তাঁর উপস্থিতির আশ্বাসেই বণিকসভা সিআইআই তিন বছর পরে তাদের জাতীয় পর্ষদের বৈঠকের জন্য কলকাতাকে বেছে নিয়েছিল এ বছরের গোড়ায়। কিন্তু সেদিন সুচিত্রা সেনের শেষকৃত্যে শ্মশানে থাকায় বণিকসভার বৈঠকে যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে কেউ মুখ না-খুললেও জনান্তিকে শিল্পমহলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছিল, কিছুক্ষণের জন্য হলেও বৈঠকে আসতে পারতেন না কি মুখ্যমন্ত্রী। আগামী মাসের গোড়ায় আর এক বণিকসভা ফিকি তাদের জাতীয় পর্ষদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। মিলেছে সম্মতিও। সেখানে শেষ পর্যন্ত তিনি উপস্থিত থাকলে সেটিই হবে কোনও বণিকসভায় তাঁর প্রথম পা।
আগামী ৭ নভেম্বর কলকাতায় বসবে ফিকি-র জাতীয় পর্ষদের বৈঠক। বণিকসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীকে সে জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁর দফতর থেকে সরকারি অনুমোদনও মিলেছে। গত শনিবার শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের ডাকা বিজয়া সম্মিলনীতেও মুখ্যমন্ত্রীকে ঘরোয়া ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ফিকি-র আসন্ন ওই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থ বিড়লা, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরি, ভাইস প্রেসিডেন্ট হর্ষ নেওটিয়া, পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান গৌরব স্বরূপ-সহ বহু শিল্প-কর্তারই উপস্থিত থাকার কথা। তবে কারা শেষ পর্যন্ত আসবেন তা চূড়ান্ত হতে এ মাসের শেষ দিক হয়ে যাবে বলে বণিকসভা সূত্রের খবর।
সাধারণত বছরে বেশ কয়েক বার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই সব বৈঠক বসে। সিআইআই-এর মতোই ফিকি-র জাতীয় পর্ষদের বৈঠকেও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি একটি রেওয়াজ। পর্ষদের বৈঠকে সার্বিক ভাবে শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেই রাজ্যের শিল্পনীতি বা ভাবনা বণিকসভার কাছে তুলে ধরার সুযোগ পান। রীতি মেনে গত বছরেও কলকাতার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ফিকি। কিন্তু সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় থাকবেন না বলে তাঁর দফতর বণিকসভাটিকে আগাম জানিয়ে দেয়। পর্ষদের বৈঠকের পরে অমিত মিত্রর সঙ্গে দেখা করেন ফিকি কর্তারা। উল্লেখ্য, রাজনীতিতে আসার আগে ফিকিরই সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন অমিতবাবু। আসন্ন বৈঠকে তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির আশ্বাস পেয়েই সিআইআই-এর জাতীয় পর্ষদের বৈঠক কলকাতায় বসেছিল গত ১৭ জানুয়ারি। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় সিআইআই-এর মানচিত্রে তার আগের তিন বছরে ঠাঁই পায়নি কলকাতা। কিন্তু সে দিন সকালেই চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। রাজ্যের উদ্যোগে তাঁর শেষকৃত্যে আগাগোড়া হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে রাজনৈতিক সভার মতোই শিল্পমন্ত্রী অমিতবাবুর মোবাইল ফোনে শিল্প-কর্তাদের রাজ্যে লগ্নির আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। এবং সিআইআই-এর কাছে বিশেষ সম্মেলন করারও আর্জি জানান তিনি। সভায় তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। সরকারি ভাবে ও প্রকাশ্যে অবশ্য শিল্প-কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন আচরণে কোনও ক্ষোভ জানাননি। বরং কেউ কেউ বলেছিলেন, শোকের পরিবেশের মধ্যেও শিল্পমহলের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
তবে শিল্পমহলের একাংশের বক্তব্য ছিল, সুচিত্রা সেনের মৃত্যু ঘিরে আবেগ অবশ্যই থাকবে। বাঙালি সমাজের কাছে এটা কোনও ছোট বিষয় নয়। কিন্তু একই সঙ্গে জাতীয় স্তরের বণিকসভার জাতীয় পর্ষদের সামনে নিজের রাজ্যকে তুলে ধরা, রাজ্যের শিল্প পরিকল্পনার আভাস দেওয়ার সুযোগ সাধারণত কোনও মুখ্যমন্ত্রীই ছাড়েন না। সে দিনও এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনও এক সময়ে কিছুক্ষণের জন্যও ওই সভায় এলে অন্য একটা বার্তা যেত বিনিয়োগকারীদের কাছে। বিশেষ করে যে-রাজ্যে শিল্পের খরা, সেখানে তা জরুরি ছিল বলে মত অনেকেরই। সে ক্ষেত্রে সেটিই হত কোনও বণিকসভায় তাঁর প্রথম উপস্থিতি।
বিশেষ করে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পরবর্তী অধ্যায়ে রাজ্যের স্বার্থে তা প্রয়োজন ছিল বলে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের ধারণা। শিল্প বা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী সভায় থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি বরাবরই আলাদা অর্থ বহন করে। এবং তাঁদের ক্ষোভ, মোবাইল ফোনে রাজনৈতিক সভায় বার্তা দেওয়া আর শিল্প-সভায় বার্তা দেওয়া এক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy