Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Budget

ফের উত্তরাধিকার কর আনতে চাইছে কেন্দ্র

অতীতে এই করকে বলা হত ‘এস্টেট ডিউটি’।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৭
Share: Save:

৩২ বছর আগে রাজীব গাঁধী যে সম্পত্তির উত্তরাধিকার কর তুলে দিয়েছিলেন, এ বারের বাজেটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবার সেই কর ফিরিয়ে আনতে চাইছেন।

প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে শিল্পপতি ও বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় এই বিষয়টি উঠে এসেছে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার করের অর্থ হল, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির উপরে নির্দিষ্ট হারে কর জমা দিতে হবে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়বে। গত বছরেও অরুণ জেটলি যখন বাজেট পেশ করতে যাচ্ছিলেন, তখনও আমেরিকা ও ব্রিটেনের ধাঁচে এই কর বসানোর প্রস্তাব এসেছিল বেশ কিছু প্রশাসক ও বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে। কিন্তু জেটলি তখন রাজি হননি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ বার অর্থসচিব হসমুখ অধিয়া রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এই কর চাপাতে বিশেষ আগ্রহী।

এই করের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের উপর থেকে লভ্যাংশ বণ্টন কর (ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স) তুলে নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে মোদী সরকার। এই কর তুলে নিলে শেয়ার বাজারে তার প্রভাব পড়বে। ১৯৯৭ সালে এই কর চালু হয়েছিল। অধিয়ারা মনে করছেন, এর ফলে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নিতে প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন: বাবাকে খুন করতে অনলাইনে বিস্ফোরক অর্ডার, হাজতে ছেলে

তবে বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধে করে দিলেই বিরোধীরা ফের স্যুট-ব্যুটের সরকার বলে সরব হতে পারে। সেই কারণেও উত্তরাধিকার কর ফিরিয়ে এনে মোদী সরকার একটি বার্তা দিতে চাইছে। সেটি হল, ‘আমিরি হটাও’। অর্থাৎ, ভারতে যে সব বৃহৎ পুঁজিপতি সম্পত্তি সঞ্চয় করছেন, তাঁদের উপরে কর চাপিয়ে সেই সংগৃহীত রাজস্ব উন্নয়ন ও সামাজিক কাজে ব্যয় করা। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা কথায়, ‘‘এ তো সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোনো। ভারতীয় বামপন্থী এবং পপুলিস্টরাও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারবেন না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি তথা বামপন্থী দলগুলি সব সময়েই এই কর বসানোর পক্ষে সওয়াল করে।’’ গত বছর জুনেও ব্রিটেনে ভোটের মুখে উত্তরাধিকার কর বাড়ানোর পক্ষেই সওয়াল করেছিল লেবার পার্টি।

অতীতে এই করকে বলা হত ‘এস্টেট ডিউটি’। সেটি ভারতে উঠে গেলেও ‘উপহার কর’ আছে। কিন্তু নিজের রক্তের সম্পর্কের মধ্যে উপহার দিলে তাতে কোনও কর দিতে হয় না। এ বার উত্তরাধিকার কর চালু হলে সঙ্গে সঙ্গে এই ‘উপহার কর’ রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যেও প্রয়োগের প্রস্তাব আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই বিষয়ে তিন ধরনের কর চালু আছে। একটি হল ‘এস্টেট কর’ (যা প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ), ‘গিফট ট্যাক্স’ (যা প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ) আর একটি হল উত্তরাধিকার কর।

অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, এই কর বসানো হলেও সেটি শতকরা কত ভাগ বসানো হবে, তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এটি ৩০% করার প্রস্তাব থাকলেও জেটলির তাতে আপত্তি আছে। তিনি আমলাদের বোঝাচ্ছেন, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে শতকরার পরিমাণ অল্প রেখেই যাত্রা শুরু করা উচিত।

তবে এই কর ফিরিয়ে এনে বিজেপি ২০১৯-এর ভোটের আগে ‘আমিরি হটাও’ স্লোগান তুলতে চাইলেও অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, এটি মধ্যবিত্ত সমাজের একটি বড় অংশকেও আক্রমণ করবে। কেননা, ভারতে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ৩০-৩৫ কোটিতে পৌঁছেছে। যে ভাবে মধ্যবিত্তের মাথাপিছু আয় ও সঞ্চয় বেড়েছে, তাতে সমাজের কোন কোন গোষ্ঠীর উপর শতকরা কত ভাগ সম্পত্তি কর চাপানো হবে, তার ‘ফ্লোরিং’ ও ‘স্ল্যাব’— দু’টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, উন্নত দেশে এই কর বসানো অর্থহীন। কারণ, দেখা গিয়েছে এই কর বসিয়েও কিন্তু ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমেনি। সেটিই ছিল রাজীব গাঁধীর যুক্তি। পি চিদম্বরমের মতো প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী মনে করেন, এই কর বসানো তখনই বাস্তবসম্মত, নাগরিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যখন মজবুত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE