Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সমস্যা মেনেও এগোনোর ডাক

এমনকী ডাকা হয়েছে ধর্মঘটও। এই অবস্থায় রক্ষণের ঢাল যেন আগাম কিছুটা তৈরিই করে রাখলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মেনে নিলেন যে, এ ক্ষেত্রে শুরুর দিকে কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তা বলে এই সংস্কারের পথে হাঁটতে যে আর দেরি করা সম্ভব নয়, সে কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি।

আশ্বাস: শুরুতে সমস্যা হতে পারে। তা বলে আর দেরি নয়। বার্তা অরুণ জেটলির। —ফাইল চিত্র।

আশ্বাস: শুরুতে সমস্যা হতে পারে। তা বলে আর দেরি নয়। বার্তা অরুণ জেটলির। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৩:১৬
Share: Save:

সংসদের সেন্ট্রাল হলে মধ্যরাতে জিএসটি চালুর অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা ভাবনাচিন্তা করছে কংগ্রেস। সরকারের রক্তচাপ বাড়িয়ে জিএসটি বিরোধিতায় সরব হচ্ছে কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন। এমনকী ডাকা হয়েছে ধর্মঘটও। এই অবস্থায় রক্ষণের ঢাল যেন আগাম কিছুটা তৈরিই করে রাখলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মেনে নিলেন যে, এ ক্ষেত্রে শুরুর দিকে কিছু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তা বলে এই সংস্কারের পথে হাঁটতে যে আর দেরি করা সম্ভব নয়, সে কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি।

মঙ্গলবার দিল্লিতে এবিপি নিউজের জিএসটি-সম্মেলনে জেটলি বলেন, ‘‘সাত বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এমপাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে বোঝান, কেন জিএসটিতে রাজি হওয়া উচিত। অথচ ৭ বছর পরে এখনও তাঁর দলের নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলছেন, এত তাড়াহুড়ো কীসের!’’ তাঁর মতে, জেশ জুড়ে এত বড় কর্মযজ্ঞে শুরুর দিকে কিছু সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য জিএসটি চালুর দিন পিছিয়ে দেওয়া অর্থহীন।

আরও পড়ুন: এআই বেচতে প্রাথমিক সায় শীঘ্রই

অবশ্য জিএসটি নিয়ে অবস্থান কংগ্রেস ও সিপিএমকে কিছুটা এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ দিন নবান্নে সাংবাদিকদের সামনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘বস্ত্র ব্যবসায়ীরা জিএসটি-র বিরুদ্ধে তিন দিন ধর্মঘট ডেকেছেন। আমরা গোড়া পুরোপুরি তৈরি না-হয়ে জিএসটি চালু না-করার কথা বলেছিলাম। এখন বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেকে এখনও নতুন কর-জমানার জন্য তৈরি নন। সেই কারণে জিএসটি চালুর দিন পিছোতে রাজ্য ফের চিঠি দেবে বলেও দাবি করেছেন তিনি।


চিন্তিত: এখনও তৈরি নয় ছোট-মাঝারি ব্যবসা। পারলে পিছোন। নবান্নে অমিত মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।

সারা দেশে ব্যবসায়ী, বিশেষত ছোট ব্যবসায়ীদের অনেকে এখনও জিএসটি নিয়ে অথৈ জলে। নতুন ব্যবস্থার নথিভুক্তি, রিটার্ন ফাইল নিয়ে তাঁদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তাঁদের সেই সমস্যা ও ক্ষোভ আঁচ করে ৩০ জুন সংসদে মধ্যরাতের অনুষ্ঠান বয়কট করা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। অনেকে অবশ্য বলছেন, যেচে মোদীকে সাফল্যের সমস্ত ক্ষীরটুকু খেতে দিতে চান না বিরোধীরা।

ওই অনুষ্ঠানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আমন্ত্রিত। কিন্তু উপস্থিতির নিশ্চয়তা তিনি সরকারকে এখনও দেননি। বুধবার এ নিয়ে বিরোধীদের মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। তার আগে এ দিন জেটলি বলেন, ‘‘জিএসটি-তে তো সব সিদ্ধান্তই ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে। জিএসটি চালুর অনুষ্ঠানে আমরা তার প্রতিফলন চাই। সেখানে রাষ্ট্রপতিও থাকবেন। কাজেই এ নিয়ে রাজনীতি হওয়া উচিত নয়।’’

কৃষক বিক্ষোভের পরে এ বার জিএসটি-র জেরে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের আগুন যাতে না-জ্বলে, তা অবশ্য গোড়া থেকেই নিশ্চিত করতে কোমর বেঁধেছে কেন্দ্র। যেমন, ২ জুলাই ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল জেটলির। কিন্তু আপাতত তা বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জিএসটি চালুর পরে অন্তত জুলাইয়ের প্রথমার্ধে জেটলি-সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের নিজের রাজ্য, শহর, নির্বাচনী এলাকায় যেতে হবে। সমাধান করতে হবে করদাতাদের সমস্যা। জবাব দিতে হবে বিরোধীদের প্রশ্নের।

এ ছাড়া, জিএসটি নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে শিল্পমহল, অর্থনীতি-বিদদের মধ্যেও। এমনিতে এক দেশ-এক বাজার-এক করের প্রতি সমর্থন তাঁদের আছে। কিন্তু যে ভাবে একটির বদলে চার-ছ’রকম করের হার চালু করা হল, তা নিয়ে ক্ষোভও বিস্তর। অনেকের আপত্তি করের হার নিয়ে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কেউ-কেউ। এই সব অভিযোগ অবশ্য এ দিন ফের উড়িয়ে দিয়েছেন জেটলি। শুরুর হোঁচট সামলে এখন বৃহত্তম কর সংস্কারের রথ ছোটানোর স্বপ্নে বুঁদ মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE