Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঠকবেন কেন

মোবাইলের না কি দাম কমবে? বড় গাড়ির কি তা বাড়ার কথা? জিএসটি চালুর পর থেকে এ রকম হাজারো আলোচনা আর জল্পনায় কান ভোঁ ভোঁ, মাথায় চরকি পাক। ধোঁয়াশা অন্তত কিছুটা কাটাতে হিসেবের খাতা টেনে বসলেন তিমির বরণ চট্টোপাধ্যায়। আজ প্রথম কিস্তিআসলে আমরা অনেক সময়ই বুঝতে পারছি না যে, নতুন কর জমানায় শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনের জিনিসপত্রের দাম কতখানি কমা বা বাড়া উচিত।

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:২৯
Share: Save:

দেখতে-দেখতে প্রায় পাঁচ মাস হল চালু হয়ে গিয়েছে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি)। শুরু থেকেই যার সঙ্গী হাজারো তরজা, তর্ক-বিতর্ক, ক্ষোভ-বিক্ষোভও। মাঝের এই সময়ে করের হার আর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম-কানুন বারবার বদলেছে কেন্দ্র। কিন্তু আমজনতার ধোঁয়াশা কাটছে না।

আসলে আমরা অনেক সময়ই বুঝতে পারছি না যে, নতুন কর জমানায় শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনের জিনিসপত্রের দাম কতখানি কমা বা বাড়া উচিত। কোনও পণ্য বা পরিষেবার খোঁজে বাজারে পা রাখার সময়ে বিক্রেতা আমাদের কাছে ঠিক দাম নিচ্ছেন কি না, তা নিয়েও পড়ছি ধন্দে। অনেক সময়েই দানা বাঁধছে সন্দেহ, জিএসটি-র ওজর তুলে দোকানি বেশি টাকা নিচ্ছেন না তো?

কিন্তু তা যাচাই করবেন কী ভাবে? কোনও পণ্য বা পরিষেবায় কর কমার সুবিধা পকেটে না-পৌঁছলে নালিশ জানাবেন কোথায়? আটপৌরে গেরস্থের মনে উঁকি মারা এই সব প্রশ্নেরই আজ উত্তর খুঁজব আমরা। যাতে আগামী দিনে দোকানে জিনিস বা পরিষেবা কিনতে গিয়ে চট করে বোকা বনতে না-হয়।

কিন্তু মাথায় রাখুন

বাজারে গিয়ে কেউ দাম একটু বেশি চাইল, আর অমনি আপনি তর্ক জুড়ে দিলেন বা ভাবলেন যে, ঠকছেন— শুরুতেই বলে রাখি, আজকের আলোচনা কিন্তু সে জন্য নয়।

সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে যে, জিএসটি চালুর আগে কোনও পণ্য বা পরিষেবায় যে-কর ছিল, নতুন জমানায় যদি তা তার থেকে কমে গিয়ে থাকে, তবে সেই সুবিধা ক্রেতা বা গ্রাহককে দিতে হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কোনও কিছুর কর বাড়া বা কমা মানে শুধু তার ভিত্তিতেই পণ্য বা পরিষেবাটির দাম উঠবে বা নামবে। কাঁচামালের খরচ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই এর সঙ্গে যুক্ত। তবু যদি একটু স্পষ্ট জানা থাকে যে, করের হার কোথায় উঠেছে বা নেমেছে, তবে পুরনো দামের পাশে ফেলে একটা তুলনা করা কিছুটা সহজ হয়। অন্তত খোঁজা যায় যে করের সুবিধা পকেটে এল কি না। কিংবা দাম বেড়ে থাকলেও, তার পিছনে জিএসটি-র ভূমিকা কতখানি। এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য এই সচেতনতাটুকু তৈরি করা।

এখানে আর একটা কথা বলে রাখি, জিএসটি-র আওতায় থাকা পণ্য-পরিষেবার তালিকা বিশাল। সবক’টি সম্পর্কে কথা বলা এখানে সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রের কয়েকটি করে নিয়ে আড্ডা জমিয়েছি আমরা। যাতে এ নিয়ে আরও প্রশ্ন থাকলে, পরে আলোচনা জারি থাকে।

প্রথমে রান্নাঘর

প্রথমে চোখ রাখব সেই সমস্ত জিনিসপত্রে, যেগুলি না-হলে গৃহস্থের একদিনও চলে না। যেমন—

•• দুধ, ডিম, প্যাকেটবন্দি নয় এমন খাদ্যশস্য (চাল, ডাল, গম ইত্যাদি), আনাজ, নুন, ব্র্যান্ডেড নয় এমন ময়দা, আটা ইত্যাদিতে আগে কর বসত না। জিএসটি জমানাতেও বসেনি। অর্থাৎ জিএসটির হার শূন্য। ফলে শুধু করের জন্য এগুলির দাম হেরফেরের কোনও কারণ নেই।

•• চিনি, চা, কফি (ইনস্ট্যান্ট বাদে), ভোজ্যতেল ইত্যাদিকে ৫% জিএসটি-র আওতায় রাখা হয়েছে। নতুন কর চালুর আগে চিনির উপরে ৮% কর বসত। চা-কফিতে বসত ৭%। ভোজ্যতেলে করের হার আগেও ৫ শতাংশই ছিল। ফলে শুধুমাত্র জিএসটি বসার দিক থেকে বিচার করলে, এদেরও দাম বাড়ার কথা নয়।

•• তেমনই আবার রান্নার গ্যাসে করের হার বেড়েছে। এখন তাতে ৫% কর বসলেও, আগের জমানায় তার হার ছিল তুলনায় কম, ২% থেকে ৪% (রাজ্য বিশেষে এক-এক রকম)।

উমম্‌ আইসক্রিম

ছোট থেকে বড়, আইসক্রিম খেতে আর কে না ভালবাসেন। তাঁদের জন্য সুখবর! আগে এতে কর বসত ২৫%। জিএসটি জমানায় বসছে ১৮%। সুতরাং আইসক্রিমের মোড়কে এক বার চোখ বোলানো যেতেই পারে। জিএসটি চালুর পরে সত্যিই তার দাম কমলো কি?

প্রায়ই লাগে এমন

কাপড় কাচার সাবান থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কারের জিনিস, পাখা থেকে শুরু করে স্যুটকেস, হাতঘড়ি, ভ্যানিটি ব্যাগ, আসবাবপত্র, ম্যাট্রেস। কিংবা অফিসের সামগ্রী থেকে শুরু করে প্রিন্টার, পাম্প, অ্যালুমিনিয়ামের দরজা-জানলা, টাইলস-মার্বেল ইত্যাদি। বাড়ি আর অফিসে হামেশাই ব্যবহারের এই সব জিনিসপত্রে আগে করের হার ছিল গড়ে ৩২%। যার মধ্যে ধরা হত ভ্যাট, সিএসটি, এক্সাইজ ডিউটি, অকট্রয়, এনট্রি ট্যাক্স ইত্যাদি। এখন সেখানে জিএসটি বসছে ১৮%। অর্থাৎ, করের ফারাক অনেকখানি। তাই সেখানে কেউ যদি দাম কমার আশা করেন, তাঁকে কিন্তু কোনও ভাবেই দোষ দেওয়া চলে না।

সাজের বাক্স

একটু শখ করে সাজগোজের জিনিস কেনা হয়তো আপনার পছন্দ। তা হলে জেনে রাখুন, সুগন্ধি থেকে শুরু করে শেভিং ক্রিম, হেনা পাউডার থেকে ময়শ্চারাইজার, টুথপেস্ট কিংবা পাউডার, কাজল, লিপস্টিক, ফেসিয়াল ক্রিম, শ্যাম্পু-সহ প্রায় সমস্ত পণ্যে আগের থেকে কম কর বসছে এখন। কারণ, এগুলি আগের জমানার ৩২% (সব ধরনের কর যোগ করে) করের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এখন ঢুকে পড়েছে ১৮ শতাংশের ছাদের তলায়। তাই শুধু করের হিসেব কষলে দাম কমার আশা জাগে।

বাইরে খাওয়া

জিএসটি চালুর পরে শুরু থেকেই রেস্তরাঁয় কর চাপানো নিয়ে বিস্তর হইচই হয়েছে দেশ জুড়ে। প্রথমে কেন্দ্র এক-এক ধরনের রেস্তরাঁর উপর এক-একটি হারে কর চাপিয়েছিল। তেমনই দিয়েছিল আগে মেটানো কর ফেরত পাওয়ার (ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট) সুবিধা। কিন্তু পরে তারকাখচিত হোটেলের রেস্তরাঁ বাদে বাকি প্রায় সব রেস্তরাঁকেই ৫ শতাংশের জিএসটি পরিসরে বাঁধা হয়েছে। ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের সুবিধা। কিন্তু হিসেব বলছে, তাতেও বাইরে খাওয়ার খরচে কর কমেছে অনেকখানি। আগে যেখানে তা ২৯.৫% পর্যন্ত ছিল, এখন তা নেমে এসেছে ৫ শতাংশে।

অর্থাৎ ধরুন, খাওয়া শেষে আপনার বিল হল ১,০০০ টাকা। আগের জমানায় ওই হাজার টাকার উপর কর চাপত ২৯.৫%। যার মধ্যে ছিল পরিষেবা কর, যুক্তমূল্য কর বা ভ্যাট, প্রমোদ কর। ফলে কর গুনতে হত ২৯৫ টাকা। সেখানে জিএসটি-তে ৫% কর ধরে ওই হাজার টাকার উপর কর মেটাতে হবে ৫০ টাকা।

অনেকে অবশ্য অভিযোগ করছেন, তাতেও আগের থেকে দাম বেশি নিচ্ছে অনেক রেস্তোরাঁ। জিএসটি চাপাচ্ছে পুরনো করশুদ্ধু দামের উপরে। ফলে বিলের বহর বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলতেই পারেন যে, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সবেরই তো দর বাড়ছে হুড়মুড়িয়ে। সে অন্য কথা। কিন্তু হিসেব-নিকেশ নিয়ে কাজ করা মানুষ হিসেবে আমি বলতে পারি, অন্তত বাড়তি করের যুক্তি মেনে রেস্তোরাঁয় বেশি বিল গোনার যুক্তি নেই।

জামা-কাপড়

গুজরাত-সহ সারা দেশে জিএসটি-র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে শরিক হতে দেখা গিয়েছে সারা দেশের বস্ত্র ব্যবসায়ীদের। বিভিন্ন ধরনের জামা-কাপড়ের উপর বিভিন্ন হারে কর বসেছে। সেগুলি তৈরির এক-একটি কাঁচামালেও কর এক-এক রকম। কাউকে আগে হয়তো কর গুনতেই হত না। এখন তাঁরা জিএসটি-র আওতায় পড়ছেন বলে সেই দায় চেপেছে। ফলে নানা ধরনের জামা-কাপড়ে দামে সে সবের প্রভাব পড়তে পারে। আবার একই জামায় বিভিন্ন সুতো ব্যবহার হতে পারে। তাই সেই হিসেব জটিল। এখানে তাই সুবিধার জন্য আমরা শুধু ব্র্যান্ডেড পোশাক নিয়েই আলোচনা করব।

ব্র্যান্ডেড ও তৈরি পোশাকে (রেডিমেড) উৎপাদন শুল্ক ও ভ্যাট যোগ করে করের হার ছিল ১৭.৫%। এখন সেখানে জিএসটি বসে ১২%।

এসি-ফ্রিজ-টিভি

মনে আছে, জিএসটি চালুর আগে টিভি, ফ্রিজের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড়ের ছবি? জিএসটি চালুর পরে সেগুলির দাম লাফিয়ে বাড়বে বলে আঁচ করে কেনার জন্য তখন তুমুল হুড়োহুড়ি। এবং এটা ঠিকও যে, অধিকাংশ বৈদ্যুতিন পণ্যে (এসি, ফ্রিজ ইত্যাদি) করের হার বেড়েছে।

এই সব কিছুতে আগে কর ছিল ২৩% থেকে ২৮%। এখন ২৮%। ফলে শুধু কর ধরলে দাম বাড়ার কথা। বাজার খোয়ানোর আশঙ্কায় অনেক নির্মাতা অবশ্য সে পথে হাঁটেননি। অন্তত উৎসবের মরসুমে।

কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও কর বেড়েছে। এখন জিএসটি ১৮%। আগে করের হার ছিল ১৪%-১৫%।

তবে এই তালিকায় একটু আলাদা এলইডি টিভি। কারণ এর উপর জিএসটি ধার্য হয়েছে ১৮%। আগে ছিল ২৫%। সুতরাং ২০,০০০ টাকা মূল দামের এলইডি টিভি কিনতে আগে লাগত ২৫,০০০ টাকা। সেখানে ওই একই টিভি এখন পাওয়ার কথা ২৩,৬০০ টাকায়। যদি অবশ্য অন্য কোনও কারণে দামের হেরফের না হয়ে থাকে।

মোবাইল ফোন

ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ প্রজন্মের এখন মোবাইল ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না। এ বার তাঁদের খুশি হওয়ার কথা। কারণ, মোবাইলে আগে কর বসত ১৭% থেকে ২৭%। ফলে ১,০০০ টাকা খরচে কর গুনতে হত গড়ে প্রায় ২২০ টাকা (২২% ধরে)। বদলে যাওয়া জমানায় সেটাই নেমে এসেছে ১২০ টাকায়। কারণ মোবাইলে জিএসটি বসছে ১২%।

ফোনের বিল

ফোন সস্তা হওয়ায় যে-টাকাটা বাঁচার সম্ভাবনা, সেটা কিন্তু উসুল করে নিতে পারে মাসে-মাসে তার পিছনে বইতে হওয়া খরচ। কারণ, এই জমানায় তার বিল বাবদ খরচ বাড়ার আশঙ্কা।

ধরুন, মোবাইল রিচার্জে আপনার ১,০০০ টাকা বিল হল। আগে এর উপর পরিষেবা কর বসত ১৫%। যা যোগ করে টাকার অঙ্ক দাঁড়াত প্রায় ১,১৫০ টাকা। কিন্তু এখন ১৫ শতাংশের বদলে এই পরিষেবা বাবদ কর চাপছে ১৮%। ফলে ফোনে আগের মতো একই পরিমাণে পরিষেবা ব্যবহারের জন্য লাগবে ১,১৮০ টাকা। তার মানে আগের তুলনায় দামি হয়েছে ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার। এবং এই বাড়তি খরচ বইতে হচ্ছে প্রতি বার রিচার্জ করার সময়েই।

গয়নাগাঁটি

সোনার গয়নায় আগে ২% কর দিতে হত। গয়না তৈরির মজুরি ছিল পরিষেবা করের আওতার বাইরে। বদল ঘটেছে দু’ক্ষেত্রেই। এখন এক দিকে, গয়নায় জিএসটি বসেছে ৩%। অন্য দিকে, সেগুলি তৈরির মজুরি এসেছে পণ্য-পরিষেবা করের আওতায়। ফলে ২ শতাংশের বদলে এগুলিতে কর বসছে প্রায় ৩.৫%।

এই পরিস্থিতিতে গয়নার দাম বাড়বে কি না, সেটা নির্ভর করছে ব্যবসায়ীদের উপর। বাজার ধরে রাখতে এই মুহূর্তে তাঁরা কর ও মজুরির খরচ উসুলের পথে না-হাঁটলে, ক্রেতাদের সুবিধা হবে। না-হলে গয়নার দাম বাড়লে তাঁদের দোষ দেওয়া যাবে না।

চার-চাকা

ধরুন, একটা এসইউভি কিনছেন ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে। আগে তার উপর দিতে হত গড়ে ২৮% উৎপাদন শুল্ক, ১২.৫% থেকে ১৪.৫% ভ্যাট ইত্যাদি। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০%। যার হাত ধরে ১০ লক্ষ টাকার গাড়ি সাকুল্যে পৌঁছত ১৫ লক্ষ টাকায়। এখন সেই গাড়িই কিনতে জিএসটি দিতে হবে ২৮%। সঙ্গে যোগ হবে সেস। সেস-এর অঙ্ক অবশ্য গাড়ির ইঞ্জিনের মাপের নিরিখে আলাদা।

অর্থাৎ গাড়ি ছোট, মাঝারি নাকি বড়, সেই অনুযায়ী তার পরিমাণ ২৮% জিএসটি-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্থির করবে আপনার মোট করের হিসেব।

তাই কিছু (মূলত ছোট) চার-চাকার দাম কমছে। কিছু ক্ষেত্রে তা বাড়ার দিকে। বিশেষত বড় ও বিলাসবহুল গাড়ির ক্ষেত্রে।

পরিষেবা

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় (ওষুধ বাদে) জিএসটি-র হার শূন্য। আগেও এগুলির উপর কর বসত না। তাই সেগুলিতে খরচ চট করে হেরফের হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ব্যাঙ্কিং, বিমা ইত্যাদি পরিষেবায় করের হার ১৫% থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮%। তাই আগামী বার বিমার প্রিমিয়াম কিছুটা বেশি গুনতে হলে, অবাক হবেন না।

আগামী সপ্তাহে

পরের বার ঠিক এখান থেকেই আলোচনা শুরু করব আমরা। টেনে আনব ফ্ল্যাট-বাড়ি ইত্যাদির প্রসঙ্গও। সেখানে কর কী হল, তা না-জানলে চলবে কী ভাবে?

নালিশ জানাতে
•• কোনও পণ্য বা পরিষেবা কেনার পরে ক্রেতা যদি মনে করেন জিএসটি-র ওজর তুলে তাঁর থেকে বেশি দাম নেওয়া হল, তা হলে অভিযোগ জানাতে পারবেন জাতীয় অ্যান্টি প্রফিটিয়ারিং কর্তৃপক্ষের কাছে।


•• এই কর্তৃপক্ষ নিজের থেকেও অনুসন্ধান করে দেখতে পারে, জিএসটি-র সুবিধাগুলি শেষ পর্যন্ত ঠিক মতো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছেছে কি না।

কী ভাবে

•• অ্যান্টি প্রফিটিয়ারিং কর্তৃপক্ষ সদ্য তৈরি হয়েছে। এখন যোগাযোগ করতে চাইলে, যেতে হবে কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর মাধ্যমে। সারা দেশে তাদের শাখা রয়েছে। নিকটবর্তী শাখায় যোগাযোগ করে অভিযোগ জমা দেওয়া যেতে পারে।

•• যোগাযোগ করতে পারেন ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে।

•• বর্তমানে নজরদারি আরও কড়া করতে সক্রিয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া সহজ করার ব্যবস্থা চলছে।

•• অ্যান্টি প্রফিটিয়ারিংয়ের কাঠামোয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও থাকছে স্ট্যান্ডিং কমিটি, স্ক্রিনিং কমিটি ও ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সেফগার্ডস। এর মধ্যে স্ক্রিনিং কমিটি থাকবে প্রতিটি রাজ্যে। জিএসটি নিয়ে ক্রেতা তাঁর রাজ্যের স্ক্রিনিং কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

•• বিষয়টি সর্বভারতীয় হলে, অভিযোগ জানাতে হবে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে।

খেয়াল রাখুন

শুধু দাম নয়, জিএসটি জমানায় ক্রেতা হিসেবে নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য সচেতন হতে হবে আরও কয়েকটি বিষয়ে। এগুলি হল—

•• সর্বোচ্চ খুচরো দামের (এমআরপি) উপর আর চাপানো যাবে না জিএসটি। বরং তা বলতে হবে আগে কর যোগ করেই। সব জিনিসে অবশ্য এমআরপি লেখা বাধ্যতামূলক নয়।

•• জিএসটি নথিভুক্ত বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য বা পরিষেবা কেনার পরে অবশ্যই রসিদ নিতে হবে।

•• দেখে নিতে হবে, রসিদে বিক্রেতার জিএসটি নম্বর দেওয়া আছে কি না।

•• প্রতিটি পণ্য ও পরিষেবার উপর জিএসটি-র পরিমাণও (রাজ্য জিএসটি, কেন্দ্রীয় জিএসটি বা সম্মিলিত জিএসটি) লেখা থাকতে হবে তাতে।

•• মোদ্দা কথা, পণ্য বা পরিষেবায় কতটা জিএসটি চাপিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, তা যেন স্পষ্ট বুঝতে পারেন ক্রেতা।

দোষ প্রমাণ হলে

•• কর্তৃপক্ষ বিক্রেতাকে দাম কমানোর নির্দেশ দিতে পারেন।

•• বিক্রেতাকে অতিরিক্ত মুনাফা ফেরত দিতে হতে পারে।

•• এমনকী বাতিল হতে পারে তাঁর জিএসটি নথিভুক্তি নম্বর।

লেখক কর বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

পাঠকের প্রশ্ন?

প্রঃ মাসে অন্তত ১,০০০ টাকা করে মিউচুয়াল ফান্ডে জমাতে চাই। প্রাথমিক ভাবে এক বছর লগ্নি করার ইচ্ছে। যাতে সাধারণ সেভিংস ও রেকারিং ডিপোজিটের তুলনায় বেশি আয় করা যায়। অটো ডেবিট করে নিলে কেমন হয়? এতে ঝুঁকি কতটা? রিটার্ন কী রকম?

শান্তনু রায়, হাওড়া

আপনি যদি এক বছরের লক্ষ্য নিয়ে ফান্ডে টাকা জমাতে চান, তা হলে আমার মনে হয়, স্বল্প মেয়াদি ডেট ফান্ডই ভাল। ডেট ফান্ডের তহবিল বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রে খাটে। টাকা জমানোর সময়টা যদি অন্তত ৫-৭ বছর হতো, তবে বলতাম ভাল দেখে কোনও ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি করতে। যার তহবিল খাটে শেয়ার বাজারে। শেয়ার বাজারে ঝুঁকি বেশি। তবে সেখানে মাত্র এক বছরের জন্য লগ্নি করা ঠিক নয়। একটু দেখেশুনে লম্বা সময়ের জন্য জমালে রিটার্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আপনি যে-সংস্থার ফান্ডে টাকা জমাতে চেয়েছেন, তাদের অনেক ডেট ফান্ডও আছে। কোনও লগ্নি বিশেষজ্ঞ বা ওই সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেই কথা বলে বেছে নিতে পারেন।

তবে ডেট ফান্ডেও ঝুঁকি একেবারে নেই, তা বলা যাবে না। বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও লগ্নিতেই ঝুঁকি থাকে। তার উপর অল্প সময়ের জন্য টাকা রাখলে রিটার্নও খুব বেশি পাবেন না। বরং ভেবেচিন্তে লগ্নির মেয়াদ বাড়াতে পারেন। তাতে অনেকটা বেশি সম্পদ তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকবে। ইকুইটি ফান্ডের ঝুঁকি না-নিতে চাইলে ডেট ফান্ডই কিনুন।

মাসে মাসে ১,০০০ টাকা করে জমাতে চাইছেন, মানে এসআইপি করবেন। সে জন্য প্রথমে প্যান ও আধার দিয়ে কেওয়াইসি করতে হবে। অটো ডেবিট করে নিতে চাইলে এসআইপি-র ফর্মেই প্রতি মাসে কোন দিন আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেবে, তা উল্লেখ করে দিতে হবে। এতে সুবিধা হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডে সুদ বলে কিছু পাওয়া যায় না। ডেট ফান্ড যে-সব ঋণপত্রে টাকা খাটায় সেগুলিতে সুদ থাকে। সেই আয় দিয়েই ফান্ডের তহবিল বাড়তে থাকে। তহবিল যত বেশি বাড়বে, আপনার লগ্নির উপর রিটার্ন তত বেশি হবে।

পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে

প্রশ্ন: নতুন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে জমির মালিককে জিএসটি দিতে হয়?

মিহির অধিকারী

জমির মালিক বা ডেভেলপারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনলেই ১২% জিএসটি দিতে হয়। তবে ফ্ল্যাট তৈরি ও পুরসভা থেকে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট পাওয়ার পরে কেনা হলে, সেটির উপরে জিএসটি প্রযোজ্য হবে না। ওই কর দিতে হবে ফ্ল্যাট নির্মীয়মাণ অবস্থায় বুক করা বা কেনা হলে।

পরামর্শদাতা:
তিমির বরণ চট্টোপাধ্যায়

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

market GST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE