বাজেট পেশ করতে গিয়ে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড আখ্যা দিয়ে এই শিল্পের প্রসারে একগুচ্ছ দাওয়াইয়ের প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। যার মধ্যে ব্যবসা গোটানোর ব্যবস্থা সরল করাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল।
শুনতে অবাক লাগলেও ভারতে ব্যবসা শুরুর চেয়ে তা গোটানো অনেক বেশি কঠিন। আর ব্যর্থ হলে সহজে ব্যবসা গোটাতে না-পারার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না বেশির ভাগ ছোট ও মাঝারি সংস্থারই। দীর্ঘদিনের দাবি মেনে তাঁর প্রথম বাজেটে তাই দেউলিয়া ছোট -মাঝারি সংস্থাকে ব্যবসা গোটানোর সহায়ক পরিবেশ তৈরির আশ্বাস দিলেন জেটলি। এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যে এই শিল্পে সংগঠন ‘ফ্যাক্সি’-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দিলীপ কুমার মিত্র ও জাতীয় সংগঠন ‘ফিসমে’-র সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজ।
কিন্তু সেই সুযোগ নিয়ে সংস্থা যদি বকেয়া না-মিটিয়েই পাততাড়ি গোটায়? অনিলবাবুর দাবি, আইনি রক্ষাকবচ থাকলে বরং উল্টোটাই হবে। সে ক্ষেত্রে সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে আগে বকেয়া মেটাতে হবে। ফলে বন্ধ সংস্থায় ব্যাঙ্ক বা সরকারের টাকা যেমন আটকে থাকবে না, তেমনই সংস্থাকেও বন্ধ ব্যবসার বোঝা বয়ে যেতে হবে না। তাই ব্যবসায় নামতে আগ্রহ বাড়বে।
তবে জেটলির মতে, এই শিল্পের আর্থিক পরিস্থিতিই সার্বিক ভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। সে জন্য অর্থ মন্ত্রক, ছোট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গড়ার কথা এ দিন বাজেটে বলেছেন কেন্দ্রীয় অথর্মন্ত্রী। তিন মাসের মধ্যে কমিটি নির্দিষ্ট পরামর্শ দেবে। ফ্যাক্সি, ফিসমে-র মতোই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন এই শিল্পে রাজ্যের আর একটি সংগঠন ফসমি-র প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যও।
তবে কিছু প্রস্তাব নিয়ে সংশয় পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে পারেনি শিল্পমহল। অতীতের অভিজ্ঞতার নিরিখে তাই না-আঁচানো পর্যন্ত এখনই ভরসা রাখতে পারছে না তারা। যেমন, উদ্যোগপতি গড়তে জেটলির ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ার প্রস্তাব। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি শিল্পকে অনগ্রসর শ্রেণির বিকাশেরও হাতিয়ার বলেই মনে করেন জেটলি। কারণ তাঁর মতে, অধিকাংশ সংস্থারই মালিক অনগ্রসর শ্রেণির। ফলে কর্মসংস্থান ও অনগ্রসর শ্রেণির কল্যাণের জন্য উদ্যোগপতি গড়তে ওই বিশেষ তহবিল গড়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ফিসমে-র কর্তা অনিলবাবু স্পষ্টই বলছেন এটি রাজনৈতিক ঘোষণা। খুব একটা আশা দেখছে না ফ্যাক্সি-ও।
কেন? অতীত অভিজ্ঞতাই এর অন্যতম কারণ। শিল্পমহলের অভিযোগ, আগেও স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র আওতায় কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রায় একই ধরনের তহবিল গড়ে কেন্দ্র। কিন্তু কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। শিল্পমহলের এই যুক্তির সমর্থন মিলেছে আইআইএম-কলকাতার অধ্যাপক অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও। তিনি বলেন, “এই তহবিল ব্যবহারের নীতি ঠিক মতো কার্যকর হওয়া দরকার। সঠিক উদ্যোগপতির হাতে যাতে সেই টাকা ঠিকমতো পৌঁছয় তার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জরুরি।”
আধুনিক প্রযুক্তির অভাবও সঙ্কটে ফেলে ছোট শিল্পকে। প্রযুক্তি কেন্দ্র গড়ার জন্য বিশেষ তহবিল গড়তে তাই আরও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। অশোকবাবুর মতোই বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট দিব্যেন্দু বসুও এই প্রস্তাব স্বাগত জানিয়েছেন।
এত দিন বিদেশিরা তাঁদের কর আগাম জানার সুযোগ পেতেন। এ বার দেশের নারগিকরাও সে সুযোগ পাবেন। অনিলবাবুর মতে, অন্যদের মতোই ছোট শিল্প এতে উপকৃত হবে।
সর্বোপরি ছোট শিল্পের সংজ্ঞা ফিরে দেখার কথাও বলেন জেটলি। এখনকার ছোট ও মাধারি শিল্প আইন অনুযায়ী, যন্ত্র ও মূলধনী খাতে কোনও সংস্থায় ২৫ লক্ষ টাকার কম লগ্নি হলে তাকে ক্ষুদ্র, ২৫ লক্ষের বেশি কিন্তু পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত লগ্নি হলে ছোট এবং পাঁচ কোটির বেশি কিন্তু ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত লগ্নি হলে মাঝারি শিল্প হিসেবে ধরা হয়। তাই প্রতিটি শিল্প এক এক রকম সুবিধা পায়। জেটলি এ নিয়ে বিশদে কিছু না-বললেও শিল্পমহল মনে করছে, লগ্নির ওই অঙ্কের সংজ্ঞা বদলের ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরেই ঊর্ধ্বসীমা বাড়লে আরও বেশি সংস্থা ছোট ও মাঝারি শিল্পের আওতায় আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy