Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাধারণ ফোনেও বাড়ছে নগদহীন লেনদেন

হাতে স্মার্ট ফোন নেই। নেই ইন্টারনেটও। রয়েছে সাধারণ মোবাইল। আর, তাতেই জোরকদমে চলছে ব্যাঙ্কিং। সাধারণ ফোনেও নগদহীন লেনেদেনের সুযোগ দিতে বছর দু’য়েক আগে বিশেষ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হলেও সচেতনতার অভাবে তাতে তেমন সাড়া মেলেনি।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৩
Share: Save:

হাতে স্মার্ট ফোন নেই। নেই ইন্টারনেটও। রয়েছে সাধারণ মোবাইল। আর, তাতেই জোরকদমে চলছে ব্যাঙ্কিং।

সাধারণ ফোনেও নগদহীন লেনেদেনের সুযোগ দিতে বছর দু’য়েক আগে বিশেষ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হলেও সচেতনতার অভাবে তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। নোট বাতিলের জেরে লাফিয়ে বাড়ছে ওই পরিষেবার লেনদেন। এতটাই যে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই ব্যবস্থায় লেনদেনের বহর গোটা নভেম্বরের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। ওই ‘আনস্ট্রাকচারড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডেটা’ (ইউএসএসডি) ভিত্তিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি, এমনটাই পরিসংখ্যানে দাবি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের।

আরবিআইয়ের তথ্য বলছে, নভেম্বরে ৭ হাজার বার ইউএসএসডি কোড ব্যবহার করে এই ব্যবস্থায় মোট লেনদেনের অঙ্ক প্রায় ৭৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথম ছ’দিনেই লেনদেনের সংখ্যা প্রায় ৬৪০০। অঙ্ক ৫৭ লক্ষ টাকা। তবে সবাই যে এই ব্যবস্থায় টাকা লেনদেন করেছেন তা না-ও হতে পারে। এই ব্যবস্থার পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) জানাচ্ছে, অনেকেই হয়তো শুধু জমা টাকার হিসেব দেখেছেন। তবে দু’টি পরিসংখ্যানই ঊর্ধ্বমুখী। এবং গোটা ডিসেম্বর মাস সেই
দৌড়ে নভেম্বরকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দেবে বলে তাদের ধারণা।

দেশে স্মার্ট ফোনের সংখ্যা ৩০ কোটি। কিন্তু এখনও সাধারণ ফোন তার প্রায় দ্বিগুণ। এগুলিতে ইন্টারনেট নেই। সেই কারণে ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ইন ব্যাঙ্কিং, কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর, ট্রাই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সহায়তায় সকলের কাছেই মোবাইল ফোনে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুযোগ দিতে উদ্যোগী হয়েছিল মোবাইল পেমেন্ট ফোরাম অব ইন্ডিয়া। এনপিসিআই-এর দাবি, ২০১৪ সালে জন-ধন প্রকল্পের সূচনার পরেই ওই ইউএসএসডি ভিত্তিক ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হয়েছিল।

এখন দেশের ৫৬টি ব্যাঙ্কেই এটি চালু। ফোন কম দামি ও সাধারণ হোক বা স্মার্ট ফোন, সবেতেই *৯৯# এই বিশেষ ‘ইউএসএসডি কোড’ লিখে তার পর বিভিন্ন ‘অপশন’ বা সুবিধা পেতে পারেন গ্রাহক। অ্যাকাউন্টে জমা টাকার অঙ্ক জানা, অন্যকে টাকা পাঠানো কিংবা অন্যের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার হরেক সুবিধা মেলে এই পরিষেবায়। অনেকটা যে-ভাবে বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার পরিষেবায় গ্রাহক মাসুল হার কিংবা ‘রিচার্জ’-এর বিষয় জানতে পারেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই পরিষেবায় ব্যাঙ্কের ‘সার্ভার’-এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় মোবাইল গ্রাহকের। সঙ্গেই সঙ্গেই লেনদেন হয়। তার কোনও তথ্য মোবাইলে জমাও হয় না বলে গোটাটাই সুরক্ষিত থাকে। অন্য গ্রাহককে টাকা পাঠাতে তাঁরও বিশেষ কোড (এমএমআইডি)-এর পাশাপাশি আধার নম্বর বা ‘আইএফএসসি কোড’ ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানলেও হবে।

এনপিসিআই-এর এক কর্তা বলেন, ‘‘বাংলা-সহ সংবিধান স্বীকৃত দেশের ২১টি ভাষায় ও ইংরেজিতে এই পরিষেবা পাওয়ার কথা।’’

সম্প্রতি এই ব্যবস্থাকে আরও সহজ করার কথা বলেছেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। এনপিসিআই সূত্রের খবর, হঠাৎ করে এই পরিষেবা ব্যবহারের প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় গোটা ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে। তথ্য পরিবহণের ক্ষমতা যথেষ্ট না-হওয়ায় পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছে। তাই পরিকাঠামো উন্নত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

নেট ছাড়াই মোবাইল মারফত টাকা লেনদেন বাড়াতে উদ্যোগী বিভিন্ন ব্যাঙ্কও। যেমন ইয়েস ব্যাঙ্ক যে-কোনও ফোনে নেট ছাড়াই লেনদেনের (সিমসে পে) সুবিধা এনেছে। তাতে একটি বিশেষ স্টিকার সিমের উপর আটকে দিলে সব ফোন থেকেই এসএমএস নির্ভর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা মিলবে। রয়েছে ভোডাফোনের এম-পেসা পরিষেবা। পেটিএম-ও গোড়ায় নেটে গ্রাহকের তথ্য নথিভুক্তির পরে ইন্টারনেট বা স্মার্ট ফোন ছাড়া টাকা লেনদেনের ব্যবস্থা চালু করছে।

দেনাপাওনা

• গ্রাহকের মোবাইল নম্বর অ্যাকাউন্টে নথিভুক্ত করা

• মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা নিতে ব্যাঙ্কের কাছে আর্জি

•ব্যাঙ্ক থেকে কিংবা ফোনেই ‘এমএমআইডি’ কোড চাওয়া

•একই ভাবে লেনদেনের জন্য ‘এম-পিন’ নেওয়া

• যাঁকে টাকা পাঠাবেন, তাঁরও এমএমআইডি থাকতে হবে। সেটি লিখে এম-পিন ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে হবে

• দু’জনের আলাদা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলেও লেনদেনে সমস্যা নেই

• একলপ্তে ৫,০০০ টাকার বেশি লেনদেন করা যাবে না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cashless transaction normal mobiles
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE