Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
কাজে লাগা নিয়ে সন্দেহ শিল্পেরও

জমি-ব্যাঙ্ক আদৌ আছে কি, প্রশ্ন বিজেপির

শুধু জমি-ব্যাঙ্কের গল্প শুনিয়ে লগ্নি টানা যাবে কি না, সে প্রশ্ন শুরুতেই তুলেছে শিল্প-মহল। এ বার বিরোধী বিজেপি প্রশ্ন তুলল সেই জমি-ব্যাঙ্কের অস্তিত্ব নিয়েই। শুক্রবার বণিকসভা ফিকি-র সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জমি কিনতে যাবেন না। শিল্পপতিরা তা পারবেন না। আমাদের কাছে আসুন। জমি-ব্যাঙ্ক থেকে জমি দেব।” সেই প্রসঙ্গে শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের প্রশ্ন, “যে জমি-ব্যাঙ্কের কথা মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তার সম্পর্কে তথ্য কোথায়?”

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৪
Share: Save:

শুধু জমি-ব্যাঙ্কের গল্প শুনিয়ে লগ্নি টানা যাবে কি না, সে প্রশ্ন শুরুতেই তুলেছে শিল্প-মহল। এ বার বিরোধী বিজেপি প্রশ্ন তুলল সেই জমি-ব্যাঙ্কের অস্তিত্ব নিয়েই।

শুক্রবার বণিকসভা ফিকি-র সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জমি কিনতে যাবেন না। শিল্পপতিরা তা পারবেন না। আমাদের কাছে আসুন। জমি-ব্যাঙ্ক থেকে জমি দেব।” সেই প্রসঙ্গে শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের প্রশ্ন, “যে জমি-ব্যাঙ্কের কথা মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, তার সম্পর্কে তথ্য কোথায়?” তাঁর অভিযোগ, “বড় শিল্পের জন্য জমি কতটা আছে, তা কেউ জানে না। শিল্পের জন্য পরিকাঠামোও নেই। ফলে রাজ্যে লগ্নির আসার সব পথ বন্ধ।”

শিল্পপতি তথা বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার দাবি, সত্যিই জমি-ব্যাঙ্ক তৈরি থাকলে, তার তথ্য প্রকাশ করুন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত মানুষ। এ সব তথ্য না-ই জানতে পারেন। কিন্তু শিল্পমন্ত্রী ও আমলাদের তো তা জানার কথা। তাঁরাই বলুন।” অবশ্য জমি নিয়ে বিজেপি যখন এমন আক্রমণ শাণাচ্ছে, বামেরা তখন চুপ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল।

বিরোধীদের মতো জমি-ব্যাঙ্কের অস্তিস্ব নিয়ে সন্দিহান শিল্পমহলও। এক শিল্পকর্তার দাবি, যে সব শিল্পতালুকে জমি নেওয়ার কথা রাজ্য বলছে, সেখানে এক লপ্তে বড় জমি নেই। যা আছে, তাতে ছোট ও মাঝারি শিল্প হয়তো হতে পারে, কিন্তু বড় শিল্পের জন্য উপযুক্ত জমি তালুকে কোথায়? এমনকী শিল্পোন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটেও লেখা রয়েছে যে, খড়্গপুর, বড়জোড়া ও হলদিয়া শিল্পতালুকে এক লপ্তে বড় জমি নেই।

উল্লেখ্য, বড় শিল্পের জন্য একলপ্তে বেশি জমি সরাসরি কেনা যে কতখানি অসুবিধার, বহু দিন ধরেই তা বলেছে শিল্পমহল। মুখ্যমন্ত্রী যে শেষ পর্যন্ত সেই সমস্যা মেনেছেন, স্বাভাবিক ভাবেই তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এ বিষয়ে শুক্রবারই তাঁদের বক্তব্য ছিল, শুধু জমি-ব্যাঙ্কের কুমিরছানা দেখিয়ে লাভ নেই। তার সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য কোথায়? প্রশ্ন ছিল, সত্যিই কি সেখানে এক লপ্তে বেশি জমি মিলবে? যদি তা থাকেও, সেখানে পরিকাঠামো কেমন? রাজ্যের এক শিল্পকর্তা বলেছিলেন, তথপ্রযুক্তি বা ছোট-মাঝারি শিল্পে হয়তো তুলনায় কম জমি লাগে। কিন্তু বড় শিল্পের জন্য জমি আছে কিনা, সরকার তা জানায়নি। আর বড় শিল্পই যদি না হয়, তা হলে ছোট-মাঝারি শিল্প বাঁচবে কী ভাবে? আর এক শিল্পকর্তার প্রশ্ন ছিল, “ধরুন, জমি-ব্যাঙ্কে দেখা গেল ঝাড়গ্রামে অনেক জমি রয়েছে। কিন্তু সেখানে শিল্প গড়ার পরিকাঠামো কোথায়? সেখানে কি সত্যিই টাকা ঢালতে আগ্রহী হবে কোনও সংস্থা?” জমি-ব্যাঙ্ক ঘিরে এই সমস্ত প্রশ্ন দিনভর ঘুরপাক খেয়েছে শনিবারও।

শিল্পমহলের মতে, সত্যিকারের কাজে লাগার মতো জমি-ব্যাঙ্ক তৈরির জন্য দু’টি রাস্তা খোলা ছিল (১) বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাছে যে সমস্ত জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে, তার তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা। (২) রাজ্যের সমস্ত বন্ধ কারখানার জমির হিসাব বুঝে নেওয়া।

কিন্তু এই সংক্রান্ত সমীক্ষার কাজ শেষ হয়নি। রাজ্যের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৬০ হাজার একর জমি তাদের হাতে আছে। কিন্তু ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে খবর, এই জমি সে ভাবে বড় শিল্পের কাজে লাগা কঠিন। কারণ, এখান থেকে ৪০-৫০ একরের বেশি জমি এক লপ্তে পাওয়া কঠিন।

সেই কারণেই শিল্পমহল মনে করছে, জমি-ব্যাঙ্ক সম্পর্কে বিশদ এবং স্পষ্ট তথ্য তুলে না-ধরলে, শুধু শুক্নো প্রতিশ্রুতিতে কোনও লাভ হবে না। বণিকসভার এক কর্তার কথায়, “শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে লাভ নেই। লগ্নিতে আগ্রহী কোনও শিল্পপতি পরিকাঠামো সমেত তৈরি জমি দেখতে চাইলে, তা দেখাতে পারবে শিল্প দফতর? বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) নিয়ে নিজেদের অবস্থান না-বদলে কী ভাবে ইনফোসিসের লগ্নি টানবে তারা?”

সেজ নিয়ে রাজ্যের অনড় অবস্থানে ইনফোসিসের লগ্নি যে হাতছাড়া হতে পারে, সেই আশঙ্কা শুক্রবারও প্রকাশ করেছিল শিল্পমহল। এ দিনও তাঁদের প্রশ্ন, রাজ্য যদি শিল্পের জন্য জমি নেওয়া থেকে পুরোপুরি হাত গুটিয়ে থাকে বা সেজ নিয়ে অবস্থান না-বদলায়, তা হলে এ রাজ্যে টাকা ঢালতে কেউ উৎসাহিত হবেন কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bjp industries bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE