

আর একটি অনুবাদ—

‘অবিরল ঝরছে শ্রাবণের ধারা,

বনে বনে সজল হাওয়া বয়ে চলেছে

সোনার বরণ ঝলক দিয়ে নেচে উঠছে বিদ্যুৎ,

বজ্র উঠছে গর্জন করে।

নিষ্ঠুর আমার প্রিয়তম ঘরে এল না।’

প্রথমটি মুক্তছন্দ। দ্বিতীয়টি গদ্যছন্দ।

গদ্যছন্দ আর পদ্যছন্দের তফাত হল—গদ্যছন্দ অর্থপ্রধান আর পদ্যছন্দ ঝোঁকপ্রধান। গদ্যছন্দে আমরা মানের জন্য থামি, পদ্যছন্দে আমরা ঝোঁকের জন্য থামি। পদ্যছন্দে তাই মাঝে মাঝে বিরোধ বাধে অর্থ আর ঝোঁকের মধ্যে। মানে বলে এক জায়গায় থামতে, ঝোঁক বলে অন্য জায়গায় থামতে। রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতা থেকে উদাহরণ দিই। কবিতার নাম ‘সমালোচক’। এর কয়েকটি পঙক্তি—

‘তোমরা যাঁদের বাক্য হয় না

আমার পক্ষে মুখরোচক

তোমরা যদি পুনর্জন্মে

হও পুনর্বার সমালোচক...’

এখানে প্রথম পঙক্তিতে ঝোঁক বলছে ‘যাঁদের’ পরে থামতে, কিন্তু অর্থ বলছে ‘তোমরা’র পরে থামতে। এখানে তাই একটু ব্যালেন্স করে নিতে হয়।

ছন্দ নিয়ে খেলা করারও অনেক অবকাশ আছে। একই কবিতায় বিভিন্ন ভাবে পর্ব ভাগ করে মাত্রার হেরফের ঘটানো যায়। সহজ পাঠের একটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথ এটা ছোটদের শিখিয়েছেন।

কাল ছিল/ ডাল খালি

আজ ফুলে/ যায় ভরে

এটা এক রকম পড়া। আর এক রকম পড়া হল—

কাল ছিল ডাল/ খালি

আজ ফুলে যায়/ ভরে

ছন্দ আসলে ঠিক পড়ার নয়। ছন্দ শোনার। শুনতে শুনতেই ছন্দকে বুঝতে হয়। তবেই ছন্দ নিয়ে খেলা করা যায়।

আবৃত্তি করতে গেলে ছন্দটা অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, না স্বরবৃত্ত, সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ না জানলেও চলে। কিন্তু ছন্দটা কাটছে, না ঠিক থাকছে—সেটা বুঝতেই হবে। ছন্দ কেটে গেলে কবিতা বেতালা গানের মতো লাগবে।

যাক, এত পড়ে, এত অঙ্ক করে কি ছন্দ পেলেন? নাকি কবিতা পড়ার আনন্দটাই মাঠে মারা গেল? এই কথাগুলোই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বই থেকে বিভিন্ন ছন্দে শোনাই।

১) অঙ্কের দাপটে কাব্য নাভিশ্বাস ছাড়ে

আনন্দের লেশ নেই ছন্দের বিচারে।

২) অঙ্কের চোখরাঙানিতে হায়

নাড়ি ছাড়ে কাব্যের

ছন্দ বিচারে কে বা বলো পায়

স্পর্শ আনন্দের?

৩) অঙ্ক কষে কিচ্ছু পেলে?

কাব্য গেল মরে।

আনন্দের কি পরশ মেলে

ছন্দ বিচার করে?

দেখুন তো লাইনগুলো ঠিকঠাক পড়তে পারেন কি না। যদি পারেন, তাহলে বুঝব আবৃত্তি করার মতো ছন্দোজ্ঞান আপনার আছে।

আবৃত্তির ক্লাস নিয়ে কোনও প্রশ্ন আছে আপনার? সরাসরি জেনে নিন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। bratatiblog@gmail.com-

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE