Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেট্রোকেম পূর্ণেন্দুর হাতেই তুলে দিচ্ছে রাজ্য

শেষ পর্যন্ত পুর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের হাতেই রাজকন্যা-সহ রাজ্যপাট তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল)-এ রাজ্যের শেয়ার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে বিক্রি করে তাদের হাতেই সংস্থাটির পূর্ণ মালিকানা তুলে দিতে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের চুক্তি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৬
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত পুর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের হাতেই রাজকন্যা-সহ রাজ্যপাট তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস (এইচপিএল)-এ রাজ্যের শেয়ার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে বিক্রি করে তাদের হাতেই সংস্থাটির পূর্ণ মালিকানা তুলে দিতে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের চুক্তি হয়েছে।

তবে রাজ্যের শেয়ার কেনার টাকা পুর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় কী ভাবে জোগাড় করবেন, সেই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নিজের হাতে সংস্থার রাশ নিতে টাকা মেটাবেন কিস্তিতে। এবং শেয়ার পিছু যে-দাম তিনি দেবেন, তা গত বছর ইন্ডিয়ান অয়েলের ওই শেয়ার কিনতে চেয়ে পেশ করা দরের থেকে সম্ভবত কমই থাকবে। অবশ্য শিল্পমহল মনে করছে, সেই টাকার প্রথম কিস্তি রাজ্যের হাতে না-আসা পর্যন্ত গত দু’মাসেরও বেশি বন্ধ থাকা এইচপিএল-এর দরজা কবে খুলবে তা নিশ্চিত নয়। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে এ নিয়ে শুক্রবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

এইচপিএল জটের দ্রুত সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিল্প-কর্তারাও। যেমন, বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্তের বক্তব্য, যে- ভাবেই হোক, দ্রুত সংস্থাটির মালিকানা সমস্যার নিষ্পত্তি প্রয়োজন। তিনি বলেন, “এত বড় সংস্থা দীর্ঘ দিন বন্ধ পড়ে থাকা রাজ্যের পক্ষে আদৌ ভাল নয়। যাঁরই হাতে ক্ষমতা যাক, দ্রুত কারখানা না-খুললে সার্বিক ক্ষতি রাজ্যেরই। মালিকানা জট কাটলে তবেই ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়ার পথ সহজ হবে।”

প্রসঙ্গত, ন্যাপথা ক্র্যাকার প্লান্টে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’র কারণে জুলাইয়ে বন্ধ হয়ে যায় এইচ পি এল। সঙ্গে কার্যকরী মূলধনের চরম সঙ্কট তো রয়েছেই। এর জেরে ইতিমধ্যেই আতান্তরে পড়েছে রাজ্যের প্লাস্টিক শিল্প। কারণ পেট্রোকেমে তৈরি কাঁচামাল ব্যবহার করে বালতি থেকে শুরু করে কলমের রিফিল, বহু জিনিস তৈরি করে তারা। পেট্রোকেমের কাছ থেকে কাঁচামাল না- পেয়ে ইতিমধ্যে শুধু এ রাজ্যেই বন্ধ হয়েছে অন্তত ২০০টি এই ধরনের কারখানা।

উল্লেখ্য, রাজ্য এইচপিএল-এর ৬৭.৫ কোটি শেয়ার নিলামে তুলেছিল গত বছরেই। চ্যার্টাজি গোষ্ঠীর দাবি ছিল, এর মধ্যে ১৫.৫ কোটি শেয়ারের মালিকানা তাদেরই। রাজ্যের সঙ্গে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর আইনি লড়াইয়ের অন্যতম কারণ ছিল এটাই।

ওই বিতর্কিত অংশটি বাদ দিয়ে ইন্ডিয়ান অয়েলের দেওয়া দরে (প্রতিটি শেয়ার ২৫.১০ টাকা) বাদবাকি ৫২ কোটি শেয়ার বেচলে দাম পড়ার কথা ছিল ১৩০৫.২০ কোটি টাকা। যদিও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী তার চেয়ে কম দাম দেবে বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত।

এ রাজ্যের শিল্পায়নে অন্য -তম শো-পিস’ এই সংস্থাটির মালিকানা-জট প্রায় দেড় দশকেরও বেশি পুরনো। বারে বারেই আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।

গত বছরের মে মাসে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করার কথা জানিয়েছিল রাজ্য। সম্ভাব্য ক্রেতার তালিকায় গেইল, ইন্ডিয়ান অয়েল, ওএনজিসি-র পাশাপাশি রিলায়্যান্স, কেয়ার্ন ও এসার ছিল। গত অক্টোবরে নিলামের দিন রিলায়্যান্স গোষ্ঠী সরে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত দরপত্র জমা দেয় শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান অয়েল। কিন্তু তারপর বছর ঘুরলেও তারা শেয়ার হাতে পায়নি। নতুন করে আইনি লড়াইয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রক্রিয়াটি নিয়েই প্রশ্ন তোলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। কারণ, রাজ্য সব সময়ে ৬৭.৫০ কোটি শেয়ার বিক্রির কথা বলে এলেও তার মধ্যে ছিল বিতর্কিত ওই ১৫.৫০ কোটি শেয়ার, যার দাবিদার পূর্ণেন্দুবাবু।

এই পরিস্থিতিতে প্রায় ‘মৃত্যুশয্যা’য় চলে যাওয়া এই সংস্থাকে বাঁচাতে চলতি বছরের জুন মাস থেকেই পূর্ণেন্দুবাবুর সঙ্গে রফার পথে এগোয় রাজ্য। তখনই তাঁকে কিছু বাড়তি আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা জানায় তারা। মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, নিলামে যে ২৫.১০ টাকা দরে ইন্ডিয়ান অয়েল পেট্রোকেমের সরকারি শেয়ার কিনতে চেয়েছিল, ওই একই দামে তা বিক্রি করা হবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীকে। তবে এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি নিলামের বৈধতা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলে ইন্ডিয়ান অয়েল। তাদের অভিযোগ ছিল, নিলামে আর্থিক সুবিধার উল্লেখ থাকলে, শেয়ারের মূল্যায়ন অন্য রকম হত। বস্তুত, শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার পূর্ণেন্দুবাবু ও ইন্ডিয়ান অয়েলের কাছে দু’রকম মাপকাঠি রেখেছে বলে অভিযোগ ছিল আইওসি-র।

অবশেষে রাজ্য সরকার আইনি জট কাটিয়ে পেট্রোকেম থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে সংস্থার হাল ফেরে কি না, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে শিল্পমহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

haldia petrochemicals purnendu chattopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE