আজ বাজার খোলার পর পরই আসতে শুরু করবে গুজরাত ও হিমাচলপ্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনী ফলাফল। বুথ ফেরত সমীক্ষায় ভর করে বাজার উঠতে শুরু করেছে শুক্রবার থেকেই। আর ফলাফল যদি সমীক্ষার সঙ্গে মেলে, তবে সম্ভবত বাজারে এই ঊর্ধ্বচাপ বহাল থাকবে।
৩২ হাজারে নেমে গিয়ে সেনসেক্স ফের ৩৩ হাজারে ফিরে এলেও গত সপ্তাহটা বাজারের জন্য আদৌ সুখকর ছিল না। মঙ্গলবার থেকে শুরু করে বাজারে আসে পরপর কয়েকটি খারাপ খবর। মঙ্গলবারের খবর ছিল: নভেম্বরের খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ছুঁয়েছে ৪.৮৮%, যা গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অক্টোবরের শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ২.২%, যা আগের বছর অক্টোবরে ছিল ৪.২%। বুধবার ছিল চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি বাড়ার প্রতিকূল খবর। অর্থবর্ষের দ্বিতীয় তিন মাস জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের শেষে আগের বার ঘাটতি যেখানে ছিল জাতীয় উৎপাদনের ০.৬%, সেখানে চলতি বছরে তা দ্বিগুণ বেড়ে পৌঁছেছে ১.২ শতাংশে। বৃহস্পতিবারের খবর, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও বেড়ে পৌঁছেছে ৩.৯৩ শতাংশে, যা আগের ৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই সব খবর অবশ্যই বাজারের কাছে শুভ নয়।
কিন্তু একসঙ্গে এতগুলি প্রতিকূল খবর সত্ত্বেও সূচক উঠছে। লগ্নি প্রবাহ এতটাই বেশি যে, বাজার প্রতিকূল অর্থনৈতিক শক্তিগুলিকে গ্রাহ্যের মধ্যেই আনছে না। গত সপ্তাহে পাওয়া একমাত্র ভাল খবর ছিল, নভেম্বরে ৩০ শতাংশ রফতানি বৃদ্ধি। পাশাপাশি আমদানিও বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। বাজার পরপর কয়েকটি নেতিবাচক খবর পাওয়ায় সপ্তাহের শেষ দিকে বিদেশি লগ্নিকারীরা কিন্তু শেয়ার বিক্রি করেছে। এতেও বাজার নামেনি, বরং উঠেছে দেশি সংস্থা এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলি জোরকদমে লগ্নি চালিয়ে যাওয়ায়। দুই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের বুথ ফেরত সমীক্ষা উস্কে দেয় ঊর্ধ্বগতিকে।
তবে ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের লগ্নিকারীদের জন্য ভাল খবর হল, এই হারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সুদ সম্ভবত এখনই আর কমছে না।
ডিসেম্বরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে সুদ কমায়নি এবং ফেব্রুয়ারিতেও সম্ভবত কমাবে না, এই সম্ভাবনায় ভর করে বন্ডের দাম গত কয়েক দিনে অনেকটাই কমেছে। ফলে বেড়ে উঠছে ইল্ড বা তার প্রকৃত আয়। বন্ডের দাম কমায় খানিকটা করে নেমেছে বন্ড ফান্ড তথা ডেট ফান্ডের ন্যাভ। ফলে সাময়িক ভাবে চিন্তায় পড়েছেন সেই সব লগ্নিকারী, যাঁরা কিছুটা উঁচু আয়ের আশায় ব্যাঙ্ক থেকে তহবিল সরিয়েছেন খাঁটি ডেট ফান্ডে।
বাজার নিয়ে আশাবাদীদের ধারণা, বছরের শেষ ছ’মাসে শুধরে যাবে সব কিছু। গুজরাতে জয় পেলে মোদী সরকারের হাত শক্ত হবে সন্দেহ নেই। ফলে চালু থাকবে আর্থিক সংস্কার, যা বিদেশি লগ্নিকারীদের ধরে রাখার জন্য জরুরি। গুজরাতের সঙ্গে বোনাস হিসেবে হিমাচলও সম্ভবত ভারতীয় জনতা পার্টির দখলেই যাবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। এটাও শক্তি বর্ধনকারী টনিকের কাজ করবে।
তবে মনে রাখতে হবে, শুধু টনিকে পাকাপাকি ভাবে স্বাস্থ্য ভাল রাখা যায় না। অর্থাৎ বাজারের বর্তমান চাঙ্গা ভাব ধরে রাখতে হলে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা সব ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চাই। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, বাজার একনাগাড়ে উপরে যেতে পারে না। কারণে-অকারণে মাঝে মধ্যে তা পড়বেও।
বাজারের এই পতনের ব্যাপারে নতুন লগ্নিকারীদের সচেতন করা প্রয়োজন। যাঁরা ব্যাঙ্ক-ডাকঘর থেকে তহবিল সরিয়ে ফান্ড এবং শেয়ার বাজারে লগ্নি করছেন, বাজারের পতনের ব্যাপারে তাঁদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, বিশেষ করে উপযুক্ত কারণ ছাড়াই যখন বাজার অত্যধিক উচ্চতায় উঠে থাকে।
শক্তিশালী বাজারে মোটের উপর ভালই করছে ছোট ও মাঝারি মাপের বিভিন্ন নতুন ইস্যু বা আইপিও। গত শুক্রবার নথিবদ্ধ হয়েছে শ্যালবি হসপিটালস। ইস্যুর দামের তুলনায় সামান্য উপরে নথিবদ্ধ হয়ে শেষ করেছে কিছুটা তলায়। আজ নথিবদ্ধ হবে ফিউচার সাপ্লাই চেন সলিউশন্স। ইস্যুটিতে আবেদন জমা পড়েছে ৭.৫৬ গুণ। কিছু দিনের মধ্যে বাজারে আসতে চলেছে ব্রোকারেজ সংস্থা আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ (আই সেক)। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক তাদের মালিকানা থেকে এই সংস্থার ৬.৪৪ কোটি শেয়ার বাজারে ছাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy