গ্রামাফোনের রেকর্ড-ক্যাসেট-সিডি-ইউটিউব-অনলাইন স্টোর। এই সব কিছুর পর গান-বাজারে এ বার পালা কার্ডের। সৌজন্যে খাস কলকাতারই একটি সংস্থা। আজকের মোবাইল-সর্বস্ব ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘কিউ আর কোড’ কার্ডের নতুন প্রযুক্তিকে পুঁজি করে গানের বাজার ধরতে ঝাঁপাচ্ছে তারা।
ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তির মেধাসত্ত্বের (পেটেন্ট) জন্য আবেদন করেছে শহরের সংস্থা ব্র্যান্ড নেক্সট। কর্ণধার কৌশিক মৌলিকের দাবি, বিশ্বে এই প্রথম গানের অ্যালবাম তৈরি হচ্ছে কুইক রেসপন্স (কিউ আর) কোডে। এখানে গান থাকবে অনেকটা মেট্রো রেলের স্মার্ট কার্ডের মতো দেখতে একটি কার্ডে। যার সামনে থাকবে শিল্পীর ছবি ও অ্যালবামের নাম। ক্যাসেট বা সিডির কভারে যেমন থাকে। আর পিছনে থাকবে নানা মাপের কালো-কালো দাগের সাঙ্কেতিক ভাষা। যা আদপে ‘কিউ আর কোড’। স্মার্ট ফোন বা ট্যাবলেটের কোড-রিডার তার উপর ধরলেই, নেটে হেঁটে ক্রেতা পৌঁছে যাবেন একটি নির্দিষ্ট লিঙ্কে। আর সেখান থেকে অ্যালবামের যাবতীয় গান ডাউনলোড করে মোবাইল বা ট্যাবলেটে সহজেই শোনা যাবে বলে মৌলিকের দাবি।
‘কিউ আর কোড’ বা কুইক রেসপন্স কোড আসলে বারকোডেরই আরও উন্নত সংস্করণ। বারকোড প্রথম তৈরি হয়েছিল জাপানে, ষাটের দশকে। জাপানি অর্থনীতিতে তখন উন্নতির জোয়ার। আর তার জেরে বড় বিপণিগুলিতে তখন ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ফলে টানা দ্রুত বিল বানাতে গিয়ে ক্যাশিয়ারদের দফারফা। সেই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে গিয়েই জন্ম বারকোডের। এখন ভারত-সহ প্রায় সব দেশেই শপিং মল এমনকী অনেক বড় দোকানে বারকোড লাগানো থাকে চাল, ডাল, তেল, সাবান, ক্রিম, জামা-কাপড় থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের প্যাকেটের গায়ে। স্ক্যান করার জন্য তার উপর সেন্সর জাতীয় যন্ত্র ধরলেই জিনিসটির নাম, দাম ইত্যাদি ফুটে ওঠে। এর পর কম্পিউটার আর প্রিন্টারের মাধ্যমে তা ছাপা হয়ে যায়। দ্রুত করা যায় বিলিং।
বারকোডের কালো দাগের সেই আঁকিবুঁকির প্রযুক্তির জোর আরও বাড়িয়েই তৈরি হয়েছে ‘কিউ আর কোড’। আর সেই কোডের খাঁজেই গান ভরে দিয়েছে ব্র্যান্ড নেক্সট। মৌলিক বলেন, ছয় থেকে ছ’শোটি গান থাকতে পারে এই ধরনের একটি কার্ডে। তাঁর মতে, এতে গানের আদান-প্রদান আরও সহজ হবে। কমবে অ্যালবাম কেনার খরচও। মৌলিকের দাবি, চিরাচরিত প্রথায় কোনও সিডি তৈরির জন্য যদি ছোট-বড় অ্যালবাম সংস্থার লাখ দেড়েক টাকা খরচ হয়, তবে এই নয়া প্রযুক্তিতে তা দাঁড়াবে মাত্র ২০ হাজার টাকা। ফলে বাজারে যে গান শুনতে কমপক্ষে ১৫০ টাকায় সিডি কিনতে হয়, তার জন্য ‘কিউ আর কোড’ কার্ডের দাম পড়বে ২০ টাকার মতো।
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের প্রসার যত বাড়ছে, তার হাত ধরে তত বদলে যাচ্ছে গানের ব্যবসার ধাঁচও। সরাসরি নেট থেকে ডাউনলোড কিংবা অনলাইন স্টোর (যেমন, গুগ্ল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের আই-টিউন) থেকে গান কেনার হিড়িকে প্রায় পাততাড়ি গোটাতে বসেছে সিডির ব্যবসা। খাস কলকাতাতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্ল্যানেট-এম, আরপিজি গোষ্ঠীর মিউজিক ওয়ার্ল্ড। একই কারণে নিজেদের সিডি তৈরি ও তার বণ্টন-বিপণনের দায়িত্ব সোনির হাতে ছেড়ে দিয়ে ডিজিটাল বাজারে মন দিতে চাইছে সারেগামা।
২০০১ সালেও এ দেশে ক্যাসেট ও সিডি-র মোট বিক্রি ছিল ৩০০ কোটি টাকা। ডিজিটাল মাধ্যম প্রায় ছিলই না। অথচ সেখানে ২০১৩ সালের শেষে ডিজিটাল মাধ্যমে গানের ব্যবসা পৌঁছেছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকায়। আর সিডি-র বিক্রি নেমে গিয়েছে ২০০ কোটি টাকারও নীচে। যে কারণে সিডি-র বিভিন্ন নামী দোকানের ঝাঁপ যেখানে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে চুটিয়ে ব্যবসা করছে হাঙ্গামা, ধিঙ্গানা-র মতো গানের অনলাইন বিপণিগুলি। হাঙ্গামা কর্তৃপক্ষের দাবি, বছরে গড়ে ৮ কোটি গান কিনেছেন আড়াই কোটি ক্রেতা।
গানের এই ডিজিটাল-বাজারে প্রযুক্তির পরবর্তী বিপ্লব ‘কিউ আর কোড’-এর হাত ধরেই আসবে বলে মৌলিকের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy