Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সেনসেক্স বাড়ল ২৯১, উঠে দাঁড়াল ইউরোপ-আমেরিকা

সুদ কমাল চিন, পতন এড়াল বিশ্ব বাজার

পতনের গ্রাসেই চিনের শেয়ার বাজার। তবে আপাতত তার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি বিশ্ব বাজারে। মঙ্গলবার চিনের প্রাচীর পেরিয়ে তা তেমন কাবু করতে পারেনি বাদবাকি সূচককে। তবে বাজার ছন্দে ফিরেছে বলে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মরিয়া চিনের সুদ ছাঁটাই এবং লগ্নিকারীদের কম দামে ভাল শেয়ার কেনার হাত ধরেই এ দিন কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে ভারত-সহ বিশ্ব বাজার।

নজর ওঠা-পড়ার দিকে। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি: রয়টার্স।

নজর ওঠা-পড়ার দিকে। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০২:৩১
Share: Save:

পতনের গ্রাসেই চিনের শেয়ার বাজার। তবে আপাতত তার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি বিশ্ব বাজারে। মঙ্গলবার চিনের প্রাচীর পেরিয়ে তা তেমন কাবু করতে পারেনি বাদবাকি সূচককে। তবে বাজার ছন্দে ফিরেছে বলে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মরিয়া চিনের সুদ ছাঁটাই এবং লগ্নিকারীদের কম দামে ভাল শেয়ার কেনার হাত ধরেই এ দিন কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে ভারত-সহ বিশ্ব বাজার। ডলারে টাকার দামও বেড়েছে ৫৫ পয়সা।

চিনা বাজারের প্রধান সূচক সাংহাই কম্পোজিট ইন্ডেক্স সোমবার প্রায় ৯% পড়ার পরে এ দিনও কমে যায় ৭.৬%। নেমে যায় ৩ হাজার পয়েন্টের নীচে। চিনা শীর্ষ ব্যাঙ্ক আর দেরি না-করে তখনই ঋণ-আমানতে সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত ন’মাসে এ নিয়ে পাঁচ বার এই পথে হাঁটল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এক বছরের ঋণে সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে ৪.৬%। এক বছরের জমায় তা একই হারে কমে হয়েছে ১.৭৫%। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কের হাতে ঋণ দেওয়ার তহবিল বাড়াতে নগদ জমার অনুপাত কমানো হয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট। বিশেষজ্ঞদের ইঙ্গিত, তা সত্ত্বেও এখনই মন্দার কবল থেকে রেহাই পাবে না চিনা অর্থনীতি। আর, সেটাই উদ্বেগ ছড়াচ্ছে শেয়ার বাজারেও। চিন ছাড়াও জাপানের নিক্কেই এ দিন আরও ৪% বা ৭৩৪ পয়েন্ট পড়েছে। তবে বেড়েছে হংকং, সিঙ্গাপুর, সোলের বাজার।

এ দিন ২৯১ পয়েন্ট বেড়ে যায় সেনসেক্স। গত সাত মাসের হিসেবে একদিনে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টাকা। ফলে দিনের শেষে ৫৫ পয়সা বেড়ে ডলারে তার দাম দাঁড়ায় ৬৬.১০ টাকা। এশীয় বাজারের প্রভাব ও কম দামে শেয়ার কেনার আগ্রহ ছাড়াও এই উত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছে পণ্য-পরিষেবা কর-সহ অন্যান্য বিল পাশ করাতে নতুন করে সংসদের বাদল অধিবেশন ডাকার ব্যাপারে কেন্দ্রের আগ্রহ। এ দিকে, শেয়ার বাজার-সহ ভারতের অর্থনীতির চাকায় আরও গতি আনতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপদেষ্টা কমিটি যে সুদ কমানোর পক্ষে, তা জানানো হয়েছে মঙ্গলবার। সাত জনের মধ্যে কমিটির চার সদস্যই এ মাসে সুদ কমানোর সুপারিশ দিয়েছিলেন। যদিও রাজন সে পথে হাঁটেননি।

ইউরোপের বাজার এ দিন চাঙ্গা ছিল। খোলার পরে বাড়তে থাকে মার্কিন বাজারও।

তবে বাজার কবে এতটা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে এগ্‌জিম ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস মল্লিক বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে অনিশ্চিত শেয়ার বাজার ছেড়ে নিশ্চিত লগ্নির ক্ষেত্রের দিকে ঝোঁকাই স্বাভাবিক। যেমন, সোনা এবং মার্কিন ডলার। ওই দুটি ক্ষেত্রে লগ্নি বাড়ছে। সম্প্রতি সোনা এবং ডলারের দাম বাড়ার এটি প্রধান কারণ।’’ আগামী মাসে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সেটা হলে আমেরিকার বন্ডের বাজার দ্রুত বাড়বে। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমার ধারণা তখন বহু বিনিয়োগকারীই ভারতের বাজার থেকে লগ্নি তুলে নিয়ে আমেরিকায় বন্ডে বিনিয়োগ করবে। ফলে হাল খারাপ হতে পারে শেয়ার বাজারের। তবে বিশ্ব জুড়ে ডামাডোলের মধ্যেও ভারতের অবস্থা তুলনায় ভাল।’’ তাঁর মতে, ভারতের প্রধান সমস্যা, টাকায় ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। এর ফলে যে-সব ভারতীয় সংস্থা বিদেশ থেকে বাণিজ্যিক ঋণ নিয়েছে, তাদের ঋণ শোধের খরচ বাড়ছে। তবে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমায় আমদানি খরচ নেমে আসছে। ফলে ভারতের বিশেষ সুবিধা হবে।

নিজেদের মুদ্রা ইউয়ানের দাম কমানোর পরে চিন কেন কমাল সুদের হার? এ প্রশ্নের উত্তরে ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, ‘‘চিন মুদ্রার দাম কমিয়েছে রফতানি বাড়াতে। কিন্তু রফতানির হাল ফেরাতে শিল্পোৎপাদন বাড়াতে হব। শিল্পে উৎসাহ দিতে মূলধনের খরচ কমানোই সুদ কমানোর উদ্দেশ্য।’’

এ দিন ভারতের বাজার বাড়লেও ভরসা করার কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পরেখ। তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি শেয়ার বাজারে যে-ধস নেমেছে, তার পুরোটাই আন্তর্জাতিক কারণে। ভারতের মূল সমস্যা টাকার দাম কমাকে ঘিরে।’’ তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে কোষাগার থেকে ডলার বাজারে ছাড়া হবে। তা হলে তার দামও কমবে। তাই সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, ভারতের বাজারের ভবিষ্যৎ যে-কোনও দেশের থেকে ভাল।’’

এ প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘ঝুঁকি নিতে চাইলে এখনই ভাল শেয়ার কেনা যায়। তবে ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের উচিত, কিছু দিন দেখে নিয়ে বাজারে আসা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE