দেনায় জেরবার এয়ার ইন্ডিয়া (এআই) বিলগ্নিকরণের জন্য অবশেষে নীতিগত সায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছে, আপাতত বিলগ্নিকরণে পা বাড়ানোর কথা বলা হলেও, শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থাটি বেসরকারিকরণের পথেই হাঁটতে পারে কেন্দ্র। এ দিকে, নীতিগত ভাবে কেন্দ্রের এই বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তবে সংস্থাটির আংশিক বিলগ্নিকরণ হবে, না কি পুরোপুরি বিক্রি করা হবে সে ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেননি। তিনি জানান, বিলগ্নিকরণ বাস্তবায়িত করার জন্য তৈরি হবে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী। সংস্থার কতটা অংশীদারির হাতবদল হবে, তা কার্যকর করার প্রক্রিয়া, বিলগ্নিকরণের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করবে তারাই। তবে শেষে সিলমোহর দেবে মন্ত্রিসভা।
এ দিনই আবার নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়ার সঙ্গে দেখা করে সংস্থার কর্মী ইউনিয়ন। তাদের দাবি ছিল, বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পরিবর্তে, কেন্দ্র যেন তাদের ঘাড়ে চেপে থাকা ঋণ মকুব করে দেয়। সংগঠনের তরফে কর্মীদের লেখা একটি চিঠি পানাগড়িয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়। যেখানে লেখা ছিল, ‘‘আমরা অনুরোধ করছি ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ মাফ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে টিকে থাকার সুযোগ যেন দেওয়া হয়।’’ তার কয়েক ঘণ্টা পরেই অবশ্য মন্ত্রিসভা বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত জানায়।
মোদী সরকার যে এআই বেচতে বদ্ধপরিকর, মঙ্গলবার তা আরও এক বার স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বলেছিলেন, ‘‘সংস্থার বেসরকারিকরণই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ তা ৫৫ হাজার কোটি টাকার লোকসানে চলছে। এর পিছনে আর পয়সা খরচ না-করে, সেই অর্থ দেশ গড়ার কাজে লাগানো উচিত।’’ নীতি আয়োগও প্রাথমিক ভাবে সংস্থা বিক্রির সুপারিশ করে। এমনকী মাঝখানে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে উঠে আসে টাটাদের নামও।
তবে পুরোপুরি হাতবদলে প্রথম থেকেই আপত্তি তুলে আসছে বিমান মন্ত্রকের একাংশ। তারা চাইছিল, সংস্থার বেসরকারিকরণ নয়, বিলগ্নিকরণ হোক। অর্থ মন্ত্রকের বিলগ্নিকরণ দফতরের কর্তাদের মতে, আসলে বিমান মন্ত্রকের অধীনে এই একটি সংস্থাই রয়েছে। অনেকেই তাই রাশটা পুরো ছেড়ে দিতে রাজি নন। ফলে এ দিনের সিদ্ধান্তে আপাতত বিমান মন্ত্রকের ইচ্ছেই পূর্ণ হতে চলেছে। মমতা যদিও বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজুর দল তেলুগু দেশমের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন বেসরকারি বিমান সংস্থার সঙ্গে আকাশ দখলের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। কমপক্ষে গত সাত বছর ধরে তারা লোকসানে চলছে। গত ২০১২ সালে তৎকালীন ইউপিএ সরকার ঋণে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়াকে অক্সিজেন জোগাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার ত্রাণ জুগিয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকার ঠারেঠোরে বহু দিন ধরেই বুঝিয়ে আসছে ২০১৮-র ১ এপ্রিল থেকে আর এয়ার ইন্ডিয়া চালাতে রাজি নয় তারা। যদিও ক্রেতা না-পাওয়া পর্যন্ত যে হাত ধুয়ে ফেলা সম্ভব নয়, তা-ও বিলক্ষণ জানে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy