Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ষোলো মাসে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি মার্চে

শেষ দু’ওভারে স্কোরবোর্ডে কিছুটা দ্রুত রান তুলল পরিকাঠামো। কিন্তু তাতেও কল-কারখানায় উৎপাদনের চাকা ঘোরার গতি আদৌ কতটা বাড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল বেসরকারি পূর্বাভাস।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

শেষ দু’ওভারে স্কোরবোর্ডে কিছুটা দ্রুত রান তুলল পরিকাঠামো। কিন্তু তাতেও কল-কারখানায় উৎপাদনের চাকা ঘোরার গতি আদৌ কতটা বাড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল বেসরকারি পূর্বাভাস।

সোমবার কেন্দ্রের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষের শেষ মাসে (মার্চ) পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৪%। ২০১৪-র নভেম্বরের (৬.৭%) পর থেকে গত ১৬ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ফেব্রুয়ারিতেও ওই হার ছিল ৫.৭%।

আগের আর্থিক বছরের শেষ দুই মাসে পরিকাঠামোর ব্যাটে রান দেখে আশান্বিত বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, গত অর্থবর্ষে যেন রোলার-কোস্টারে সওয়ার ছিল পরিকাঠামো। কয়েক মাসে এক থেকে চার শতাংশ বৃদ্ধি চোখে পড়েছে, তো বাকি কয়েক মাসে তা তলিয়ে গিয়েছে শূন্যের নীচে। সেই পরিস্থিতিতে পরপর দু’মাসে বৃদ্ধির এই হার তাই কিছুটা হলেও আশাজনক। বিশেষত মার্চে বিদ্যুৎ (১১.৩%), সার (২২.৯%), সিমেন্ট (১১.৯%), তেল শোধনের (১০.৮%) মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে উৎপাদন যে ভাবে লাফিয়ে বেড়েছে, তাতে আগামী দিনে তার হাত ধরে শিল্পের চাকায় গতি ফেরার ইঙ্গিত দেখছেন তাঁরা।

কিন্তু সেই আশায় অনেকটাই জল ঢেলে দিচ্ছে নিক্কেই-এর ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার্স (পিএমআই) সূচক। ভারতে উৎপাদন শিল্পের হাল কেমন, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমীক্ষা করে সে বিষয়ে পূর্বাভাস দেয় ওই সূচক। উপদেষ্টা সংস্থা মার্কিটের করা ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, এপ্রিলে ওই পিএমআই সূচক নেমে গিয়েছে ৫০.৫-এ। মার্চে যা ছিল ৫২.৪। ওই সূচক ৫০-এর উপরে থাকার মানে কল-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি। আর তা তার নীচে নেমে যাওয়ার অর্থ, উৎপাদন শিল্পে সঙ্কোচন। সুতরাং ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, এপ্রিলে কল-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির মুখ দেখেছে ঠিকই, কিন্তু মার্চের তুলনায় তা স্তিমিত।

উৎপাদন শিল্পের ৩৮ শতাংশই আসে আটটি ক্ষেত্র থেকে। কয়লা, অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল শোধন, সার, ইস্পাত, সিমেন্ট এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন। যেগুলি পরিকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। তাই সরকারি পরিসংখ্যানে মার্চে ওই ক্ষেত্র চাঙ্গা হওয়ার পরেও এপ্রিলে পিএমআই সূচকের এমন ম্লান পূর্বাভাস অবাক করেছে অনেককে। মার্কিটের অর্থনীতিবিদ পলিআন্না দ্য লিমার মতে, খরচের বেলুন দ্রুত ফুলতে থাকায় অনেক ক্ষেত্রে মাঝপথে বন্ধ থাকছে প্রকল্পের কাজ। কিছু ক্ষেত্রে কমেছে নতুন বরাতও। যে কারণে আগামী দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ফের এক দফা সুদ কমানোর দাবি জোরালো হতে পারে বলে শিল্পমহলের একাংশের ধারণা।

অনেক বিশেষজ্ঞও বলছেন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি মন্দ নয়। কিন্তু পুরো অর্থবর্ষে (২০১৫-’১৬) তা দাঁড়িয়েছে ২.৭%। ২০১৪-’১৫-র ৪.৫ শতাংশের তুলনায় অনেকটাই কম।

শুধু তা-ই নয়। কোনও মাসে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধির হার মাপা হয় আগের বছরের ঠিক একই সময়ের নিরিখে। ২০১৫ সালের মার্চে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি তো দূর অস্ত্‌, বরং সেখানে উৎপাদন সরাসরি কমে গিয়েছিল ০.৭%। তাঁদের মতে, তার ভিত্তিতে হিসেব হয়েছে বলেই এত তেজী দেখাচ্ছে এই মার্চের সংখ্যাকে।

তা ছাড়া, পরিকাঠামোর চার ক্ষেত্র ভাল করলেও, চিন্তা বাকিগুলিকে নিয়ে। মার্চে কয়লা উৎপাদন বেড়েছে ১.৭%। ২০১৫-র মার্চের (৪.৫%) তুলনায় অনেকটাই নীচে। আর অশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন সরাসরি কমেছে যথাক্রমে ৫.১% এবং ১০.৫%। এই অবস্থায় শিল্প সূচকের কাঁটা কোন দিকে হেলে, তা দেখতে সরকারি পরিসংখ্যানের দিকেই চোখ সকলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Infrastructure Growth March
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE