Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আর্থিক সংস্কারে সরকারের সাফল্যের দিকেই এখন তাকিয়ে শেয়ার বাজার

ওঠা-পড়াই জগতের নিয়ম। যা ওঠে তা পড়ে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির এই তত্ত্ব ভীষণ রকম খাটে শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও। বাজার অতি অল্প সময়ে অনেকটাই বেশি উঠেছিল। লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা বাজারের ডগাটা ভেঙেছে গত সপ্তাহে। এতটা ওঠার পরে একটা সংশোধন যে হবে, তা প্রত্যাশিত ছিল। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষা করা হচ্ছিল কী কারণে হয়, সেটা দেখার জন্য। এবং গুটিকতক কারণ পাওয়া মাত্রই সূচক নেমেছে ভাল গতিতে।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৭
Share: Save:

ওঠা-পড়াই জগতের নিয়ম। যা ওঠে তা পড়ে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির এই তত্ত্ব ভীষণ রকম খাটে শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও। বাজার অতি অল্প সময়ে অনেকটাই বেশি উঠেছিল। লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা বাজারের ডগাটা ভেঙেছে গত সপ্তাহে। এতটা ওঠার পরে একটা সংশোধন যে হবে, তা প্রত্যাশিত ছিল। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষা করা হচ্ছিল কী কারণে হয়, সেটা দেখার জন্য। এবং গুটিকতক কারণ পাওয়া মাত্রই সূচক নেমেছে ভাল গতিতে। এ বারের সংশোধনের কারণগুলি এই রকম:

• আশু সুদ কমার আশা ক্ষীণ হওয়া। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং দেশে পণমূল্য বেশ খানিকটা কমে আসায় আশা ছিল এ বার সুদ কমতে পারে। কিন্তু কমেনি। শুধু তাই নয়, সুদ যে অদূর ভবিষ্যতে কমতে পারে, সে সম্পর্কেও কোনও আশার বাণী শোনাননি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধার রঘুরাম রাজন।

• নারায়ণমূর্তি-সহ ইনফোসিস-এর চার জন প্রতিষ্ঠাতা একই সঙ্গে গত সোমবার এই অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ২.৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করায় আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজারে। এর প্রভাবে শুধু ইনফোসিসই নয়, বড় পতন হয় বহু শেয়ারের। সোমবার সেনসেক্স পড়ে ৩৩৮ অঙ্ক। আগের দু’মাসের মধ্যে এটি সব থেকে বড় পতন। একটি কাজের দিনে কোনও সংস্থার প্রতিষ্ঠাতারা ৬৫০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন, এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। এই আতঙ্ক থেকে ইনফোসিস এখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি।

• চিনের অর্থনীতিতে মন্থরতার খবরও বাজারকে দুর্বল করে তোলে। এই খবরে ভারত-সহ বিশ্বের অনেক বাজারকে কম- বেশি পড়তে দেখা যায়।

• সরকারের দেওয়া বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি এবং সেগুলিকে ঘিরে আশার উপর ভর করে বাজার এতটা উপরে উঠেছে। এখন বাজার কাজ দেখতে চায়। যতক্ষণ প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়িত না-হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কারণে অকারণে সংশোধন হবে।

সেনসেক্স ২৮ হাজার ভেঙেছে। ২৭ হাজারও যে এই ধাক্কায় ভাঙবে না তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বাজারে কিন্তু ভাল এবং মন্দ দু’রকমের খবরেরই প্রবাহ আছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেগুলিকে।

১) খুচরো পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার নভেম্বরে নেমে এসেছে ৪.৩৮ শতাংশে যা অক্টোবরে ছিল ৫.৫২ শতাংশ। খবরটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। পাশাপাশি, আর একটা ভাল খবর হল, নভেম্বরে খাদ্যপণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে মাত্র ৩.১৪ শতাংশে। শীতে সব্জি এবং ফলের দাম কমাই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই দুই সূচকের পতন সুদ কমানোর ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নতুন করে ভাবাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

২) আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম আরও নেমেছে। এর প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতির উপর বিশাল। এতে শুধু সরকারই নয়, উপকৃত হচ্ছে পেট্রোপণ্য নির্ভর বেশ কিছু সংস্থা।

৩) একটু একটু করে ডলারের দাম অনেকটাই বেড়ে উঠেছে। শুক্রবার প্রতি ডলারের দাম পৌঁছেছে ৬২.২৯ টাকায়। তেলের দাম কমায় যতটা সুবিধা হতে পারত, তার কিছুটা শুষে নেবে ডলারের এই ঊর্ধ্বগতি।

৪) আশঙ্কাজনক ভাবে অক্টোবরে কমেছে শিল্পোৎপাদন। বাড়া তো দূরের কথা, তা সরাসরি কমেছে ৪.২ শতাংশ, যা গত দু’বছরের মধ্যে সব থেকে খারাপ। সেপ্টেম্বরে তা বেড়েছিল ২.৮ শতাংশ। এই সব পরিসংখ্যান থেকে সন্দেহ জাগছে জাতীয় উৎপাদন অভীষ্ট জায়গায় পৌঁছতে পারবে কি না।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বিরাট কোনও আশা জাগাচ্ছে না। সবাই তাকিয়ে আছে এই পরিস্থিতিতে সরকার কোন কোন আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়িত করতে সফল হয় এবং বাজেট কেমন হয়, তার দিকে। সুদের হার কমা ছাড়া বাজেটের আগে এমন আর কোনও ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই, যার উপরে ভর করে বাজার তেড়েফুঁড়ে উঠতে পারে।

এই কলমে এর আগে আমরা আলোচনা করেছি বাজার অস্বাভাবিক তেতে উঠলে কিছু শেয়ার বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলে নেওয়া ভাল। পরে বাজার পড়লে একই শেয়ার আবার কম দামে কিনে নেওয়া যেতে পারে। যাঁরা এই পরামর্শ কাজে লাগিয়েছেন তাঁরা আজ অবশ্যই খুশি। বাজার গত সপ্তাহে অনেকটাই পড়েছে। আবার সুযোগ এসেছে নতুন করে লগ্নি করার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amitabha guha sarkar share market sensex nifty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE