Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
খনির অধিকারের প্রশ্নে এখনও ধন্দ

দেউচা নিয়ে আজ মোদী-মমতা কথা

বীরভূম জেলার দেউচা পাঁচামি কয়লা খনির অধিকার কবে থেকে রাজ্যের হাতে আসবে, তা নিয়ে এখনও কাটেনি ধন্দ। এই অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আজ দিল্লিতে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

বীরভূম জেলার দেউচা পাঁচামি কয়লা খনির অধিকার কবে থেকে রাজ্যের হাতে আসবে, তা নিয়ে এখনও কাটেনি ধন্দ। এই অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আজ দিল্লিতে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

খনিটি যে শুধু পশ্চিমবঙ্গকেই দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে কেন্দ্রের আন্তঃ-মন্ত্রক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্চের প্রথমেই। এপ্রিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি গেলে সে কথা তাঁকে জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর মে মাস শেষ হতে চললেও সেই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনও চিঠি আজও যায়নি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ এবং কয়লা মন্ত্রকের কাছে। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক থেকে কোনও চিঠি আসেনি রাজ্য সরকারের কাছেও।

নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্র তার সিদ্ধান্ত জানানোর পরেও তাদের কাছ থেকে কোনও চিঠি না-আসায় কিছু দিন আগেই মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে রাজ্যের পক্ষ থেকে কয়লা মন্ত্রককে চিঠি লেখার কথাও তিনি বলেন। মুখ্যসচিব তাঁর মতো করে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরুও করেছেন। বুধবার দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জানিয়ে দেন, অনেকগুলি বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তার মধ্যে দেউচা পাঁচামি খনিও রয়েছে।

কেন্দ্র দেউচা পাঁচামি খনিটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং সতলুজ জলবিদ্যুৎ নিগমকে কয়লা দেয়। দেউচা থেকে কে কত কয়লা পাবে, তার ভাগও কয়লা মন্ত্রক করে দেয়। সেই মতো রাজ্যগুলি মিলে একটি সংস্থাও তৈরি করে, যার নাম দেওয়া হয় বেঙ্গল বীরভূম কোলফিল্ডস লিমিডেট। কিন্তু দেখা যায়, সংস্থার বৈঠকে কোনও না কোনও পক্ষ অনুপস্থিত থাকে। সহমতের ভিত্তিতে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও সমস্যা হচ্ছিল। ফলে একটা সময়ের পরে খনিটির ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও বুঝতে পারছিল, যৌথ উদ্যোগে দেউচায় কয়লা তোলার পরিকল্পনাটি ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার দেউচা পাঁচামি খনির অধিকার শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়ার দাবি জানায়। রাজ্যের বক্তব্য ছিল, দেউচা যখন পশ্চিমবঙ্গেই তখন রাজ্যকেই তার অধিকার দেওয়া হোক।

রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর কেন্দ্র দেউচা পাঁচামি খনিটি নতুন করে বণ্টনের ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে রাজ্য সরকার আবেদন করে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রস্তাবটি পাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রককে নিয়ে কমিটি গঠন করে প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য পাঠায়। এ বছর ১০ মার্চ ওই কমিটি পশ্চিমবঙ্গকেই খনিটি দেওয়ার ব্যাপারে মত দেয়।’’ কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত কোনও চিঠি রাজ্য পায়নি বলেই ওই কর্তার অভিযোগ।

যদিও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী যখন দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন, তখনই কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেউচা পাঁচামি পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওই খনি থেকে কয়লা তোলার কাজ শুরু হলে কমপক্ষে ১২,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থান হবে এক লক্ষ মানুষের। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও কেন্দ্রের কাছ থেকে কোনও লিখিত উত্তর না-মেলায় রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তারাও চিন্তিত। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ-কর্তারাও দেউচা নিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন, কিন্তু কোনও সদুত্তর তাঁরা পাননি।

দেউচায় ২১০ কোটি ২০ লক্ষ টনের মতো কয়লা মজুত রয়েছে। রাজ্য ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই খনিটি থেকে উত্তোলন শুরু হলে এনটিপিসি-র কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কয়লা দেওয়া হবে। বিষয়টি ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে বলে কাটোয়া প্রকল্পটিও থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ সরকারের।

রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রের আন্তঃ-মন্ত্রক কমিটি তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক ও আমাদের দফতর কিছুই জানতে পারছে না। যে-কারণেই ফের মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। কারণ অনুমতি পেলে আমরা দ্রুত ওই খনি থেকে কয়লা তোলার কাজ শুরু করে দিতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Confusion responsibility Coal mine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE