Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পকেট বুঝে পা

ফ্ল্যাট কেনা মানে শুধু তার দাম নয়। মাথায় রাখুন উকিলের ফি, বাড়ি রঙের মতো আনুষঙ্গিক খরচও। বাড়তি বাজেট ধরার কথা মনে করালেন অমিতাভ গুহ সরকারফ্ল্যাট কেনা মানে শুধু তার দাম নয়। মাথায় রাখুন উকিলের ফি, বাড়ি রঙের মতো আনুষঙ্গিক খরচও। বাড়তি বাজেট ধরার কথা মনে করালেন অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ১৩:১১
Share: Save:

সাদা চোখে যা দেখছেন, সব সময় কি সেটাই সত্যি বলে ধরে নেন! নিশ্চয়ই নয়। আর মাথার উপরে নিজস্ব ছাদ জোগাড়ের ক্ষেত্রে তো সেটা মনে করার কোনও প্রশ্নই নেই। সকলেই ভাবেন, বাড়ি বা ফ্ল্যাট পছন্দ হওয়ার পরে ডাউনপেমেন্টের টাকা জোগাড় করাই আসল হ্যাপা। তারপরে বেশ কিছু কাগজপত্র, সই-সাবুদ, তথ্য-প্রমাণের ঝক্কি পেরিয়ে ঋণ-ইএমআইয়ের ব্যবস্থা পাকা করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন, ফ্ল্যাট বা বাড়ির যে দাম দেখে পকেট ফাঁক করছেন, আদপে ঠিক ততটা টাকা গুনলেই কাজটা হয়ে যাবে কিনা। বোধহয় নয়। বরং বিজ্ঞাপনে দেখানো দামের তুলনায় আপনাকে বার করতে হবে অনেকটাই বেশি। আজকের আলোচনা এটা নিয়েই। যেখানে বাড়ির দামের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা আরও হাজারটা আনুষঙ্গিক খরচকে চিনিয়ে দেব আপনাদের। যাতে প্রথম থেকেই সমস্ত হিসেব পাকা করে ঠিক লক্ষ্যে পা ফেলা যায়।

অন্য খরচ

ধরুন, মাংস রান্না করতে চাইছেন। বাজার করার আগে শুধু মাংসের দাম ধরলে চলবে কেন? পেঁয়াজ, রসুন, আদা, তেল-মশলার মতো আনুষঙ্গিক উপাদানগুলির খরচও হিসেব করতে হবে। বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও এ রকম অজস্র খরচ রয়েছে।

ফ্ল্যাটের দাম ৩৫ লক্ষ টাকা ধরলে, সেই সব খরচ ঠিক কি রকম পড়তে পারে? চলুন তালিকায় চোখ রাখি—

• ব্যাঙ্কঋণ নেওয়ার জন্য চাই জমির সার্চ রিপোর্ট। ফ্ল্যাটের নির্মাতা তা করিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু সেটা না-হলে, আপনাকেই করিয়ে নিতে হবে নিজের খরচায়। লাগতে পারে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।

• বায়নানামা, দলিল তৈরি এবং রেজিস্ট্রেশন বাবদ উকিলের খরচ পড়তে পারে ১০
থেকে ২০ হাজার টাকা।

• পরিষেবা কর গুণতে হবে ফ্ল্যাটের দামের উপর ৩.৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৩৫ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাট ধরলে, তার উপর খরচ ১.৩১ লক্ষ।

• স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ লাগবে মোটা টাকা। ফ্ল্যাটের দাম এবং তার সরকার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে যেটি বেশি তার ৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে খরচ পড়তে পারে ২.৪৫ লক্ষ।

• রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ দিতে হবে আরও ১.১ শতাংশ অর্থাৎ ৩৮,৫০০ টাকা।

• ফ্ল্যাটের দামের সঙ্গে পার্কিং বা গ্যারাজের দাম সাধারণত ধরা থাকে না। গ্যারাজ নিতে হলে দিতে হতে পারে কম-বেশি আরও ৩.৫ লক্ষ। বর্তমানে হয়তো আপনার গাড়ি নেই। তাই এই খরচের কথা ভাবছেন না। কিন্তু অবশ্যই ভবিষ্যৎ প্রয়োজন ও সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখবেন। কারণ, বাড়ির কাছে গ্যারাজ পাওয়া কিন্তু সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে। তখন অসুবিধায় পড়তে হবে। যে কারণে বেশির ভাগ ক্রেতাই এখন গাড়ি না-থাকলেও গ্যারাজ কিনে রাখতে চান।

• ক্লাব, অ্যাসোসিয়েশন, জিম, সুইমিং পুল ইত্যাদি থাকলে সে সবের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য দিতে হতে পারে কম-বেশি ১ লক্ষ টাকা।

• আধুনিক প্রকল্পে প্রোমোটাররা জানলা এবং বারান্দায় গ্রিল লাগিয়ে দেয় না। এ জন্য লাগতে পারে আনুমানিক ৫০ হাজার।

• ফ্ল্যাটের ভিতরে রং বাবদ ২০ হাজার।

• ফ্যান, লাইট, পর্দা, বাথরুম ফিটিংস ইত্যাদি বাবদ ১০ হাজার।

• নিজের নামে ইলেকট্রিক মিটার বসানো খাতে প্রায় ১০ হাজার।

• ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলে প্রাথমিক জমা ৫০ হাজার।

• গৃহপ্রবেশ পুজো ও অতিথি আপ্যায়ন বাবদ কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা তো লেগেই যাবে।

• এর পর করাতে হবে ফ্ল্যাটের মিউটেশন। খরচ খুব কম পড়বে না। তবে তা ফ্ল্যাট কেনার সঙ্গে সঙ্গে না করালেও চলে। ধীরে-সুস্থে হাতে কিছু টাকা এলে করিয়ে নেওয়া ভাল।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, একটি ৩৫ লাখের ফ্ল্যাট কিনতে মূল দাম ছাড়াও সব মিলিয়ে গুনতে হতে পারে আরও প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা কিছুটা বাড়তে-কমতে পারে। তবে শুরুতে দাম এ ক্ষেত্রে অন্তত ৪৫ লক্ষ টাকা ধরে এগোনো উচিত। ফ্ল্যাট কেনার বাজেট তৈরি করার সময়ে সব কিছু ধরে সেই অনুযায়ী তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্ল্যাটের দাম কম হলে আনুষঙ্গিক খরচও কমবে। পুরোটাই নির্ভর করবে পকেটের জোরের উপর।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE