গত সপ্তাহে বাজার এমন দু’টি খবর পেয়েছিল, যাতে সূচক তরতরিয়ে নেমে আসতে পারত। তা কিন্তু হয়নি। বরং সপ্তাহ শেষে সেনসেক্স নতুন নজির গড়ে থিতু হয় ৩১,২৭৩ পয়েন্টে। নিফ্টি থামে ৯৬৫৩ অঙ্কে। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, এতটা ওঠার পরেও সূচকের ধার আদৌ কমেনি।
বাজার প্রথম প্রতিকূল খবর পায়, যখন জানা যায় পার্টিসিপেটরি নোট বা পি-নোটের মাধ্যমে বিদেশি সংস্থার লগ্নি সংক্রান্ত নিয়মে কড়াকড়ি আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেবি। এতে বিদেশি লগ্নিকারীরা কিছুটা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ভারতের বাজারে পুঁজি ঢালতে বিদেশি লগ্নি সংস্থার কাছে অ্যাকাউন্ট খোলেন তাঁরা। সেই অ্যাকাউন্টকেই বলা হয় পি নোট। সেবির প্রস্তাব, প্রতিটি পি নোটের ক্ষেত্রে ১,০০০ ডলার করে ফি দিতে হবে সংস্থাগুলিকে।
দ্বিতীয় ধাক্কা আসে, যখন জানা যায় ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৭.১ শতাংশে। বছরের শেষ তিন মাসে বৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬.১%, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭.৯%। নভেম্বরের নোট বাতিলকেই এতটা পতনের মূল কারণ হিসেবে ধরে নিচ্ছে বিভিন্ন মহল।
এই সব খবরে কিন্তু বাজার আদৌ মুষড়ে পড়েনি। চলতি বছরে এবং তার পরেও অর্থনীতিতে সুদিন থাকবে এই আশায় দুই সূচক তাদের শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। ভাল বর্ষার আশা, সুদ কমার সম্ভাবনা এবং জিএসটি ১ জুলাই থেকে চালু হয়ে যাবে, এই আশায় লগ্নিকারীদের তেমন ভাবে শেয়ার বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
ভাল খবরের মধ্যে ছিল মে মাসে গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান এবং কিছু সংস্থার আর্থিক ফলাফল। দু’একটি প্রতিকূল খবর সত্ত্বেও যে বাজার তেমন নামছে না, তার প্রধান কারণ, দেশের ভিতরে লগ্নি বৃদ্ধি। নিয়মিত লগ্নি আসছে এসআইপি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং এনপিএসের হাত ধরে। সব ক’টি লগ্নিই বড় মেয়াদের জন্য। ফলে কমছে বিদেশি লগ্নির উপর নির্ভরতা।
৩০ মে শেষ হয়েছে শেষ তিন মাস তথা ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের ফলাফল প্রকাশের পালা। শেষ পর্বে প্রকাশিত হয়েছে একগুচ্ছ ভালমন্দ ফলাফল। বড়দের মধ্যে ফল নিয়ে বাজারে হাজির হয়েছিল কোল ইন্ডিয়া, এনটিপিসি, এল অ্যান্ড টি-র মতো কয়েকটি সংস্থা। ভাল ফল ছাড়াও প্রতি দুটি শেয়ার পিছু একটি করে বোনাস ইস্যুর কথা ঘোষণা করেছে মূলধনী পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা এল অ্যান্ড টি। ১৮৯২টি সংস্থাকে নিয়ে করা এক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে গড়ে সংস্থাগুলির যখন বিক্রি বেড়েছে ৮.৭৮%, তখন নিট লাভ বেড়েছে ৫৯.৮৭%। একটি কঠিন বছরে যা যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল গত সপ্তাহে প্রকাশিত কিছু কোম্পানি ফলাফল।
গাড়ি শিল্পের কাছ থেকে পাওয়া ভাল খবর হল, মে মাসে এই ক্ষেত্রে বিক্রি বেড়েছে ৯%। বর্ষা ভাল হলে এই হার ১০% ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা। তবে জিএসটি চালু হওয়ার মাসে বিক্রি কিছুটা ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মে মাসে যাত্রী গাড়ি বিক্রি পৌঁছে গিয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষে। ১৫% বেড়ে মারুতির বিক্রি পৌঁছেছে ১৩০২৪৮টি গাড়িতে। বিক্রি বেড়েছে স্কুটার বাইকেরও। বিক্রি এতটা বাড়ায় মারুতি (৫ টাকার শেয়ার) এবং হিরো মোটোকর্পের (১২ টাকার শেয়ার) বাজার দর পৌঁছে গিয়েছে যথাক্রমে ৭১৪৪ টাকা এবং ৩৭৩৫ টাকায়।
প্রসঙ্গত, গাড়ি বিক্রি বাড়লে উপকৃত হয় আনুষঙ্গিক বেশ কয়েকটি শিল্প, যেমন ইস্পাত, রং, টায়ার, রবার প্লাস্টিক, বৈদ্যুতিন এবং যন্ত্রাংশ ইত্যাদি। গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় অর্থনীতি ভাল জায়গায় আছে। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল মে মাসে কয়েকটি সংস্থার গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy