Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধির হার আড়াই বছরে সর্বোচ্চ

অর্থনীতির সামনের দিন আরও উজ্জ্বল হওয়ার প্রত্যাশা বাড়িয়ে গত আড়াই বছরের সব থেকে উপরে পৌঁছে গেল বৃদ্ধির হার। এপ্রিল থেকে জুন চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে তা দাঁড়াল ৫.৭%। গত বছরের এই একই সময়ে এই হার ছিল ৪.৭%। এমনকী আগের তিন মাসেও (জানুয়ারি-মার্চ) বৃদ্ধি ছিল ৪.৬ শতাংশের তলানিতে। সেখান থেকে এক লাফে এই উচ্চতায় উঠে আসা কিছুটা প্রত্যাশা ছাপানোই। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতরের হিসাব অনুযায়ী, আলোচ্য ত্রৈমাসিকে কল-কারখানায় উৎপাদন বেড়েছে ৩.৫%। যেখানে আগের বছর এই একই সময়ে তা ১.২% কমেছিল। সঙ্কোচন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভাল ফল করেছে খনন শিল্পও (২.১%)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

অর্থনীতির সামনের দিন আরও উজ্জ্বল হওয়ার প্রত্যাশা বাড়িয়ে গত আড়াই বছরের সব থেকে উপরে পৌঁছে গেল বৃদ্ধির হার। এপ্রিল থেকে জুন চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে তা দাঁড়াল ৫.৭%।

গত বছরের এই একই সময়ে এই হার ছিল ৪.৭%। এমনকী আগের তিন মাসেও (জানুয়ারি-মার্চ) বৃদ্ধি ছিল ৪.৬ শতাংশের তলানিতে। সেখান থেকে এক লাফে এই উচ্চতায় উঠে আসা কিছুটা প্রত্যাশা ছাপানোই। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতরের হিসাব অনুযায়ী, আলোচ্য ত্রৈমাসিকে কল-কারখানায় উৎপাদন বেড়েছে ৩.৫%। যেখানে আগের বছর এই একই সময়ে তা ১.২% কমেছিল। সঙ্কোচন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভাল ফল করেছে খনন শিল্পও (২.১%)। রীতিমতো চোখ ধাঁধানো হারে বেড়েছে আর্থিক পরিষেবা (১০.৪%), বিদ্যুৎ-গ্যাস-জল সরবরাহ (১০.২%) ক্ষেত্র এবং নির্মাণ শিল্প (৪.৮%)। সেই অর্থে বরং কিছুটা হতাশ করেছে কৃষি। শ্লথ হয়েছে তার বৃদ্ধির গতি (৩.৮%)। যদিও অনেকের মতে, বর্ষা ততটা নিরাশ না-করায় আগামী দিনে মুখ তুলবে কৃষিও।

প্রত্যাশিত ভাবেই অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করাকে মোদী- সরকারের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘ভাল দিন আসছে।’ বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরা তারই প্রথম ইঙ্গিত। খোদ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই দেশের অর্থনীতিকে কঠিন এবং সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে। তাঁর দাবি, আগামী দিনেও ছুটতে থাকবে সংস্কারের রথ। স্বাগত জানানো হবে বিদেশি লগ্নিকে। ফলে ভবিষ্যতে অর্থনীতির ছবি আরও উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা।

আগামী মঙ্গলবার, মোদী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। আর তার জন্য শনিবার থেকেই শুরু হচ্ছে এই সময়ের সাফল্য তুলে ধরতে দামামা বাজানোর পর্ব। অনেকেই মনে করছেন, তা করার জন্য এই বৃদ্ধির হার অস্ত্র তুলে দেবে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলির হাতে। যেমন, অর্থ মন্ত্রক আজই জানিয়েছে, কারখানায় উৎপাদন এবং রফতানির মতো ক্ষেত্রে উন্নতি চোখে পড়েছে। বছরের বাকি সময়ে অর্থনীতির ছবি আরও উজ্জ্বল হবে।

অনেকে অবশ্য এও বলছেন যে, মোদী ক্ষমতায় এসেছেনই ২৬ মে। ফলে এই কৃতিত্ব তাঁর একার নয়। বরং চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি কমা ইত্যাদির হাত ধরে ইউপিএ জমানার শেষ থেকেই চাকা ঘুরতে শুরু করেছিল অর্থনীতির। আলোচ্য সময়ে সেই গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে নতুন সরকারকে ঘিরে তৈরি হওয়া প্রত্যাশার আবহ অর্থনীতির উপর সদর্থক প্রভাব ফেলেছে বলে মত অনেকেরই।

প্রত্যাশা ছাপিয়ে বৃদ্ধির হার এই উচ্চতায় পৌঁছনোর পিছনে মোদীর ভূমিকা কতখানি?

এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে একাধিক তত্ত্ব। যেমন, অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে বলে আশা তৈরি হয়েছিল। সেই আশায় ভর করে আগেই চড়তে শুরু করেছিল শেয়ার সূচক। তার ভাল প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল অর্থনীতির অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেও। মোদী জমানায় অর্থনীতির হাল ফিরবে, লগ্নির পরিবেশের উন্নতি হবে, এই আশা বিশেষত কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, অর্থনীতি চাঙ্গা, বাজারে চাহিদা আছে, এমন ধারণা পোক্ত হলে তবেই কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়ে।

আর একটি যুক্তি হল, এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একে ঘিরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। নির্বাচন আয়োজন করতে শুধু কেন্দ্রীয় সরকারই ৭,০০০ কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। ফলে হঠাৎ করে এই সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিতে বাড়তি টাকা এসে পড়াও প্রভাব ফেলেছে এ বারের পরিসংখ্যানে। কারণ, ওই টাকা আসায় বাজারে কেনাকাটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদনও। তাই সাবধানীরা মনে করছেন, অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে, তা নিশ্চিত করে বলার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা ভাল।

শিল্পমহল অবশ্য এই পরিসংখ্যানে বেজায় খুশি। তারা মনে করছে, বিদেশি ও দেশি লগ্নিকারীরা ভারতীয় অর্থনীতিতে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। বৃদ্ধির এই হার সেই আস্থা ফিরিয়ে আনবে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম-এর প্রেসিডেন্ট রাণা কপূরের বক্তব্য, “এই ফল আশাতীত। এখান থেকে আগামী দিনে আরও ভাল হবে। এই অর্থবর্ষেই বৃদ্ধি ৬% ছাড়াতে পারে।” আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কম থাকার ফলেও অর্থনীতির সুবিধা হয়েছে বলে তাঁর মত।

সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত দু’বছর ধরে বৃদ্ধি ৫ শতাংশের নীচে থাকার পর এক ধাক্কায় তা ৫.৭ শতাংশে পৌঁছনো সত্যিই বলার মতো। সবথেকে উৎসাহজনক, কারখানা ও খনির উৎপাদন বৃদ্ধি।” তাঁর বক্তব্য, অর্থনীতিকে পুরোপুরি ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। ফিকি প্রেসিডন্ট সিদ্ধার্থ বিড়লার কথায়, প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া’ স্লোগান আগামী দিনে ভারতকে উৎপাদন শিল্পে আরও উপরের সারিতে নিয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE