পুরনো, অব্যবহৃত জিনিস জমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কলকাতা শহর তালিকার উপরেই ছিল। এ বার সে সব অনলাইনে বিক্রি করার ক্ষেত্রেও দিল্লি, মুম্বইকে পিছনে ফেলে দিল এ শহর। অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী জমিয়ে রাখার সুবাদে ধুলোর আস্তরণে আটকে থাকা টাকা বা ‘ব্রাউন মানি’ বাজারে আনতে তাই এগিয়ে রয়েছে কলকাতা।
সাধারণ ভাবে এ দেশের মানুষের যা অভ্যাস, তাতে ‘বৎসরের আবর্জনা’ দূর করা তো দূর অস্ত্, বরং তা জমিয়ে রাখার প্রবণতাই বেশি। ব্যবহার না-করলেও পুরনো টেলিভিশন, মোবাইল, রান্নাঘরের টুকিটাকি থেকে শুরু করে বই, জামাকাপড়, বাচ্চার খেলার জিনিস, সাইকেল, সবই জমিয়ে রাখার প্রতি ঝোঁক রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূল্যের জিনিস দেশের ১৬টি শহরে আটকে রয়েছে। সম্প্রতি পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচার অনলাইন সংস্থা ওএলএক্স-এর একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য।
তবে এই পুরনো জিনিস জমানোর ক্ষেত্রে অঞ্চল বিশেষে তারতম্য রয়েছে। যেমন, পূর্বাঞ্চলে জমানোর প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে বেশি। আর, তার মধ্যে কলকাতা এগিয়ে। কলকাতা শহরের ৯৮% মানুষ পুরনো জিনিস জমিয়ে রাখেন। অবশ্য শুধু জমানোর ক্ষেত্রে নয়, কলকাতার বাসিন্দারা এ বার অনলাইনে বিক্রির ক্ষেত্রেও পিছনে ফেলে দিতে পেরেছেন দিল্লি মুম্বই বা চেন্নাইকে। কলকাতাবাসীর ৮৫ শতাংশই পুরনো জিনিস বিক্রি করছেন। এ বছরের সমীক্ষায় এই নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কার্যত পুরনো জিনিস বিক্রি করার নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে কলকাতায়। ওএলএক্স ইন্ডিয়ার প্রধান অমরজিৎ সিংহ বাত্রার দাবি, অনলাইন বাজার নাগালে চলে আসার কারণে মানসিকতারও পরিবর্তন হচ্ছে। মাউসের ক্লিকেই বেচাকেনা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘নেট দুনিয়ায় পুরনো জিনিস কেনা- বেচা সহজ হয়ে উঠছে। তাই মানুষের উৎসাহ বাড়ছে। কলকাতা শহর তারই নজির।’’
এই পুরনো জিনিসপত্রের বাজারে অবশ্য সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বই। মোট কেনাবেচার ১৭% দখল করেছে বই। তবে বই জমানোর ক্ষেত্রে কলকাতা তালিকার শীর্ষে রয়েছে। ৪৯% কলকাতাবাসী বই জমান। আর, বিক্রির ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে লখনউ। দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা, যেখানে ২৯% মানুষ বই বিক্রি করেন। লখনউ শহরে তা ৩১%।
সাধারণ ভাবে ৮৭% বাড়িতে পুরনো জিনিস জমানো হয়। এর মধ্যে অন্তত ৩১% মনে করেন পরে হয়তো তা কোনও কাজে আসবে। কিন্তু আদতে তা হয় না। কারণ মানুষের পছন্দ বদলে যায়। বিশেষত, বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে নতুন সুবিধার টানেই পুরনো জিনিস বাতিলের দলে পড়ে যায়। ১৮ শতাংশের অবশ্য দাবি, পুরনো জিনিসের প্রতি মায়ার কারণেই তা জমিয়ে রাখা হয়।
নিত্যনতুন পণ্য বাজারে আসছে। সেগুলির জোরালো বিপণন কৌশল টানছে ক্রেতাও। তা হলে যে-জিনিস বাতিলের তালিকায়, তার ক্রেতা আসবে কোথা থেকে ?
সমীক্ষার দাবি, দাম অবশ্যই পুরনো জিনিসের চাহিদার প্রধান কারণ। নতুন জিনিসের তুলনায় পুরনো জিনিসের দাম কম পড়ে। আর ৫০% মানুষের দাবি, তাঁদের যা প্রয়োজন, তা পুরনো জিনিসে পাওয়া গেলে সমস্যা নেই। ফলে যে-মিক্সার গ্রাইন্ডারে ধুলো জমছিল, সেই একই জিনিস অন্য একটি বাড়ির রান্নাঘরে দিব্যি শোভা পেতে পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy