মেহুল চোক্সী
হিরের গয়নার আড়ালে কি একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজি ঠকানোর ব্যবসাও ফেঁদে বসেছিলেন মেহুল চোক্সী! নীরব মোদীর মামার ব্যবসার তদন্তে নেমে তেমনই ইঙ্গিত পাচ্ছেন সিবিআই, ইডি-র আধিকারিকেরা। এই ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) মাধ্যমে তদন্তের আর্জি আজ জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
দিল্লির বৈভব খুরানিয়ার দাবি, ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে চোক্সীকে দেড় কোটি টাকা দিয়েছিলেন। বদলে চোক্সী তিন কোটির গয়না পাঠান। যার দাম ছিল আসলে ৩০ লক্ষ টাকা। আদালতে গিয়ে পুলিশি তদন্তেও স্থগিতাদেশ আদায় করেন চোক্সী। সেই বৈভবই এ বার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন। একই ভাবে বেঙ্গালুরুর হরি প্রসাদও ঠকেছেন। গয়না বেচতেই পারেননি তিনি। আয়কর দফতরের কর্তারা এখন চোক্সীর সংস্থার মোট লগ্নি, ব্যাঙ্ক ঋণ ও লাভের আসল অঙ্ক হিসেব করার চেষ্টা করছেন।
চোক্সীর গয়না ব্যবসা খতিয়ে দেখতে গিয়ে সন্দেহের জাল স্পষ্ট হচ্ছে তদন্তকারীদের সামনে। তাঁরা বলছেন, শোরুম খোলার বদলে গীতাঞ্জলি জেমসের ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি’ খুলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। যেখানে অন্য ব্যবসায়ীরা অস্মি, ডি’ডামাস, নক্ষত্র বা গিলি ব্র্যান্ডের গয়না বেচতেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি খুলতে মেহুলের সংস্থা ৩-২০ কোটি টাকা নিত। তিন বছরের চুক্তিতে শর্ত থাকত, তিনি হিরের গয়না পাঠালে, ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক মুনাফা রেখে তাঁকে মেটাবেন দাম। ব্যবসা খাড়া করতে কর্মীদের প্রশিক্ষণে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিতেন চোক্সী।
সন্দেহের তির
• চোক্সীর গয়নার ব্যবসার আড়ালে কি ফ্র্যাঞ্চাইজি ঠকানোর বন্দোবস্ত?
• নিজের শোরুম খোলার বদলে শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজিতে জোর কেন?
• তাদের পাঠানো হিরের গয়নার মূল্য আসলে ঘোষিত দামের ১০ শতাংশও হত না
• অভিযোগ, দুষ্প্রাপ্য বলে চালানো ওই হিরে আদতে গবেষণাগারে তৈরি। আমদানি করা দামি হিরে অনেক সময়ে বেচেছেন কালো টাকার মালিকদের
• প্রথম বার পাঠানো গয়না বিক্রি হলে, ঝাঁপ বন্ধ হত ফ্র্যাঞ্চাইজির
কিন্তু তদন্তকারীরা বলছেন, বাস্তবে মেহুল যে গয়না পাঠাতেন তা ঘোষিত দামের ১০ শতাংশও হত না। বিষয়টি ধরা পড়লেই মেহুল তার দায় নিতেন না। গয়না যেমন ফেরত নিতেন না, তেমন টাকাও ফেরাতেন না। অনেক ক্ষেত্রে কোনও ভাবে প্রথম বারের পাঠানো গয়না বিক্রি হলে, আর গয়না পাঠানোর পথে হাঁটতেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজির ঝাঁপ বন্ধ হত। আর এ সবের জেরে মামলা হলে মেহুল তাঁর আইনজীবীদের মাঠে নামিয়ে দিতেন।
আরও পড়ুন: তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু ফোর্টিস, রেলিগেয়ারেও
তদন্তকারীদের মতে, আগের ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে পাওয়া টাকায় হিরে আমদানি করতেন চোক্সী। তাতে শুল্ক লাগত না। গুজরাতের সুরাত বা অন্য বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে গয়না তৈরি হত। কর ছাড় নিতেন সেখানেও। কিন্তু দামি হিরে আসলে বেচতেন নগদে, অনেক সময়ে কালো টাকার মালিকদের কাছে। আর ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য সস্তার হিরের গয়না তৈরি করতেন। তা আবার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির দোকানে পাঠাতেন। ২০১৬ সালে মেহুল ঘোষণা করেছিলেন, এ ভাবেই দু’বছরে দেশে-বিদেশে ১০ হাজার ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার কথা।
গীতাঞ্জলির প্রাক্তন এমডি সন্তোষ শ্রীবাস্তবেরও অভিযোগ, মেহুলের দুষ্প্রাপ্য বলে চালানো হিরের গয়নার বেশির ভাগই গবেষণাগারে তৈরি। দাম মেরেকেটে ঘোষিত মূল্যের ১০%। শ্রীবাস্তব ২০১৩-এ পদত্যাগ করেন। দাবি, ৩.১৯ কোটি টাকা বেতন পাননি। আজ গীতাঞ্জলির কোম্পানি সেক্রেটারি, সিএফও ইস্তফা দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy