নোটবন্দি আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর জোড়া ধাক্কায় বিগড়ে যাওয়া ইঞ্জিনে ফের খোঁজ মিলল গতির। অক্টোবর-ডিসেম্বরে বৃদ্ধির হার পৌঁছলো ৭.২ শতাংশে। গত পাঁচ ত্রৈমাসিকে যা সর্বাধিক। মূলত কৃষি, উৎপাদন শিল্প, নির্মাণ ও পরিকাঠামোয় ভাল ফলের দৌলতে চিনকে টপকে ভারতের দখলে এল বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতির তকমাও। তড়িঘড়ি একে অর্থনীতির পুরোদস্তুর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করা হিসেবে দাবি করল দিল্লি। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞেরই প্রশ্ন, তবে কি এখন ৭ শতাংশের কক্ষপথকেই মোক্ষ মানছে মোদী সরকার? ইউপিএ জমানায় তো তাকে নেহাতই জলভাত বলে দাবি করত তারা।
আগের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫%। তার থেকে বেশি তো বটেই, এ বার বৃদ্ধি গত পাঁচ ত্রৈমাসিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তা দেখে কেন্দ্রের দাবি, নোট বাতিল আর জিএসটি চালুর প্রাথমিক ধাক্কাকে পিছনে রেখে পুরোদস্তুর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি। আরও এক পা এগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা কমিটির দাবি, সাহসী সংস্কারের ফল মিলতে শুরু করেছে এ বার। বৃদ্ধির এই হারকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের শিল্পমহলও। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরেও সংশয়ের কাঁটা থেকেই যাচ্ছে।
অনেকে বলছেন, আগের আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.১%। সেখানে এ বার তার পূর্বাভাস ৬.৬%। শুধু তা-ই নয়, এ বার বাজেটের আগে আর্থিক সমীক্ষায় সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৬.৭৫% হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, তবে কি সেই সম্ভাবনা থেকে পিছু হটছে তারা?
আশঙ্কার কাঁটা থেকে যাচ্ছে আরও বেশ কিছু জায়গাতেও। যেমন, পুরো আর্থিক বছরের জন্য রাজকোষ ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা বাঁধা হয়েছিল, জানুয়ারির শেষেই তা ছাপিয়ে যেতে হয়েছে। বছর শেষ হওয়ার দু’মাস আগেই তা দাঁড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ১১৩.৭ শতাংশ। এই ঘাটতি নিয়ে এ দিন সতর্কও করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাও। ফেব্রুয়ারিতে কল-কারখানায় উৎপাদন ফের ধাক্কা খেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে নিক্কেই ইন্ডিয়ার সমীক্ষা। আর এ দিন ক্যালকাটা চেম্বার অব কমার্সের সভায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ৮-৯ শতাংশ বৃদ্ধি ছোঁয়ার থেকেও কঠিন দীর্ঘ মেয়াদে তা ধরে রাখা। তার জন্য কৃষিতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বন্দোবস্তে নজর দিতে হবে সরকারকে।
আশার আলো
• ৭% ছাড়াল বৃদ্ধির হার। অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৭.২% গত পাঁচ ত্রৈমাসিকে সর্বাধিক
• কেন্দ্রের দাবি, নোটবন্দি আর জিএসটি চালুর প্রভাবকে পিছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি
• চিনকে ছাপিয়ে ফের মুঠোয় এল দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতির তকমা
• ফল ভাল পরিকাঠামো শিল্পেও। সেখানে বৃদ্ধি ৬.৭%
• আগের তুলনায় ফল ভাল কৃষি, উৎপাদন শিল্প নির্মাণ ইত্যাদিরও
তৃপ্তির ঢেকুর
• প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের মতে, গতি ফিরছে অর্থনীতির চাকায়। তা দৌড়চ্ছে সঠিক রাস্তাতেও। কেন্দ্র যে সমস্ত সংস্কারের পথে হেঁটেছে, তার ফল মিলতে শুরু করেছে এ বার
• অর্থ মন্ত্রকের দাবি, কল-কারখানায় উৎপাদনের হাল ফেরা। আর সেই সঙ্গে নির্মাণ ও পরিকাঠামো শিল্পে ভাল ফল। পুরোটা মিলিয়ে স্পষ্ট যে, অর্থনীতির পালে হাওয়া ফিরছে। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ সেখানে স্পষ্ট
খটকা যেখানে
• আর্থিক বছর শেষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৬%। আগের বছরের (৭.১%) তুলনায় কম
• আর্থিক সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল, এই অর্থবর্ষে ৬.৭৫% ছুঁতে পারে বৃদ্ধির হার। তার থেকে কি তবে পিছু হটতে বাধ্য হল কেন্দ্র
• ইউপিএ জমানায় একটা বড় সময় জুড়ে বৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশের উপরে। ২০০৪-’০৫ থেকে ২০০৬-’০৭ অর্থবর্ষের মধ্যে তা ঘোরাফেরা করেছে ৮ থেকে ৯.৫ শতাংশে। মোদী সরকারের সেই সাফল্য কোথায়?
• দিল্লির তখ্ত দখলের আগে ৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধিকে জলভাত বলে দাবি করতেন নরেন্দ্র মোদী। মনমোহন সরকারের দিকে তোপ দাগতেন নীতি পঙ্গুত্বের। অথচ এখন ৭ শতাংশকেই ঘুরে দাঁড়ানো বলে মনে করছেন তাঁরা!
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, দিল্লির তখ্ত দখলের আগে ৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধির হার ছোঁয়াকে জলভাত বলে দাবি করতেন নরেন্দ্র মোদী। অথচ এখন মসনদে প্রায় চার বছর কাটানোর পরে ৭% ছুঁতে পারাকেই কৃতিত্ব বলে মনে করছেন তাঁরা!
অনেকের মতে, ক্ষমতায় আসার সময়ে অর্থনীতিকে ভাল অবস্থায় পেয়েছিলেন মোদী। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কম ছিল। সরে গিয়েছিল বিশ্বজোড়া মন্দার মেঘ। সম্ভাবনা ছিল অর্থনীতির মসৃণ ‘টেক অফের’। কিন্তু সেই চালু গাড়ির ইঞ্জিন বিগড়ে দিয়ে এখন ফের তা চালুর কৃতিত্ব নিতে চাইছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy