Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জিএসটি-গুজবে নাজেহাল সরকার

দিন পনেরো হল, জিএসটি চালু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বড় কোনও সমস্যার খবর সে ভাবে নেই। তবে যা আছে, তা হল, গুজব। নাওয়া-খাওয়া ভুলে জিএসটি নিয়ে গুজব সামলাতেই ব্যস্ত অর্থ মন্ত্রক ও কর দফতরের অফিসারেরা। এখন তাঁদের প্রধান কাজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যুইটার, ফেসবুক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কোথায় কী গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তার খোঁজ নেওয়া।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

জিএসটি তো নয়! যেন গুজব সামলানোর ট্যাক্স!

দিন পনেরো হল, জিএসটি চালু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বড় কোনও সমস্যার খবর সে ভাবে নেই। তবে যা আছে, তা হল, গুজব। নাওয়া-খাওয়া ভুলে জিএসটি নিয়ে গুজব সামলাতেই ব্যস্ত অর্থ মন্ত্রক ও কর দফতরের অফিসারেরা। এখন তাঁদের প্রধান কাজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যুইটার, ফেসবুক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কোথায় কী গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তার খোঁজ নেওয়া। তার পরে ওই গুজব যে-মিথ্যে, তার পাল্টা প্রচার। রাজস্ব দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ এক অসম যুদ্ধ! এক গুজবের ব্যাখ্যা দিতে না-দিতেই অন্য গুজব হাজির!’’

গুজবেরও রকমভেদ রয়েছে। কিছু নিরীহ। কতকগুলি বিপজ্জনক। ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোরও রসদ মজুত। কিছু গুজব ভুল ধারণা থেকে ছড়াচ্ছে। কয়েকটির পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। কেন্দ্রের মতে, কিছু গুজব থেকে স্পষ্ট, এর মাধ্যমে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

যেমন, ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালুর পরের দিনই গুজব রটে, মন্দিরগুলিকে জিএসটি থেকে ছাড় দিলেও মসজিদ-গির্জায় জিএসটি বসবে। রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়া বলেন, ‘‘জিএসটি-তে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ করা হয়নি। সবাইকেই অনুরোধ করছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সব ভুল তথ্য ছড়াবেন না।’’ এমনকী রেডিও জকিদের সঙ্গেও আঢিয়া বৈঠক করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। উদ্দেশ্য, জিএসটি নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে তাঁদেরও যাতে সামিল করা যায়।

এর পিছনে যে অশান্তি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, তারও প্রমাণ মেলে। দিন দশেকের মাথায় ফের গুজব রটে, মন্দিরের প্রসাদ, অন্নভোগ জিএসটি-র বাইরে। কিন্তু মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার, দরগার লঙ্গর বা খাবার বিলিতে জিএসটি বসবে। ফের বোঝানো হয়, এ সব কিছুই জিএসটি-র বাইরে।

কিছু গুজবের পিছনে অবশ্য কারণ খোঁজা মুশকিল। গত দু’দিন ধরেই যেমন হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ ঘুরছে, এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিলে কোনও জিএসটি নেই। বিল বাড়লে জিএসটি-র হারও বাড়বে। তাই দোকান-বাজারে আলাদা বিল করালে সুবিধা। শপিং মলে বা সুপার মার্কেটে অনেকে সেই আবদারও করেছেন। বাস্তব হল, জিএসটি মোট বিলে বসে না। আলাদা আলাদা পণ্যে বসে।

ক্রেডিট কার্ড সংস্থাগুলিও গুজবে নাকাল। রটানো হয়েছিল, ক্রেডিট কার্ডে বিল মেটালে দু’বার জিএসটি দিতে হবে। আর একটি গুজব সামলাতে রাজস্ব অফিসারদেরই রীতিমতো পড়াশোনা করতে হয়। সেটি হল, পুরনো গয়না বিক্রি করতে গেলে এ বার থেকে আর কেউ কিনবে না। কারণ যে-গয়নার দোকান তা কিনবে, তাকেই জিএসটি মেটাতে হবে। অফিসারেরা আইন খুঁটিয়ে দেখে জানান, এ-ও ভুল।

এ ধরনের রটনার কারণ কী, সে প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্রের কথায়, ‘‘অন্যের ক্ষতি করে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করে আনন্দ পাওয়ার জন্য গুজব ছড়ানো হয়। একে বলে ‘লুক্রেশিয়াস প্লেজার’। রাষ্ট্রনীতিতে গুজব বড় অস্ত্র। হিটলার এই গুজব ছড়িয়েই ফ্রান্স, ব্রিটেনকে ভয় পাইয়ে দিতেন।’’ তাঁর মতে, সরকার নিজেও গুজব ছড়ায়। বিশৃঙ্খলা তৈরি করে নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য।

কংগ্রেসের এক নেতার টিপ্পনি, ‘‘মোদী সরকার আর বিজেপি-র গুজব ছড়ানোয় জুড়ি নেই। এ বার নিজেরাই গুজবের বিপদ টের পাচ্ছে তারা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

GST জিএসটি Central Govenment Rumor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE