অধিকাংশ রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে পাশে পেলেও অমিত মিত্রকে এখনও রাজি করাতে পারেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে বেঁকে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সেই বিরোধিতাকে অগ্রাহ্য করেই জিএসটি নিয়ে এগোতে চাইছে মোদী-সরকার।
অধিকাংশ রাজ্যের কাছে সম্মতি আদায় ইতিমধ্যেই সাড়া। তাই আজ, বুধবারই জিএসটি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। যাতে চলতি অধিবেশনেই তা সংসদে পেশ করা যায়। কিন্তু বিমায় বিদেশি লগ্নির সীমা ৪৯% করার মতো জিএলটি-বিলেও বাধা দিতে কোমর বাঁধছে তৃণমূল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি অন্যায্য। তাই তা মানা সম্ভব নয় কোনও ভাবেই।
পশ্চিমবঙ্গের মূল দাবি কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বাবদ ক্ষতিপূরণ মেটানো নিয়ে। জিএসটি চালুর জন্য ওই কর ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে রাজ্যগুলির দাবি, প্রতিশ্রুতিমতো আগে কেন্দ্র সেই বাবদ হওয়া ক্ষতি পূরণ করে দিক। ইউপিএ জমানায় এ বিষয়ে বিস্তর টানাপড়েন চলেছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে ওই বকেয়া ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেটলি। জানিয়েছেন, তিন কিস্তিতে রাজ্যগুলির প্রাপ্য ৭৩ হাজার কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম কিস্তির ১১ হাজার কোটি আগামী বাজেটেই বরাদ্দ করার কথা বলেছেন তিনি।
কিন্তু সেই তিন কিস্তির জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয় পশ্চিমবঙ্গ। তাদের দাবি, প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের অঙ্ক প্রায় ৪,৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এখনই ৪ হাজার কোটি মিটিয়ে দিতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “এই টাকা মেটানো হলে তবেই জিএসটি-বিল নিয়ে ভাবব।” কিন্তু প্রথম কিস্তিতে রাজ্যগুলিকে যে ১১ হাজার কোটি টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতি জেটলি দিয়েছেন, হিসেব অনুযায়ী তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ভাগে পড়বে ৪০০ কোটি। অর্থাৎ, তার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ দাবি করছে ১০ গুণ। প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের ৯০% এখনই মিটিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে তারা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, এই দাবি মানা কার্যত অসম্ভব। কারণ ১১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৪ হাজার কোটি পশ্চিমবঙ্গকেই দিয়ে দিলে, অন্য রাজ্যগুলি কী পাবে?
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, কেন্দ্র জানে সারদা এবং খাগড়াগড় কাণ্ড নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে তাদের বিরোধিতা এখন রাজনৈতিক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তাই চট করে কোনও সংস্কারে এখন তাদের পাশে পাওয়া কঠিন। আর তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই জিএসটি নিয়ে এগোচ্ছে তারা।
জিএসটি চালুর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, তার জন্য বিলটি তিন-চতুর্থাংশের সমর্থন নিয়ে পাশ করাতে হবে সংসদের দুই কক্ষেই। তারপর অনুমোদন জোগাড় করতে হবে অন্তত অর্ধেক রাজ্যের। কেন্দ্র মনে করছে, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে পশ্চিমবঙ্গকে ছাড়াই জিএসটি নিয়ে এগোতে পারে তারা। একমাত্র তা হলেই ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যে তা চালু করা সম্ভব।
এমনিতে এ বিষয়ে রাজ্যগুলিকে পাশে পেতে গত সপ্তাহ থেকেই কাঠখড় পোড়াচ্ছেন জেটলি। রাজ্যগুলির দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে নিয়ে পেট্রোপণ্যকে (পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি) আপাতত জিএসটি-র বাইরে রাখতে রাজি হয়েছেন তিনি। বিনিময়ে প্রবেশ করকে জিএসটি-র অন্তর্ভুক্ত করায় সায় দিয়েছে অধিকাংশ রাজ্য। এই দুই ক্ষেত্রে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গও।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, জিএসটি-র আওতায় এলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমত। তা ছাড়া, পরে তাদের জিএসটি-র আওতায় আনতে হলে ফের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যগুলির সমস্যার কথা মাথায় রেখে তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন জেটলি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জিএসটি চালুর পরেও রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতি হলে, বিষয়টি দেখার। কিন্তু তা বলে ক্ষতিপূরণ মেটানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ যে দাবি তুলেছে, তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই অর্থ মন্ত্রক কর্তাদের অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy