ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পেতে রান্নার গ্যাসের সব গ্রাহকের জন্য এক ধরনেরই আবেদনপত্র (ইউনিফায়েড ফর্ম) চালু করল তেল সংস্থাগুলি। পাশাপাশি, গ্যাসের সংযোগে নাম পরিবর্তন প্রক্রিয়াও সরল করতে উদ্যোগী হল তারা। এত দিন এ জন্য যে-হলফনামা জমা দিতে হত, এখন আর তা দিতে হবে না। নির্দিষ্ট একটি আবেদনপত্রেই সেই আর্জি জানানো যাবে, যা মিলবে গ্যাসের দোকানে।
ইউপিএ জমানায় আধার নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তুকির টাকা সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমার ব্যবস্থা চালু হয়। কিন্তু অনেকেরই আধার কার্ড তৈরি না-হওয়ায় এখন মোদী সরকার ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও ভর্তুকির টাকা বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৫ থেকে এ রাজ্যেও ওই ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা।
যাঁরা আগের বার গ্যাসের দোকানে ও ব্যাঙ্কে আধার নম্বর নথিভুক্ত করিয়েছেন বা ভর্তুকির টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্টে পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদের অবশ্য নতুন করে এ বার কোনও আবেদনপত্র জমা দিতে হবে না। কিন্তু অন্যদের তা করতে হবে। আর তাতেই কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আবেদন করার নিয়ম সহজ করল তেল সংস্থাগুলি।
যেমন, যাঁরা আধার নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তুকির টাকা পেতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য দু’টি আবেদনপত্র রয়েছে, ফর্ম-১ ও ফর্ম-২। সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে তাঁর ব্যাঙ্কে (যেখানে অ্যাকাউন্ট রয়েছে) ফর্ম-১ ও গ্যাসের দোকানে (ডিস্ট্রিবিউটর) ফর্ম-২ জমা দিতে হচ্ছে। যাঁদের আধার নম্বর নেই, শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের হয় ফর্ম-৩ ব্যাঙ্কে বা ফর্ম-৪ গ্যাসের দোকানে জমা দিতে হচ্ছে। এক এক রকমের ফর্মের জন্যই অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। তা এড়াতে তেল সংস্থাগুলি এ বার সকলের জন্য এক ধরনেরই ফর্ম বিলি করতে শুরু করেছে। তবে পুরনো ব্যবস্থাও বহাল থাকছে, যাতে গ্রাহককে ভুগতে না-হয়।
ইন্ডেন-এর এক কর্তা বৃহস্পতিবার জানান, নতুন আবেদনপত্রে দু’ধরনের গ্রাহকের (যাঁর আধার নম্বর রয়েছে ও যাঁর নেই) জন্যই তথ্য দেওয়ার নির্দিষ্ট জায়গা আছে। যাঁর ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য, তিনি সেই অংশটি পূরণ করবেন। যিনি আধার নম্বরের ভিত্তিতে প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাবেন, তিনি ওই ফর্মের দু’টি কপি সংশ্লিষ্ট তথ্য-সহ ব্যাঙ্ক ও গ্যাসের দোকানে জমা দেবেন। যাঁর আধার নেই, তিনি একটি ফর্ম-ই তথ্য-সহ পূরণ করে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে নয়তো গ্যাসের দোকানে জমা দেবেন। এটা সব ক’টি তেল সংস্থার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তা হলে যাঁরা পুরনো ফর্ম নিয়েছেন বা জমা দিয়েছেন তাঁদের কী হবে?
তেল সংস্থাগুলি স্পষ্টই জানাচ্ছে, পুরনো ফর্ম-গুলিও চালু থাকবে। যাঁরা তা জমা দিয়েছেন তাঁদের নতুন করে ফর্ম জমা দিতে হবে না। যাঁরা ফর্ম নিলেও এখনও জমা দেননি, তাঁরা চাইলে সেগুলিও জমা দিতে পারেন। এ ছাড়া আগের মতো ওয়েবসাইটেও আবেদন জানানো যাবে।
ব্যাঙ্কে ভর্তুকি জমা চালু হলে আরও কিছু গ্রাহক সমস্যার মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা। যেমন অনেক ক্ষেত্রে কোনও গ্রাহকের মৃত্যু হলেও তাঁর পরিবার গ্যাসের সংযোগ অন্য কারও নামে বদল করেনি। মৃত গ্রাহকের নামেই এখনও সিলিন্ডার বিলি হচ্ছে। কিন্তু টাকা ব্যাঙ্কে জমা হলে ভর্তুকির সিলিন্ডার পাবে না সেই পরিবার। গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, নাম বদল নিয়ে গ্যাসের দোকানে হয়রানির আশঙ্কাতেই তাঁরা তা করাননি। আগে নিয়ম ছিল, যাঁর নামে এই সংযোগ পরিবর্তন করা হবে, তাঁকে তথ্য-সহ একটি হলফনামা দিতে হবে। এবং সে জন্য একাধিক ‘ফর্ম্যাট’ ছিল। যাঁর ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য, তাঁকে সেই অনুসারে হলফনামা দিতে হত। এ জন্য গ্রাহককে একটা খরচও বইতে হত।
তেল সংস্থাগুলি জানিয়েছে, নাম বদলাতে এখন আর হলফনামা দিতে হবে না নতুন গ্রাহককে। ফলে সেই বাবদ খরচও হবে না। এ ক্ষেত্রেও সকলের জন্যই একটি আবেদনপত্র চালু হয়েছে ক’মাস আগে। সংযোগ বদলের বিভিন্ন কারণ সেখানে বলা রয়েছে। যাঁর ক্ষেত্রে যেটি প্রযোজ্য, সেটি উল্লেখ করলেই হবে। যদিও গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাসের দোকানে এখনও হলফনামা দেওয়ার কথাই বলা হচ্ছে। তেল সংস্থাগুলি অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই নির্দেশ সব ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে পাঠিয়েছে ও তাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতাও বাড়ানো হচ্ছে।
তেল সংস্থা সূত্রে খবর, এ দিন পর্যন্ত রাজ্যে ৯৪.১৫ লক্ষ রান্নার গ্যাস গ্রাহকের প্রায় ১৪% সরাসরি ব্যাঙ্কে ভর্তুকির টাকা পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের নাম তেল সংস্থা ও ব্যাঙ্ক, উভয়ের কাছেই নথিভুক্ত হয়েছে। তেল সংস্থাগুলির অবশ্য দাবি, নতুন নাম নথিভুক্তি দৈনিক ১.৩% হারে বাড়ছে। তা ২ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তাদের। আশা, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সব গ্রাহককেই এই প্রকল্পের আওতায় আনা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy