Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ডেট ফান্ডে নয়া কর ১০ জুলাই থেকে

লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে লক্ষ্য ঝক্কিহীন কর ব্যবস্থা

করের হার কম ও প্রায় একই রেখে তা জমা দেওয়ার সরল ব্যবস্থা। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরত পাওয়ার জন্য এই ঝক্কিহীন কর-ব্যবস্থাকেই অন্যতম হাতিয়ার করতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। শুক্রবার লোকসভায় অর্থ বিল নিয়ে বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় এ কথা স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, “এমন আবহ তৈরি করতে চাই, যাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরে।”

সংসদে জেটলি। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

সংসদে জেটলি। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

করের হার কম ও প্রায় একই রেখে তা জমা দেওয়ার সরল ব্যবস্থা। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরত পাওয়ার জন্য এই ঝক্কিহীন কর-ব্যবস্থাকেই অন্যতম হাতিয়ার করতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

শুক্রবার লোকসভায় অর্থ বিল নিয়ে বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় এ কথা স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, “এমন আবহ তৈরি করতে চাই, যাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরে।” এ বিষয়ে শিল্পমহলকে কিছুটা বার্তা দিয়ে তাঁর ঘোষণা, ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে (ডেট ফান্ড) বাজেটে আনা মূলধনী লাভ করের নয়া প্রস্তাব কার্যকর হবে বাজেটের দিন (১০ জুলাই) থেকেই। আগে (১ এপ্রিল) থেকে নয়।

আমজনতার রোজগারের উপরে যে কেন্দ্র চড়া হারে কর বসানোর পক্ষপাতী নয়, তা-ও স্পষ্ট করেছেন জেটলি। জানিয়েছেন, দেরিতে রিটার্ন ফাইল করার কারণে বিপুল অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয় আয়করদাতাকে। এ বার তাঁদের খানিকটা স্বস্তি দিতে সেই জরিমানা কিছুটা কমানোর ক্ষমতা দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদকে।

ইউপিএ জমানায় ভারতে টাকা ঢালার ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের আস্থা খোয়ানোর অন্যতম কারণ হয়েছিল কর ঘিরে জটিলতা। বিশেষত পুরনো লেনদেনে কর বসানো নিয়ে ভোডাফোন-সহ কিছু বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে কেন্দ্রের লড়াই গড়ায় আদালত চত্ত্বরে। ধাক্কা খায় লগ্নির গন্তব্য হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তি। তাই গোড়া থেকেই এ নিয়ে লগ্নিকারীদের আশঙ্কা কাটাতে তৎপর হয়েছে মোদী-সরকার।

কিন্তু নিজের প্রথম বাজেটে বন্ডের মুনাফার উপর চাপানো মূলধনী লাভ করের (ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স) হার ও নিয়ম-নীতিতে কিছু বদল করেন জেটলি। মিউচুয়াল ফান্ডগুলির যা মনঃপুত হয়নি। তার উপর আবার প্রস্তাব ছিল, ওই নয়া কর-ব্যবস্থা কার্যকর হবে আর্থিক বছরের প্রথম দিন (১ এপ্রিল) থেকে। তার পরই ওই কর ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে সেবির কাছে আর্জি জানায় দেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির সংগঠন অ্যামফি। বিশেষত নতুন কর ব্যবস্থা যেন কোনও ভাবেই বাজেটের আগের পুরনো কোনও সময় (রেট্রসপেক্টিভ) থেকে কার্যকর না হয়, তা নিশ্চিত করতে আবেদন জানায় তারা। ফলে এ দিন জেটলির আশ্বাসে কিছুটা হলেও রেহাই পেয়েছে তারা। তবে একই সঙ্গে জানিয়েছে, এই স্বস্তি নেহাতই আংশিক।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করছেন, এ দিন এই ঘোষণায় আসলে বৃহত্তর বার্তা দিতে চেয়েছেন জেটলি। মোদী-সরকার জানে, বৃদ্ধির গতি ঢিমে হওয়ায় কর আদায় বাড়িয়ে ঘাটতিতে রাশ টানতে চেয়েছিল ইউপিএ সরকার। কিন্তু তাতে কাজের কাজ হয়নি। কেন্দ্রের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার মামলায় এখন আটকে রয়েছে অন্তত চার লক্ষ কোটি টাকার কর আদায়ের দাবি। ধাক্কা খেয়েছে ভারতের ভাবমূর্তিও। যে কারণে মোদী-সরকার প্রথম থেকেই বলছে, তাদের লক্ষ্য বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরানো। যাতে সংস্থা ও সাধারণ মানুষের রোজগার বাড়ে। তা হলে আপনিই বাড়বে কর আদায়। রাশ টানা সম্ভব হবে রাজকোষ ঘাটতিতে। তা ছাড়া, অত্যধিক কর বসালে, ভারতের পণ্য-পরিষেবা বিশ্ব বাজারে (বিশেষত চিনের সঙ্গে) দামের লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারবে না বলেও মত কেন্দ্রের। তাই সেই পথে হাঁটতে নারাজ তারা।

অনেকের মতে, জেটলি জানেন, অর্থনীতিকে এত দ্রুত ঘুরিয়ে দাঁড় করানো শক্ত, যাতে এখনই কর আদায় বাড়ে। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও সংস্থার শেয়ার বেচে আয় বাড়ানোয় জোর দিচ্ছেন তিনি। এ দিনও বলেছেন সেল-এর ৫%, আরআইএনএল ও এইচ এ এলের ১০% করে শেয়ার বিক্রির কথা।

এ দিনের বিতর্কে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেন, “আমরা বেঁচে থাকতে হয়তো সুইৎজারল্যান্ড থেকে কালো টাকা ফেরাতে পারব না।” কিছুটা মজার ছলেই জেটলির জবাব, “নিশিকান্তের দীর্ঘায়ু কামনা করি। কিন্তু কালো টাকা ফেরত আনতে আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debt mutual fund arun jaitley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE