Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পা রাখতে পারেন ঝুঁকে পড়া বাজারে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হানার হুমকি। উত্তর কোরিয়ার এই আস্ফালনকে একটি সাধারণ ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়নি বিশ্ব বাজার। এর ধাক্কা লেগেছে ভারতীয় বাজারেও।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

অবশেষে বড় মাপের সংশোধনের কবলে পড়েছে শেয়ার বাজার। সংশোধন না-বলে একে ‘ধস’ বললেই হয়ত ঠিক হবে। এটা ঠিক, বাজার যে-জায়গায় উঠেছিল, সেখানে একটা ছোট থেকে মাঝারি সংশোধন হওয়ার কথাই ছিল। তবে বাজারে আতঙ্ক ছড়ানো এবং এতটা পতনের মূল কারণগুলি হল:

প্রথমত, ৩৩১টি সন্দেহভাজন ‘শেল’ অর্থাৎ খোলস কোম্পানি বা ভুয়ো সংস্থার শেয়ার লেনদেনের ব্যাপারে সেবি-র নিষেধাজ্ঞা। এগুলির মধ্যে কিছু নামী সংস্থাও রয়েছে, যেখানে কয়েকটি মিউচুয়াল ফান্ডের ভাল লগ্নি রয়েছে। সেবি-র নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজারে। শুরু হয় পতনের।

দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হানার হুমকি। উত্তর কোরিয়ার এই আস্ফালনকে একটি সাধারণ ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়নি বিশ্ব বাজার। এর ধাক্কা লেগেছে ভারতীয় বাজারেও। বিশ্ব বাজারের অনেক লগ্নিকারীই এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার বাজার থেকে লগ্নি সোনার মতো নিরাপদ জায়গায় সরাতে শুরু করেছেন।

বাজারের এই পতনকে অনেকেই অবশ্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে চাইছেন। উঁচু বাজারে যাঁরা লগ্নি করতে ইতস্তত বোধ করছিলেন, ঝুঁকে পড়া বাজার তাঁদের প্রবেশ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দুই ঘটনায় ভারতের অর্থনীতির কোনও ক্ষতি হয়নি। উত্তেজনা কেটে গেলেই বাজার আবার শক্তি ফিরে পারে এবং ঊর্ধ্বমুখী হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে লগ্নি করা যেতে পারে ইকুইটি ফান্ডেও।

শেষ হতে চলেছে ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশের পালা। একদম অন্তিম লগ্নে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু ফলাফল। আগের মতো এ বারও ফলাফলে ভাল-মন্দের মিশ্রণ লক্ষ করা গিয়েছে। খারাপ ফলের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে জিএসটি চালু করার প্রাথমিক ধাক্কাকে। এই কারণে আগের বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে ফলাফল এক রকম থমকে গিয়েছে দুই ভোগ্যপণ্য সংস্থা এভারেডি এবং ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজের।

অন্য দিকে লাভের খাতায় ফিরেছে টাটা স্টিল। বছরের প্রথম তিন মাসে বৃহত্তম বেসরকারি এই ইস্পাত সংস্থার আয় ৫০০২ কোটি টাকা বেড়ে পৌঁছেছে ৩০,৯৭৩ কোটি টাকায়। গত বছরের একই সময়ে ৩,১৮৩ কোটি টাকা লোকসানের জায়গায় টাটা স্টিল এ বার ঘরে তুলেছে ৯২১ কোটি টাকার নিট মুনাফা। ভাল ফলাফলের প্রভাবে সংস্থার শেয়ার দর আবার ৬০০ টাকা ছাড়িয়ে আরও এগোতে চাইছে। আয় কমলেও, লাভ বেড়েছে টাটা মোটরসের। ফের লাভের মুখ দেখেছে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সহযোগী ব্যাঙ্কগুলি ও মহিলা ব্যাঙ্কের মিশে যাওয়ার সুবাদে নিট মুনাফা বাড়ল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কটি নিট মুনাফা করেছে ২০০৬ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছরের ওই সময়ে যা ছিল ৩৭৪ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছর শুরুর দিন থেকেই পাঁচটি সহযোগী ব্যাঙ্ক এবং ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ককে নিজেদের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক। প্রথম ত্রৈমাসিকে যে মুনাফা হয়েছে, তার মধ্যে ধরা রয়েছে ওই ৬টি ব্যাঙ্কের মুনাফাও। তবে অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা থেকে এখনও রেহাই পায়নি স্টেট ব্যাঙ্ক। প্রথম ত্রৈমাসিকেই মোট ঋণের তুলনায় অনুৎপাদক সম্পদের হার আগের বারের থেকে ২.৫৭% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৯৭%। বেড়েছে ৫০ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল কিছু সংস্থার সংক্ষিপ্ত ফলাফল।

নতুন একটি শেয়ার শ্রেণি তৈরি হতে চলেছে বাজারে। প্রথম বিমা সংস্থা হিসেবে বাজারে আত্মপ্রকাশ করেছিল আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল লাইফ ইনশিওরেন্স। এর বার আমরা এক এক করে বাজারে আসতে দেখব বেশ কয়েকটি জীবনবিমা ও সাধারণ বিমা সংস্থাকে। আইসিআইসিআই লম্বার্ড এবং এসবিআই লাইফ ইনশিওরেন্স এরই মধ্যে প্রথম বার শেয়ার ছাড়ার (আইপিও) লক্ষ্যে প্রস্তাবনাপত্র জমা দিয়েছে সেবি-র দফতরে। পাবলিক ইস্যু আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে এইচডিএফসি লাইফও।

গত সপ্তাহে সেবি-র দফতরে খসড়া প্রস্তাবনাপত্র জমা দিয়েছে সরকারি পুনর্বিমা সংস্থা জেনারেল ইনশিওরেন্স (জিআইসি)। প্রথম বার শেয়ার ছেড়ে জিআইসি বাজার থেকে তুলতে চায় কম-বেশি ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ৬,৪০০ কোটি টাকা)। বাজারে ছাড়া হবে মোট ১২.৪৮ কোটি শেয়ার। এই শেয়ার বিক্রির পরে সংস্থাটিতে সরকারি মালিকানা নেমে আসবে ৮৬ শতাংশে। ২০১৬-’১৭ সালে জিআইসি-র প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৩৩,৭৪১ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা ছিল ৩,১৪১ কোটি। চলতি বছরে জিআইসি এবং অন্য চারটি সাধারণ বিমা সংস্থাকে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র। অর্থাৎ, আগামী এক বছরে আমরা বেশ কয়েকটি বিমা সংস্থাকে বাজারে আসতে দেখব। এর ফলে শেয়ার বাজারে তৈরি হবে নতুন একটি ক্ষেত্র। সমৃদ্ধ হবে দেশের বাজার।

গত সপ্তাহের অন্যান্য খবরের তালিকায় রয়েছে:

• ৫ অগস্ট ছিল ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন জমার শেষ দিন। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, গত বছরের তুলনায় এ বার রিটার্ন জমা পড়েছে ২৫% বেশি। ২.২২ কোটির জায়গায় ২.৭৯ কোটি। নোট বাতিল এবং কালো টাকা উদ্ধারে আয়কর দফতরের উদ্যোগই এত বেশি রিটার্ন দাখিলের কারণ বলে ধারণা কেন্দ্রের।

• জুলাইয়ে রেকর্ড লগ্নি হয়েছে ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে। পরিমাণ ছিল ১২,৭২৭ কোটি টাকা। এক দিকে তেজি বাজার ও অন্য দিকে ব্যাঙ্ক সুদ আরও কমার আশঙ্কা মানুষকে বেশি করে ইকুইটি ফান্ডে লগ্নিতে উদ্বুদ্ধ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। শেয়ার বাজারের কাছেও এটি সুসংবাদ।

• চলতি অর্থবর্ষের প্রথম চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ বেড়েছে ১৯.১০%। অঙ্ক ১.৯০ লক্ষ কোটি টাকা। যা গোটা বছরের প্রস্তাবিত প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহের (৯.৮ লক্ষ কোটি টাকা) ১৯.৫%।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

equity funds Market Invest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE