নোট বাতিলের ধাক্কায় রোজগার হারিয়েছিলেন ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বহু শ্রমিক। বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে আসার পরে ১০০ দিনের কাজই ছিল তাঁদের ভরসা। আর, এর জেরেই একশো দিনের কাজের মজুরি খাতে খরচ বেড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে এখন বাড়তি তহবিলের জন্য হাত পাততে হয়েছে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের কাছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যকে বস্তা কেনা বাড়াতে বলল কেন্দ্র
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, বাজেটে চলতি অর্থ বছরে একশো দিনের কাজ বা মহাত্মা গাঁধী গ্রামীণ রোজগার সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প (এমএনআরইজিএ)-তে ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪০,৭২৫ কোটি টাকা। যার অর্থ, পাঁচ মাস বাকি থাকতেই ৮৪ শতাংশ অর্থ খরচ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই জেটলির কাছে বাড়তি বরাদ্দের জন্য দরবার করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের যুক্তি, অর্থের কোনও অভাব নেই। এ বছর একশো দিনের কাজে ৪৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা তা মানছেন না। কিসান সভার যুগ্ম-সম্পাদক বিজু কৃষ্ণন বলেন, ‘‘এখানে কাজের চাহিদা অনুযায়ী খরচ করতে হয়। সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী নয়। এই প্রকল্পে শ্রমিকদের প্রাপ্য খাতে গত বছরেরও অনেক টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। কারণ খরচ হয়েছে ৫৮,৫৩১ কোটি টাকা, বরাদ্দ ছিল ৪৮,২০০। ওই ১০,৩৩১ কোটি টাকা মেটাতে হবে এ বছরের বরাদ্দ ৪৮ হাজার কোটি থেকেই। ফলে কার্যত চলতি বছরের জন্য বরাদ্দ পড়ে থাকবে কম টাকাই। এ দিকে নোট বাতিলের ধাক্কায় কাজের চাহিদা বেড়েছে।’’
গত বছরের ৮ নভেম্বর নোট বাতিল হয়। নগদ মজুরি দিতে না-পেরে আবাসন থেকে শুরু করে বেশ কিছু ছোট-মাঝারি সংস্থা ঝাঁপ ফেলতে শুরু করে। তার ধাক্কাতেই গ্রামে ফিরতে শুরু করেন কাজ হারানো শ্রমিকরা। একশো দিনের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। তার জেরেই এই প্রকল্পে আদতে খরচ হয়েছে ৫৮,৫৩১ কোটি টাকা।
বিরোধীদের আরও যুক্তি, গত বছরের মতো চলতি অর্থবর্ষেও একশো দিনের কাজের চাহিদা যথেষ্ট। যার অর্থ, গ্রামের সব শ্রমিক এখনও কাজ ফিরে পাননি। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী এই একশো দিনের কাজকেই ‘গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প’ বলে লোকসভায় দাঁড়িয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। সেই ‘গর্ত খোঁড়ার প্রকল্প’ এখন মানুষের রুটি-রুজির পথ দেখাচ্ছে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার যুক্তি, ‘‘মোদী ১ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এ জন্য দেশের মানুষের কাছে ওঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের চাহিদা মেনে জেটলি কি বাড়তি অর্থ জোগাতে পারবেন? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত বছরও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিল। দেওয়া হয় মাত্র ৯ হাজার কোটি। এ বছর প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দের দাবি এসেছে। কতখানি দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy