ব্রেক্সিটের ধাক্কায় মিইয়ে যায়নি বাজারের বারুদ।
গত কয়েক মাসে শেয়ার সূচক একটু-একটু করে অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে। সেই তেজী ভাবে এখনও অন্তত ভাটা পড়েনি গণভোটে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার সিদ্ধান্ত (ব্রেক্সিট) নেওয়ায়।
বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স পা রাখতে চাইছে ২৮ হাজারে। সম্প্রতি বার দুই তা ঢুকেও পড়েছিল ২৮ হাজারের ঘরে। কিন্তু বিক্রির চাপে সেই উচ্চতা ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু এ বার বর্ষা দরাজ। তার সুফল হাতেনাতে পেতে আরও মাস তিনেক দেরি। কৃষি ভাল করলে তার সুফল পাবে শিল্প। কারণ, চাহিদা বাড়বে। ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। সেই আশাতেই এখন উপর দিকে চাইছে সেনসেক্স ও নিফ্টি।
এর মধ্যে অনেক শেয়ার অবশ্য ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে পৌঁছেছে। কোনও-কোনও শেয়ার ভেঙেছে তার সর্বকালীন রেকর্ড। ফলে তরতাজা হয়ে উঠেছে বেশির ভাগ ইকুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্প। সুদ কমেছে এবং তা আরও কমতে পারে, এই কারণে ন্যাভ অনেকটা বেড়েছে ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলিরও। গত দু’বছর ধরে যাঁরা এসআইপি-তে লগ্নি করেছেন, অবশেষে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। প্রাণ ফিরেছে নতুন ইস্যুর বাজারে। শেয়ার বাজারে দেখা মিলছে নতুন লগ্নিকারীদের। ফিরছেন পুরনোরাও। সব মিলিয়ে পরিবেশ বেশ ফুরফুরে।
বর্ষার জল কম-বেশি পৌঁছেছে সব রাজ্যে। জোর কদমে শুরু হয়েছে ফসল বোনার কাজ। এ বার ধান গোলায় তোলার অপেক্ষা। সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যপণ্যের দাম কমা জরুরি। পঁচিশ বছর ভারত উদারনীতির পথে হাঁটছে। এখন সময় এসেছে হিসেব-নিকেশেরও। সত্যিই একদম নীচের তলার মানুষের কতটা ভাল হয়েছে, জীবনযাত্রার মান কতটা বেড়েছে, বৈষম্য কমেছে কি না— এই সবের বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। অনেকেই বলছেন, শুধু বৃদ্ধির গালভরা পরিসংখ্যানে চিঁড়ে ভিজবে না। একই সঙ্গে দেখতে হবে, সেই বাড়তি উৎপাদনের সুফল কতটা সর্বসাধারণের ঘরে পৌঁছচ্ছে।
বর্ষার পাশাপাশি এখন ভরা মরসুম সংস্থাগুলির আর্থিক ফল প্রকাশেরও। প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি কিছুটা হতাশ করলেও, পরে অন্যান্য শিল্প থেকে বেশ কিছু ভাল ফল বাজার ইতিমধ্যেই পেয়েছে। টিসিএস ও ইনফোসিসের ফল তেমন চোখ টানেনি। হতাশ করেছে আর এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রো।
কিন্তু রিলায়্যান্স ভাল ফল প্রকাশ করার পরে সেই ধারা বজায় রেখেছে একগুচ্ছ বেসরকারি ব্যাঙ্ক। এদের মধ্যে আছে ইয়েস ব্যাঙ্ক, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, কোটক-মহীন্দ্রা ব্যাঙ্ক ইত্যাদি। তবে খারাপ ফল করেছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক।
অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করায় সুদিন দেখতে পাচ্ছে সিমেন্ট শিল্প। আল্ট্রাটেকের একত্রিত লাভ (প্রথম তিন মাসে) ২৯% বেড়ে পৌঁছেছে ৭৮০ কোটি টাকায়। ভাল ফলের আশায় দাম বেড়েছে প্রায় সব সিমেন্ট শেয়ারের। ভাল ফল প্রকাশ করেছে এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজ। আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে তাদের আয় বেড়েছে ১১%। বেড়েছে লাভও। আয় ও লাভ দু’ই বেড়েছে অগ্রণী ভোগ্যপণ্য সংস্থা আইটিসি-র। ভাল ফল করেছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার।
অগ্রগতির হাওয়া এল অ্যান্ড টি-র পালেও। অনেকখানি বেড়েছে তাদের পাওয়া বরাতের পরিমাণ। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির অবস্থা তুলনায় খারাপ হওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে এলঅ্যান্ডটি ইনফোটেকের সদ্য বাজারে আসা নতুন ইস্যু। ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে এলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির উপর বড় ধাক্কা আসার আশঙ্কায় চাহিদা কমতে শুরু করেছে তাদের শেয়ারের। ফলে তাৎক্ষণিক ভাবে এলঅ্যান্ডটি ইনফোটেক শেয়ারে লাভের মুখ দেখতে পাননি সব আবেদনকারী।
বিভিন্ন দিক থেকে সদর্থক খবর আসায় বাজার এখন অনেকটাই তেজী। সব ঠিকঠাক চললে, সূচক আরও এগোবে। এরই মধ্যে বেশ ভাল উচ্চতায় উঠেছে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ সূচক। লার্জ ক্যাপ সেই তুলনায় এখনও ততটা বাড়েনি। এই পরিস্থিতিতে উচিত হবে হাতে থাকা ‘তেমন ভাল নয় শেয়ার’ (যারা ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না এবং এই বাজারেও দাম বাড়েনি) বিক্রি করে ভাল লার্জ ক্যাপ শেয়ারে লগ্নি করা। ছোট মাপের ভাল বেসরকারি ব্যাঙ্কেও লগ্নির কথা ভাবা যেতে পারে।
কর সংগ্রহ বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছে অর্থ মন্ত্রক। তাদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কিছু দিনের মধ্যেই আয় এবং ব্যয় সংক্রান্ত নানা তথ্য চেয়ে ৭ লক্ষ করদাতাকে ই-মেলে নোটিশ পাঠাবে আয়কর দফতর। তথ্য চাওয়া হবে মূলত ৩০ লক্ষ টাকার বেশি দামি সম্পত্তি কেনা-বেচা, মোটা নগদ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া এবং বড় খরচ সংক্রান্ত বিষয়ে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৯০ লক্ষ প্যানহীন এমন লেনদেনের খবর আয়কর দফতরের নজরে এসেছে। সরকার চায়, ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর মতো এ বার আয়কর নিয়েও স্বচ্ছতা অভিযানে নামতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy