মারুতির কমপ্যাক্ট এসইউভি ভিতারা ব্রেজা। অটো এক্সপো-য় গাড়িটির প্রদর্শনে সংস্থা-কর্তারা। ছবি: পিটিআই
বেশ কিছু দিন ধরে দূষণ বিতর্কে গরম নয়াদিল্লির হাওয়া। এ বার সেই দিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে, গ্রেটার নয়ডার গাড়ি প্রদর্শনীতে দূষণ এড়ানোর দাওয়াই বাতলাতে দেখা গেল শিল্প ও সরকার, উভয় পক্ষকেই।
সম্প্রতি দূষণ ঠেকাতে দিল্লিতে ২,০০০ সিসি বা তার চেয়ে বড় ইঞ্জিনের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সাময়িক ভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে গ্রিন বেঞ্চ। দিল্লি সরকারও পরীক্ষামূলক ভাবে ক’দিনের জন্য জোড়-বিজোড় নম্বরের গাড়ি চালানোর দিন আলাদা করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অটো এক্সপোর মঞ্চে এক দিকে দেখা গেল বিভিন্ন সংস্থার হাইব্রিড ও পুরোদস্তুর বৈদ্যুতিন গাড়ি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিজেল ও বিভিন্ন ধরনের জৈবজ্বালানির মিশেলে চালিত বিশেষ ধরনের একটি হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিন বাস। দূষণ আটকানো এবং সেই সঙ্গে পেট্রোল, ডিজেলের মতো প্রথাগত জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমানোই যেগুলির লক্ষ্য। অন্য দিকে, সেখানেই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ী জানালেন, ওই একই উদ্দেশ্যে পুরনো গাড়ি বাতিলের জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করেছেন তিনি। এ মাসের শেষেই যা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কাছে পেশ করবেন।
এ দিন অটো এক্সপো-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে উপস্থিত ছিলেন গডকড়ী ও ভারী শিল্পমন্ত্রী অনন্ত গীতে। সেখানেই পুরনো গাড়ি বাতিলের উদ্যোগের কথা জানান গডকড়ী।
এর আগে তিনি পুরনো গাড়ি বাতিল করলে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, আসন্ন বাজেটে ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিল করে নতুন গাড়ি কিনলে শুল্ক ছাড়ের মতো আকর্ষণীয় সুযোগ দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। তাই বাজেটের আগেই মন্ত্রিসভার সামনে এই প্রস্তাব পেশ করতে চান।
গডকড়ীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে গাড়ি শিল্প। তবে এই শিল্পের সংগঠন সিয়াম-এর সিনিয়র ডিরেক্টর সুগত সেনের দাবি, এই একই প্রস্তাব নিয়ে বহু দিন ধরেই দরবার করে আসছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘এটা হলে শুধু যে বাতাস শুদ্ধ হবে তা-ই নয়, মান বাড়বে জ্বালানি ব্যবহারের। বাড়বে সুরক্ষা।’’ যদিও এ ধরনের গাড়ি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না বলে সেগুলির দায় গাড়ি শিল্পের ঘাড়ে এসে পড়ে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সুগতবাবু। তাঁর ও টাটা মোটরসের অন্যতম কর্তা এস এন বর্মনের মতে, কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দিলে গাড়ি শিল্প পুনরুজ্জীবনের পথে এক ধাপ এগোবে।
শিল্প ও সরকারের মৃদু তাল ঠোকাঠুকিও হয়েছে এ দিন। ফের গডকড়ী ‘বিএস৬’ মাপকাঠি ২০২০ সালে চালু হবে বলে জানান। তবে গাড়ি শিল্পের দাবি, তার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো এখনও তৈরি নয়। যথেষ্ট নয় সে রকম পেট্রোল, ডিজেলও। তাই ওই মাপকাঠির জন্য পাঁচ বছর সময় বেশ অল্প। গডকড়ীর অবশ্য পরামর্শ, আগে তেমন গাড়ি তৈরি হোক। তেল জোগানোর দায়িত্ব সরকারের।
দূষণ আটকাতে কেন্দ্রের উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন ধরনের জ্বালানি ও প্রযুক্তি নিয়ে তৈরি থাকতে চাইছে গাড়ি সংস্থাগুলিও। যদিও মূলত দাম ও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে হাইব্রিড ও বৈদ্যুতিন যাত্রীগাড়ি ভারতে তেমন ভাবে সাড়া পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য দাবি, এ ধরনের বাস তৈরির আগ্রহ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই টাটা মোটরস, ভলভো এ ধরনের বাস তৈরি করেছে। এ দিন স্ক্যানিয়া, জেবিএম গোষ্ঠী দু’টি বাস দেখিয়েওছে। স্ক্যানিয়া-র হাইব্রিড বাসটি ডিজেলের পাশাপাশি বায়োগ্যাস, বায়োডিজেল বা ইথানলের মতো জৈব জ্বালানিতে চলে। বেঙ্গালুরুতে তা তৈরি হবে। নাগপুরে নিকাশি থেকে তৈরি হবে বায়োগ্যাস। তেমনই কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রক ও আইআইটি-দিল্লির সঙ্গে যৌথ ভাবে হাইড্রোজেন বাস দেখিয়েছে মহীন্দ্রা। এ নিয়ে নিয়মকানুন চালু হলে তা তৈরি করার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy