হাসমুখ আঢিয়া
নোট নাকচের পরে বিপুল অঙ্কের আগাম কর জমা পড়ার কথা বুক বাজিয়ে বলেছিল মোদী সরকার। কর জমায় সাফল্যের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হয়েছিল জিএসটি চালুর ঠিক পরেও। কিন্তু এখন সেই মোদী সরকারই মানছে যে, জিএসটি চালুর প্রাথমিক ধাক্কায় চোট পেয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। কমেছে রাজস্ব আদায়ও। এমনকী তার জেরে রাজকোষে টান পড়ায় পিছিয়ে দিতে হয়েছে রাজ্যগুলিকে করের ভাগ দেওয়ার দিনক্ষণও।
কেন্দ্রের আদায় করা করের ৪২% রাজ্যগুলিকে ভাগ করে দিতে হয়। এতদিন কেন্দ্র প্রতি মাসের ১ তারিখেই তা মিটিয়ে দিত। কিন্তু অগস্টে রাজ্য-গুলিকে চিঠি দিয়ে অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, এখন থেকে তা দেওয়া হবে মাসের ১৫ তারিখে। প্রতিবাদ জানিয়ে জেটলিকে চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আপত্তি জানিয়েছে তেলঙ্গানাও।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রশ্নের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রে এখন যে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট যে, মোদী সরকারের কোষাগারের ছবি আদপে তেমন ভাল নয়। অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ সূত্রের যুক্তি, বাজেটে যা অনুমান করা হয়েছিল, অগস্টে সেই অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়নি। বিশেষত জুলাইয়ে জিএসটি চালুর পরে কর আদায় যথেষ্ট ধাক্কা খেয়েছে। তা ছাড়া, জিএসটি-তে রাজস্ব মিলছে মাসের ২০ তারিখে। বাধ্য হয়ে করের ভাগ দেওয়ার দিনক্ষণ পিছিয়ে দিতে হয়েছে সেই কারণেও।
অমিত মিত্র ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছেন, ১ তারিখের বদলে ১৫-য় করের ভাগ মেলায় সরকারি কাজকর্ম চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। ধার করতে হচ্ছে মাসের শুরুতেই। অনেকে বলছেন, শেষমেশ রাজস্বে টান পড়ায় কেন্দ্র মানতে বাধ্য হল যে, নোটবন্দির পরে তড়িঘড়ি জিএসটি চালু সত্যিই ধাক্কা দিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যকে।
পাল্টা যুক্তি হিসেবে নর্থ ব্লকের রাজস্ব দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজেটের অনুমান অনুযায়ীই রাজ্যগুলিকে করের ভাগ দেওয়া হয়েছে।’’ অগস্ট পর্যন্ত হিসেব দাখিল করে তাঁর দাবি, ওই মাস পর্যন্ত হিসেব ধরলে যা কর আদায় হয়েছে, তার ভাগ হিসেবে রাজ্যগুলির ২,১২,৫৭৯ কোটি টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাজেট ‘প্রতিশ্রুতি’ মেনে ২,৪০,৯১২ কোটিই দেওয়া হয়েছে।
আর জিএসটি-র ধাক্কা নিয়ে কেন্দ্রের সওয়াল, নতুন কর জমানায় পা রাখার পরে প্রথমে ব্যবসায়ীদের খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হচ্ছে। কর জমা, রিটার্ন ফাইলের ধাক্কায় ব্যবসা-বাণিজ্য মার খেয়েছে বলে রাজস্ব আদায় কমেছে। তবে তাদের মতে, এটি স্বল্প মেয়াদের সমস্যা। দীর্ঘ মেয়াদে পরিস্থিতি শোধরাবে।
রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়াও বলেছেন, ‘‘ঠিক সময়ে কাঁচামালে মেটানো কর ফেরত দিতে গিয়ে প্রথম দিকে রাজস্ব আদায় কমেছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা বাড়বে।’’ দীর্ঘ মেয়াদে রাজস্ব আদায় কোথায় পৌঁছবে, তা বোঝার জন্য অন্তত ছ’মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy