অনেকখানি নেমে আসা মূল্যবৃদ্ধির হার স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ সেই জিইয়েই রাখল শিল্পোৎপাদন। তা সরাসরি কমে যাওয়ায় আরও জোরালো হল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে সুদ বৃদ্ধির দাবি।
শুক্রবার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত নভেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ৪.৩৮%। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি মাপার নয়া হিসাব শুরুর পর তা এতটা নীচে নামেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও শুক্রবার স্বস্তিতে থাকতে পারল না কেউই। কারণ এ দিনই জানা গেল অক্টোবরে দেশের শিল্পোৎপাদন সরাসরি কমেছে ৪.২%। তিন বছরের মধ্যে যা সব থেকে খারাপ। বিশেষত, অর্থনীতিতে ভাল কিছু হবে ভেবে যখন আশার প্রহর গুনছে শিল্পমহল, ঠিক তখনই এর এতটা নেমে যাওয়া সব মহলেরই উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে এর ফলে সব মিলিয়ে আগামী ঋ
ণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর সম্ভাবনা আরও জোরালো হল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
মূল্যবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক ভাবে না কমার জন্যই সুদ কমানোর রাস্তায় এত দিন হাঁটেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অথচ এই নিয়ে গত পাঁচ মাস ধরেই টানা নামল এর হার। আবার অর্থনীতির চাকায় গতি আনার জন্য এ দিনও অবিলম্বে সুদ কমানোর দাবি করেছে শিল্পমহল। কারণ তাদের মতে, শুধু লগ্নি কমে যাওয়াই নয়, বাজারে চাহিদা যে কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, তা-ই প্রতিফলিত হয়েছে এ দিন শিল্পোৎপাদনের সঙ্কোচনে। এই ফাঁস থেকে বেরোতে সুদ কমানো ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছে তারা।
আর এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, মূল্যবৃদ্ধি এতটা কমেছে অথচ থমকে গিয়েছে শিল্প বৃদ্ধি বৈপরিত্যের এই ছবি দেখে এ বার অন্তত শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পদক্ষেপ করবে। বিশেষ করে যেখানে বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরানোর যুক্তিতে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছেন খোদ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এই পরিস্থিতিতে এ দিনই জেটলির সঙ্গে দেখা করেছেন রঘুরাম রাজন। পরে শীর্ষ ব্যাঙ্ক গভর্নর বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে তাঁদের মধ্যে। এ দিনের দুই পরিসংখ্যান ও সুদ কমানোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই ব্যাখ্যা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
বিশেষত এ দিনই আবার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সম্পর্ক খুবই ভাল। গণতন্ত্রে আপনারা সবসময়েই স্বাস্থ্যকর বিতর্কও আশা করতে পারেন।” তবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে ফের সুদ কমানোর আর্জি জানানোর পাশাপাশি এ দিন কেন্দ্রের কাছেও দ্রুত বিভিন্ন আর্থিক সংস্কার রূপায়ণের আবেদন জানিয়েছে শিল্পমহল। বিশেষ করে যেহেতু উৎপাদন শিল্প সরাসরি কমে যাওয়া উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাদের।
প্রসঙ্গত, নভেম্বরে মূল্যবৃদ্ধি কমেছে মূলত সব্জির মতো কিছু খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশ খানিকটা কমার কারণে। অন্য দিকে, ঠিক ততটাই অস্বস্তি জাগিয়ে শিল্পোৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে মূলত ভোগ্যপণ্য (-১৮.৬%), উৎপাদন শিল্প (-৭.৬%) ও মূলধনী পণ্য (-২.৩%) উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার ফলে।
এ দিন অবশ্য শিল্পের বৃদ্ধি নিয়ে সওয়াল করেছেন রাজনও। তবে মোদীর স্বপ্ন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, আসলে তা হওয়া উচিত ‘মেক ফর ইন্ডিয়া’। কারণ চিনের মতো রফতানি নির্ভর অর্থনীতি নয়, দেশীয় চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়েই উৎপাদনে গতি আনতে হবে। সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়মুখী করতে তুলতেও উৎসাহী করে তোলার পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি। যাতে অর্থনীতিতে লগ্নিযোগ্য পুঁজির জোগানও আরও বেশি নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি শুধু উৎপাদন শিল্প নয়, সার্বিক শিল্প বৃদ্ধিকেই পাখির চোখ করতে বলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy