Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
টাটা স্টিলের ব্রিটিশ ব্যবসা

দর হাঁকতে জল মাপা শুরু গুপ্তের

বৃহস্পতিবারই স্কটল্যান্ডে টাটাদের ধুঁকতে থাকা দু’টি ইস্পাত কারখানা কেনার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ করেছে ওই ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতির সংস্থা। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শনিবার তাঁর দাবি, এ বার ব্রিটেনে টাটাদের বাকি ইস্পাত ব্যবসা কেনার জন্য দর হাঁকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা।

সংবাদ সংস্থা
লন্ডন শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

ব্রিটেনে টাটা স্টিলের ব্যবসা কিনতে দর হাঁকার জন্য এ বার জল মাপতে শুরু করল সঞ্জীব গুপ্তের লিবার্টি হাউস গোষ্ঠী।

বৃহস্পতিবারই স্কটল্যান্ডে টাটাদের ধুঁকতে থাকা দু’টি ইস্পাত কারখানা কেনার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ করেছে ওই ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতির সংস্থা। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শনিবার তাঁর দাবি, এ বার ব্রিটেনে টাটাদের বাকি ইস্পাত ব্যবসা কেনার জন্য দর হাঁকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, টাটাদের ছেড়ে যাওয়া ইস্পাত কারখানার দর কেমন হতে পারে, ব্রিটিশ সরকারের কাছে কী ধরনের সহায়তা মিলতে পারে, ঘাড়ে চাপা দায়ের অঙ্ক কত হবে— এই সমস্ত বিষয়ই এ বার খতিয়ে দেখছে গুপ্তের সংস্থা।

রানির দেশে টাটারা ইস্পাত ব্যবসা বিক্রির কথা বলার পর থেকেই তা কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ৪৪ বছরের গুপ্ত। বিশেষত ওয়েলসের পোর্ট ট্যালবট কারখানা। যেখানে কর্মী সংখ্যা অন্তত চার হাজার। ওই উৎপাদন কেন্দ্র হাতে নিতে অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু শর্তও রেখেছেন তিনি। যেমন, বদলানোর কথা বলেছেন তার ব্লাস্ট ফার্নেস। কিন্তু ডেভিড ক্যামেরনের সরকার আবার চায়, একটি-দু’টি কারখানা আলাদা করে কেনার বদলে বরং ব্রিটেনে টাটা স্টিলের পুরো ব্যবসাই এক সঙ্গে ঝুলিতে পুরুক কোনও সংস্থা। চেষ্টা করুক সামগ্রিক ভাবে তাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে। সে কথা মাথায় রেখেও লিবার্টি হাউসকে নতুন করে অঙ্ক কষতে হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা।

ব্রিটেনে টাটা স্টিলের ব্যবসা কেনার কথা গুপ্ত শুধু বলেননি, স্কটল্যান্ডের ল্যানার্কশায়ারে ড্যালজেল ও ক্লাইডেব্রিজে ভারতীয় সংস্থাটির দু’টি কারখানা কিনেওছেন তিনি। বন্দোবস্ত করছেন সেগুলি ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর। সেখানে নতুন করে দেড়শো জন কাজ পাবেন বলে লিবার্টি হাউসের দাবি। স্কটল্যান্ডের মন্ত্রী এ জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন লিবার্টিকে। তেমনই গুপ্ত বলেন, ওই দুই কারখানায় নতুন শুরুর দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা।

তা বলে সংশয়ের মেঘ যে নেই, তা নয়। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ বলছেন, গুপ্তের সংস্থার শেয়ারহোল্ডিং বেশ প্যাঁচালো। ব্যবসার অঙ্ক ৭০০ কোটি ডলার। নিট সম্পদ ১০০ কোটি ডলার। এই পুঁজি নিয়ে টাটাদের রেখে যাওয়া ‘ইস্পাত-সংসার’ সামলানো কতটা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেকে। বিশেষত যেখানে তলানিতে ঠেকা দাম, চড়া উৎপাদন খরচ আর সস্তার চিনা পণ্যের দাপটের কারণে ব্রিটেনের মাটিতে লাভজনক ভাবে ব্যবসা চালানোর পথ খুঁজে পায়নি টাটার মতো নামী বহুজাতিক সংস্থা।

তবে উল্টো যুক্তিও আছে। অনেকে বলছেন, সেই কেমব্রিজে পড়ার সময়েই নিজের পণ্য বেচা-কেনার সংস্থা (লিবার্টি হাউস ট্রেডিং) গড়েন পঞ্জাব থেকে আসা গুপ্ত। কখনও মোটা লোকসান হয়েছে। কিন্তু ঝুঁকি নিতে পিছপা হননি। আদ্যন্ত কাজ-পাগল হিসেবেও সুনাম তাঁর। যিনি মধুচন্দ্রিমা সমেত আজ পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন মোটে দু’বার! ব্রিটেনে সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ইস্পাত ব্যবসার হাল ধরতে এমন কেউ বেমানান নন বলে অনেকের ধারণা।

থাকেন ৪৫ লক্ষ পাউন্ডের প্রাসাদে। ৩০টি দেশে ছড়ানো ব্যবসা। তবু স্ত্রীয়ের ‘অভিযোগ’, বাড়িতে একখানা বাল্বও পাল্টাতে পারেন না গুপ্ত। টাটাদের ছেড়ে যাওয়া সাম্রাজ্যের ভোল বদলানোর আশায় এখন অবশ্য তাঁর দিকেই উৎসুক চোখ ব্রিটেনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TATA TATA steal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE