লড়াই: ঘরের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে। গুজরাতে মোদী।ছবি: পিটিআই
নরেন্দ্র মোদীর ‘ঘরের উঠোনে’ দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জিএসটি নিয়ে প্রায় নিয়মিত তোপ দাগছেন রাহুল গাঁধী। গুজরাতে ভোট প্রচারে গিয়ে সোমবারও বলেছেন, জিএসটি আসলে ‘গব্বর সিংহ ট্যাক্স’। এ রাজ্যে ব্যালট-পরীক্ষার মুখে নতুন কর জমানা নিয়ে মোদী সরকারের উপরে বিস্তর চটে গুজরাতের ব্যবসায়ীরাও। যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া তড়িঘড়ি জিএসটি চালু নিয়ে ক্ষোভের আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে সারা দেশের ব্যবসায়ী এবং ছোট-মাঝারি শিল্পের মধ্যেই। এই অবস্থায় জিএসটি-ক্ষোভে জল ঢালতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্র। আর এ বিষয়ে তাদের মনোভাব স্পষ্ট কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়ার মন্তব্যেই।
জিএসটি চালুর পরে তা নিয়ে ক্ষোভে সরব হয়েছিলেন সুরাতের বস্ত্র ব্যবসীয়ারা। তখন ধর্মঘট, সারিবদ্ধ বন্ধ দোকান, রাস্তায় বিক্ষোভ, দীর্ঘ মিছিলের ছবি দিনের পর দিন সামনে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। এখন জিএসটি নিয়ে ফের ধর্মঘটে যাওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করছেন তাঁরা।
সুরাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীপাবলিতে অন্যান্য বছর ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। অথচ সুরাতের জিএসটি সংঘর্ষ সমিতির তারাচাঁদ কাসটের দাবি, এ বার হয়েছে তার মাত্র ১৫%-২০%। ব্যবসায়ীরা বিক্রি না-হওয়া পণ্য নিয়ে বসে রয়েছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত, ২৫ অক্টোবর ফের ধর্মঘটের বিষয়টি ঠিক করতে বৈঠকে বসবেন তাঁরা।
অনেকে বলছেন, সেই ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েই ভোট প্রচারে এত বার গুজরাতে এসেও এখনও পর্যন্ত সুরাতে পা রাখেননি মোদী। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, জিএসটি নিয়ে কিছু সুরাহার ঘোষণার পরেই সম্ভবত তা করবেন তিনি।
রবিবার এক সাক্ষাৎকারে আঢিয়ার মন্তব্য প্রকাশিত হয় যে, জিএসটি-র হারে আমূল পরিবর্তন জরুরি। আঢিয়া মোদী ঘনিষ্ঠ। গুজরাত ক্যাডারের অফিসার। প্রশ্ন ওঠে, গুজরাত ভোটকে পাখির চোখ করেই কি তাঁর মাধ্যমে বার্তা দিল কেন্দ্র? হালে এই রাজ্যে ‘সম্মানের ভোট’কে পাখির চোখ করেই চলতি মাসের শুরুতে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে বস্ত্র ব্যবসার বেশ কিছু উপকরণে কর কমানো হয়েছে। এমনকী তা কমেছে ধোকলার মতো গুজরাতি খাবারেও।
আঢিয়ার ওই সাক্ষাৎকার সামনে আসার পরে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন, তবে কি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জিএসটি চালুর চার মাসের মধ্যে তা নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছে কেন্দ্র? নইলে হার আমূল বদলের কথা বলতে হচ্ছে কেন? আর কেনই বা গোড়ায় প্রায় সমস্ত কৃতিত্ব নিজেরা নিয়ে এখন জিএসটি চালুর সিদ্ধান্তে কংগ্রেসকে সামিল দেখানোর চেষ্টা করতে হচ্ছে মোদীকে?
প্রশ্নের মুখে পড়ে এ দিন আঢিয়ার দাবি, সাক্ষাৎকারে তাঁর মন্তব্য সঠিক ভাবে প্রকাশিত হয়নি। তিনি আসলে বলেছিলেন, ‘‘করের হারে কিছু রদবদলের দরকার। যেখানেই দেখা যাবে, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী কিংবা আমজনতার উপরে বোঝা চাপছে, সেখানে করের হার কমালে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।’’
দু’দিন আগে পর্যন্ত এই করকেই ‘গুড অ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স’ আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিষদ কয়েকটি পণ্যে করের হার কমানোয় বলেছেন, তাতে না কি অকাল দীপাবলি শুরু হয়ে গিয়েছে দেশে। অথচ এখন মোদীর নিজের রাজ্যেই ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ উস্কে দিয়ে একে ‘গব্বর সিংহ ট্যাক্স’ আখ্যা দিচ্ছেন রাহুল।
এখানেই নভেম্বরে পরিষদের বৈঠকের আগে, আঢিয়ার বিবৃতির তাৎপর্য দেখছেন রাজনীতিকরা। তাঁদের মতে, মন্ত্রী বা রাজনীতিক না হয়েও আঢিয়া জিএসটি-র হার বদলের কথা বলছেন। কারণ, এত দিন ক্ষুব্ধ গুজরাতি ব্যবসায়ীদের জিএসটি-অভিযোগ শুনেছেন তিনিই। আমদাবাদ-সুরাতে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের সময়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেও তিনিই ছিলেন মোদীর দূত। তাই আঢিয়া মারফত সুরাতকে সুরাহার বার্তা দিয়ে তবেই ওই শহরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পা রাখবেন বলে ধারণা অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy