Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডিজিটালে লাফ, কিন্তু ধাক্কা ঋণের চাহিদাতেই

স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত জানান, তাঁর সার্কেলে নোটবন্দির পরে ডিজিটাল লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

নোটবন্দির পরে ব্যাঙ্কে ডিজিটাল লেনদেন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাঙ্ককর্তারা। কিন্তু দ্রুত কমেছে ঋণের চাহিদা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ নোট বাতিলের ফলে মানুষের পকেটের টাকা জমা ছিল ব্যাঙ্কে। ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল দ্রুত। স্বাভাবিক কারণেই বাজারে চাহিদা না-থাকায় ভাটা পড়ে শিল্পোৎপাদনেও। উৎপাদন তলানিতে নেমে যাওয়ায় কমে যায় কার্যকরী মূলধনের প্রয়োজনও। ফলে সেভিংস অ্যাকাউন্টে কম সুদে তহবিল সংগ্রহ করতে পারলেও ঋণ বাড়াতে না-পারায় শেষ পর্যন্ত তা ব্যাঙ্কের বোঝাই বাড়িয়েছে।

স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত জানান, তাঁর সার্কেলে নোটবন্দির পরে ডিজিটাল লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞেরই মত, ডিজিটাল লেনদেন শহরে বাড়লেও গ্রামে আদৌ বাড়েনি।

ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, ‘‘প্রথমত, গ্রামের মানুষ নগদ টাকায় লেনদেন করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে নেট সংযোগেও বড় রকমের সমস্যা রয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেরই মন্তব্য, পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না-করে নগদহীন লেনদেন বাড়ানো অনেকটা গরুর আগে গাড়িকে জুড়ে দেওয়ার মতো।

পরিকাঠামোর ঘাটতির কথা ধরা প়ড়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টেও। জানা গিয়েছে, ভারতের ব্যাঙ্কগুলিতে মোট গ্রাহকের ৬১ শতাংশেরই এটিএম বা ডেবিট কার্ড নেই।

নোটবন্দির বিরূপ প্রভাব বিশেষ করে পড়ে ক্ষুদ্র-ঋণ (মাইক্রো ফিনান্স) সংস্থার উপরও। ভিলেজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কুলদীপ মাইতি বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় ব্যবসা ২২% কমেছে। এই ব্যবসায় ঋণ বণ্টন ও আদায়ের সিংহভাগ নগদেই হয়। অধিকাংশ গ্রাহক তাই ঋণের টাকা মেটাতে পারেননি। তার জের এখনও চলছে।’’

শহরে কিছুটা বাড়লেও, গ্রামে তেমন বাড়েনি ডিজিটাল লেনদেন


তৈরি নয় তার নেট পরিকাঠামো


ডেবিট কার্ডই নেই অনেকের


ধাক্কা খেয়েছে ঋণের চাহিদা। সমস্যা ধার আদায়ের ক্ষেত্রেও


একে শিল্প ঋণের চাহিদা কম। তার উপর নোটবন্দিতে ব্যাঙ্কে ঢুকেছে নগদের রাশি। সুদ গুনতে নাভিশ্বাস ব্যাঙ্কগুলির

২০১৬ সালের নভেম্বরে বৈদ্যুতিন লেনদেনের* সংখ্যা ছিল ৬৭.১৫ কোটি। টাকার অঙ্কে ৯৪ লক্ষ কোটি। সেখানে ২০১৭-এর অক্টোবরে লেনদেন হয়েছে ৯৬.৪৯ কোটি। মোট ১১৪ লক্ষ কোটি টাকার


গত নভেম্বরে ১,৩২০ কোটির ব্যবসা হত মোবাইল ওয়ালেটে। এই নভেম্বরে তা ৩,২৭০ কোটি টাকা


লাফিয়ে বেড়েছে ইউপিআই অ্যাপে লেনদেন। ৯০ কোটি থেকে ৭,০৩০ কোটি টাকা

**মোবাইল ব্যাঙ্কিং বাদে

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, নোটবন্দির পর ব্যাঙ্কঋণের চাহিদা গত ছ’দশকের মধ্যে সব থেকে নীচে নেমেছে। ২০১২-২০১৭ ওই পাঁচ বছরে গড়ে ব্যাঙ্কঋণের চাহিদা বেড়েছিল ১১.৭২%। ২০১৭-র মার্চ মাসে নেমে এসেছে ৫ শতাংশে।

অবশ্য নোটবন্দির অন্যতম সুফল হল, বেশ কিছু ভুয়ো সংস্থা ধরা পড়া। এদের অধিকাংশই আর্থিক সংস্থা। সেগুলি বন্ধ হলে ব্যাঙ্ক জমা বাড়বে বলে মনে করছেন বি কে দত্তের মতো অনেক ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞই।

তবে এক বছর পরেও সব মূল্যের নোটের জোগান স্বাভাবিক হয়নি। বহু এটিএমেই এখনও গ্রাহকরা প্রয়োজন মতো মূল্যের নোট পাচ্ছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Digitalization Loan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE