Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বছরের শুরুতেই সঞ্চয়ের শপথ নিন

মিঠে রোদ, নতুন গুড়, কেক, পার্টি, পিকনিকের মধ্যেও এই তো সময় সঞ্চয়ের শপথ নেওয়ার। নতুন বছরের শুরুতেই। গুছিয়ে সেই কাজ করার জন্য ২০১৮ সালের স্টার্টিং ব্লকে আপনি তৈরি তো? মনে করালেন অমিতাভ গুহ সরকারআজ আমরা আলোচনা করব সঞ্চয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অর্থকরী ব্যাপারে গোড়াতেই কোন কোন সংকল্প করা উচিত, তা নিয়ে। দেখব, তাতে আমাদের উপকার কোথায়। তবে শুধু শপথ করলে হবে না।

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৫
Share: Save:

নতুন বছর। অনেকের কাছে তার মানে নতুন প্রতিজ্ঞাও। কেউ সকালে জগিং শুরুর শপথ নিয়ে পাড়ার মাঠমুখী, তো কেউ আবার সময় নষ্টে খিল দিতে বারবার মিলিয়ে নিচ্ছেন হাতঘড়ি। ২০১৮ সালের শুরুতে এ বার কিন্তু সময় হয়েছে সঞ্চয়ের জন্য কোমর কষারও। পার্টি, হুল্লোড়, আনন্দ— সব থাকুক। কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতেই নজর নিবদ্ধ থাকুক লক্ষ্মীর ভাঁড়ে। মনে রাখবেন, সারা বছর ভাল ভাবে থাকতে শরীর ঠিক রাখা যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন আর্থিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখাও। নইলে কিন্তু সারা বছরের আনন্দ বিপদে পড়ে মাটি হওয়ার সম্ভাবনা। তাই ব্যাঙ্কে টাকা রাখা থেকে শেয়ারে লগ্নি, কর বাঁচানোর রাস্তা খোঁজা থেকে শুরু করে বিমার খবর— পুরো পরিকল্পনা অন্তত মোটামুটি ভাবে বছরের শুরুতেই সাজিয়ে ফেলা ভাল।

তাই আজ আমরা আলোচনা করব সঞ্চয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অর্থকরী ব্যাপারে গোড়াতেই কোন কোন সংকল্প করা উচিত, তা নিয়ে। দেখব, তাতে আমাদের উপকার কোথায়। তবে শুধু শপথ করলে হবে না। নিষ্ঠার সঙ্গে তা মেনে চলতে হবে।

দেখে নিতে হবে, আগের বছরে করা শপথ তালিকায় কিছু বকেয়া থেকে গিয়েছে কি না। থাকলে তা যুক্ত করতে হবে এ বারের তালিকায়। সেটি সব সময়ে রাখতে হবে চোখের সামনে। যাতে তা বারবার মনে করিয়ে দেয়, কোন সময়ে কোন কাজ করতে হবে। অগ্রাধিকারই বা কীসে। চলুন, তালিকা বানানোয় হাত লাগাই।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট

টাকাকড়ি সংক্রান্ত কাজের বেশির ভাগই সারতে হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। তাই প্রথমেই শপথ নিতে হবে, নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ‘গোছগাছ’ করে রাখার। প্রয়োজনে যেন কাজ আটকে না যায়। এ জন্য যে কাজগুলি করতে হবে, তা হল—

• সব অ্যাকাউন্টে নো ইয়োর কাস্টমার (কেওয়াইসি) সংক্রান্ত কাগজ ঠিকঠাক রয়েছে কি না, দেখে নিন। যদি ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে তা জমা করা না হয়ে থাকে, তা হলে সেই কাজ সেরে ফেলুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

• আমাদের অনেকেরই অভ্যেস রয়েছে সামান্য কিছু টাকা সেভিংসে ফেলে রেখে, সেই পুরনো অ্যাকাউন্ট বন্ধ না করার। একই ঘটনা ঘটে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বাড়ি পাল্টালেও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও লেনদেনই হয় না। সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে এগুলি ইন-অপারেটিভ বা অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টে পরিণত হবে। তখন তার টাকাও আপনি আর পাবেন না। তাই যে সব অ্যাকাউন্ট সচরাচর দরকার হয় না, সেগুলি হয় বন্ধ করে দিন। আর তা না হলে, মাঝেমধ্যে সেখানে টাকা জমা বা তোলার কাজ করতে হবে, যাতে সেগুলি চালু থাকে।

• সেভিংস অ্যাকাউন্টে অকারণে বেশি টাকা ফেলে রাখবেন না। যতটা দরকার ততটা সেখানে রেখে, বাকি টাকা বেশি সুদ বা রিটার্ন মেলে এমন প্রকল্পে সরাতে হবে। এ জন্য বাছতে পারেন লিকুইড ফান্ড। এতে যখন খুশি টাকা তোলার সুবিধা মেলে।

• বেশির ভাগ ব্যাঙ্কেই সেভিংস অ্যাকাউন্টে এখন সুদ মাত্র ৩.৫%। তবে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক এখনও ৫%-৬% সুদ দেয়। যদি চান, তা হলে সেভিংসের টাকার একাংশ বেশি সুদ দেয় এমন কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে রাখতে পারেন। অথবা নিজের ব্যাঙ্কেই ছোট মেয়াদে স্থায়ী আমানত করতে পারেন। এতে ৫%-৬% সুদ পেতে পারবেন। আর লিকুইড ফান্ডের কথা আগেই বলেছি।

• অ্যাকাউন্ট ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে মাঝেমধ্যে বদলাতে হবে নেট ব্যাঙ্কিং, ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড। প্রতি তিন মাসে তা পাল্টাতে পারলে ভাল।

মেয়াদি জমা

ব্যাঙ্ক বা স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমার কথা বেশ কিছু দিন ধরেই বারবার বলছি আমরা। বছর তিনেক আগে স্থায়ী আমানতে যা সুদ ছিল, এখন হার তার থেকে অন্তত ২ থেকে ২.৫ শতাংশ কম। তাই দেখে নিতে হবে—

• কোনও স্থায়ী আমানতের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে কি না। অথবা আগামী দিনে কোন জমার মেয়াদ কবে শেষ হবে। যদি চান স্থায়ী আমানতেই টাকা রাখবেন, তা হলে পুরনো জমার মেয়াদ শেষে নবীকরণ করা না হয়ে থাকলে, অবিলম্বে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

• আর যদি চান একটু বেশি সুদ পেতে, তা হলে দেখুন অন্য কোনও প্রকল্পে টাকা সরানো সম্ভব কি না। যেমন, ভারত সরকারের করযোগ্য বন্ড। প্রকল্পটিতে এত দিন ৮% সুদ মিলত। কিন্তু সেটি বন্ধ করে নতুন প্রকল্প চালুর কথা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। তাতে সুদ অবশ্য ৭.৭৫%।

• এ ছাড়া, বেশি আয় এবং করে ছাড়ের মতো সুবিধা থাকায়, অনেকেই ঝুঁকছেন মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি। যদি ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হন, তা হলে সেই পথও আপনার জন্য খোলা।

কর সাশ্রয়

চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে আর তিন মাস বাকি। কর বাঁচানোর জন্য পুরো লগ্নি এখনও করা না হয়ে থাকলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই কাজ করে ফেলতে হবে। এর সঙ্গেই ছকে নিতে হবে ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষের লগ্নি পরিকল্পনাও। মনে রাখবেন—

• গত বার থেকেই বাজেট ঘোষণার দিন এগিয়ে এসেছে। এ বারও সম্ভবত বাজেট প্রস্তাব জানা হয়ে যাবে আর এক মাসের মধ্যে। সেখানে আয়করের প্রস্তাবে কোনও রদবদল হলে, কর বাঁচানোর লক্ষ্যে সেই অনুযায়ী ছকে ফেলতে হবে পরিকল্পনা।

• পুরনো কোনও কর জমা না হয়ে থাকলে, তা অবিলম্বে মিটিয়ে দিন।

• ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্ন জমা করে না থাকলে, সময় নষ্ট না করে দ্রুত তা করে ফেলুন।

বিমার খোঁজখবর

কোনও না কোনও বিমা আমাদের প্রায় সবারই আছে। বছরের শুরুতে চোখ থাক সেই নথির দিকে। কারণ—

• আপনার হয়তো খেয়ালই নেই, অথচ প্রিমিয়াম জমার দিন পেরিয়ে গিয়েছে। মনে রাখবেন, জীবন বিমার ক্ষেত্রে দেরি হলেও, তা জমা দিয়ে সেটি চালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিমার টাকা ঠিক সময়ে না দিলে পুরো বিমাই বাতিল হয়ে যাবে। নো-ক্লেম বোনাসও হাতছাড়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে স্বাস্থ্য বিমা করাতে বেশি প্রিমিয়াম গুনতে হবে। করতে হতে পারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষাও।

• জিএসটি চালু হয়েছে গত জুলাই থেকে। এই নতুন পরোক্ষ কর ব্যবস্থার আওতায় বিমায় করের হার দাঁড়িয়েছে ১৮%। অর্থাৎ, আপনার বিমার প্রিমিয়াম দিতে খরচ হবে আগের চেয়ে বেশি। তাই চেক কাটার সময়ে সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

• দেখুন গাড়ি বিমার প্রিমিয়াম ঠিক মতো দেওয়া রয়েছে কি না। মনে রাখবেন, গাড়িতে থার্ড পার্টি বিমা করানো আইনত বাধ্যতামূলক। তাই ইতিমধ্যে দেরি হয়ে থাকলে অবিলম্বে প্রিমিয়াম জমা দিন।

• জীবন বিমার এনডাওমেন্ট পলিসির প্রিমিয়াম বেশি মনে হলে, টার্ম ইনশিওরেন্সের কথা ভাবুন।

• দেখতে হবে, পুরনো কোনও পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে কি না। যদি হয়, তা হলে সেখানে পাওয়া টাকা আপনার ব্যাঙ্কে জমা হয়েছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। ঠিকানার পরিবর্তন হলে, তা চটজলদি জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে।

মিউচুয়াল ফান্ড

ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে নাগাড়ে সুদ কমতে থাকায় মিউচুয়াল ফান্ডের আকর্ষণ বাড়ছে দ্রুত। আপনার যদি ফান্ডে লগ্নি থেকে থাকে, তা হলে বছরের গোড়াতেই নিজের লগ্নির উপর চোখ বুলিয়ে নিন। মাথায় রাখুন—

• গত এক বছর শেয়ার বাজার বেশ চড়া থাকায়, সব শেয়ার ভিত্তিক (ইকুইটি) এবং ব্যালান্সড ফান্ডের কমবেশি ভাল ফল করার কথা। এই বাজারেও আপনার লগ্নি করা কোনও ফান্ড যদি ভাল না করে থাকে, সে ক্ষেত্রে লগ্নি অন্য ফান্ডে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।

• যাঁরা নতুন বছরে ফান্ডে প্রথম লগ্নির কথা ভাবছেন, তাঁরা এই চড়া বাজারে এক লপ্তে লগ্নি না করে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (এসআইপি) কথা ভাবুন।

• ঝুঁকি কম নিতে চাইলে, ব্যালান্সড ফান্ডে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন।

• বছরের শুরুতেই নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি করে এসআইপি অ্যাকাউন্ট খোলার কথা ভাবতে পারেন। যেমন সন্তানের উচ্চশিক্ষা, গাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা, বিদেশ ভ্রমণ, অবসরের সময়ে হাতে ভাল তহবিল পাওয়া ইত্যাদি। পরে তা কাজে দেবে।

• ফান্ডের মধ্যেই কোনও মেয়াদি প্রকল্পে (যেমন এফএমপি) অতীতে লগ্নি করে থাকলে দেখতে হবে, মেয়াদ শেষে তার টাকা মুনাফা-সহ ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে কি না। না হলে সংশ্লিষ্ট ফান্ড সংস্থাকে চিঠি লিখতে হবে। সুতরাং এ নিয়ে সজাগ থাকুন।

শেয়ারে লগ্নি

বছরের শুরুতে বাজার পড়লেও, সূচক এখন তুঙ্গে। তাই শেয়ারে টাকা ঢালার সময়ে বুঝেশুনে পা ফেলতে হবে শুরু থেকেই। মনে রাখবেন—

• যদি ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারে পা রেখে থাকেন, তা হলে ভাল বাজারের সুযোগ নিয়ে বিক্রি করতে পারেন তুলনায় খারাপ রিটার্ন দেওয়া শেয়ারগুলি।

• যাঁরা প্রথম বাজারে পা রাখতে চান, তাঁরা বছরের গোড়াতেই সেই কাজ সেরে ফেলুন। এ জন্য প্রথমেই খুলতে হবে একটি ডি-ম্যাট ও একটি ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট। বাজারে লগ্নির বিষয়ে জানা না থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

• সূচক যখন উঠছে, তখন তা পড়বেও। সেই সংশোধনের সময়ে কেনা যেতেই পারে ভাল সংস্থার শেয়ার। তবে সংস্থা বাছতে হবে বুঝেশুনে। সব দিক বিচার করে।

• ২০১৭ সালে বাজারে এসেছে একগুচ্ছ নতুন ইস্যু। আগামী দিনে আরও কয়েকটি সংস্থা প্রথম বার শেয়ার ছাড়বে। চাইলে সেগুলিতে আবেদন করতে পারেন।

• ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করে দেখে নিন ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের সব ডিভিডেন্ড অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে কি না।

• হয়তো শেয়ার কিনেছেন অনেক বছর আগে। তখনও চালু হয়নি ডি-ম্যাট। তাই আপনার কাছে রয়েছে কাগুজে শেয়ার। বছরের শুরুতেই সেগুলি ডি-ম্যাটে বদলে নিন।

পরিবারকে জানান

সাধারণত আমাদের পরিবারে মূলত ছেলেরাই টাকা-পয়সা, বিশেষত লগ্নির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। ফলে দেখা যায় এই ব্যাপারে পরিবারের অন্যরা বেশ পিছিয়ে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে ভয়ও পান। কিন্তু ধরুন, পরিবারের কর্তা হঠাৎ অসুস্থ হলেন, অথচ বাকিরা কেউ জানেনই না কোথায় কী টাকা-পয়সা রাখা রয়েছে। তখন সমস্যায় পড়তে হয়। তাই নতুন বছরে কিছুটা আড্ডার ছলে হলেও পরিবারের সকলকে নিয়ে বসুন। বাড়িতে ছোটরা থাকলে, তাদেরও বাদ দেবেন না। সবাইকে দিন লগ্নির প্রথম পাঠ। ব্যাঙ্কিং, বিমা, লগ্নির কিছু বিষয় জানা থাকলেই দেখবেন ভয় কাটছে। তার উপরে অন্যের কথায় যাতে প্রতারিত হতে না হয়, সে জন্যও তৈরি থাকতে হবে সকলকেই।

পড়তি সুদের বাজারে বিকল্প গন্তব্যের সন্ধান এবং যাতে কোথাও লগ্নি করে প্রতারিত হতে না হয়, এই কারণে নিজের জ্ঞানও বাড়িয়ে নেওয়ার শপথ নিন নতুন বছরে।

বয়স্কদের লগ্নি

যাঁরা দীর্ঘ দিন শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা খাটিয়েছেন, তাঁদের বিষয়টি আলাদা। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ প্রবীণ নাগরিকই এই দুই লগ্নি নিয়ে স্বচ্ছন্দ নন। তাঁরা মূলত ভরসা করেন ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের সুদ নির্ভর প্রকল্পগুলিতে। কিন্তু এখন জিনিসপত্রের চড়া দাম আর পড়তি সুদের জমানায় তাঁদের মাথায় হাত।

সাধারণত বছরের শুরুতেই লগ্নি গোছাতে পছন্দ করেন এঁরা। কিন্তু এ বার ১ জানুয়ারি থেকেই ফের কমেছে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ। ফলে কোন দিকে যাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। অনেকে হয়তো ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের বাইরে বেরোনোর কথা ভাবছেন, কিন্তু কষ্টের সঞ্চয় নিয়ে ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন এখন। আমার মতে—

• এই সব প্রবীণ নাগরিক এখনও ভেবে দেখতে পারেন নতুন বছরে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের অন্তর্গত সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমটির কথা। এতে এ বার সুদ কমেনি। এখনও তা মিলছে ৮.৩%। ফলে এখনই লগ্নি করতে পারলে অন্তত মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত ওই হারে সুদ মিলবে। সর্বাধিক রাখা যাবে ১৫ লক্ষ টাকা।

• ভাবতে পারেন কেন্দ্রের আনা ‘বয় বন্দনা’ প্রকল্পের কথাও। মে পর্যন্ত তা চালু থাকবে। সর্বোচ্চ লগ্নি করা যাবে ৭.৫ লক্ষ টাকা। তাতে মাসে ৫,০০০ টাকা করে নিশ্চিত পেনশন মিলবে। মেয়াদ ১১ বছর। সুদ ৮%।

• আগেই বলেছি সরকারি বন্ডের কথা। এটি করযোগ্য। সুদ এখন ৭.৭৫%। মিলবে ৬ মাস অন্তর। ৬০ বছরের কম বয়সীরাও টাকা রাখতে পারেন। জমার ঊর্ধ্বসীমা নেই।

• যদি কিছুটা ঝুঁকি নিতে আপত্তি না থাকে, তা হলে ভাবতে পারেন ব্যালান্সড ফান্ডের কথা। সুবিধা রয়েছে করের দিক থেকেও। তবে অনেক ক্ষেত্রে ব্যালান্সড ফান্ডগুলিতে শেয়ারে লগ্নির পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে ঝুঁকি একেবারে কম নয়। এ জন্য বিশেষ করে প্রবীণরা সাবধানে পা ফেলুন। প্রথমেই দেখে নেবেন, যে ফান্ডে লগ্নি করতে যাচ্ছেন, সেটিতে কত শতাংশ অর্থ শেয়ারে খাটবে।

কাগজ গোছান

বহু মানুষ সঠিক ভাবে নিজের লগ্নি সম্পর্কে তথ্য লিখে না রাখায়, ব্যাঙ্কগুলিতে পড়ে আছে হাজার হাজার কোটি দাবিহীন টাকা। একই ভাবে বিভিন্ন সংস্থায় পড়ে দাবিহীন আমানত ও ডিভিডেন্ড। তাই শুধু লগ্নি করলেই চলবে না। গুছিয়ে একটি ডায়রিতে লিখে রাখতে হবে অর্থ এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত সব তথ্য। এর মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে—

• ব্যাঙ্ক-ডাকঘর সেভিংস অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, বিমা পলিসি, শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড, ডাকঘর স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প ইত্যাদিতে লগ্নির সব তথ্য। অর্থাৎ, অ্যাকাউন্ট নম্বর, কত টাকা রাখছেন, মেয়াদ কত দিনের, কবে ভাঙানো, নমিনি কে ইত্যাদি।

• এ ছাড়াও, ব্যাঙ্ক লকার ও তাতে রাখা মূল্যবান দ্রব্যের তালিকা, বাড়ির দলিলের হদিশ ইত্যাদিও লিখে রাখুন।

• প্রয়োজনে প্রতি তিন মাস অন্তর নতুন তথ্য যোগ করতে হবে এখানে।

• ওই সব লগ্নির সঙ্গে যুক্ত থাকা কাগজপত্রও রাখতে হবে গুছিয়ে। বছরের শুরুতেই যদি সেই কাজটা সেরে ফেলা যায়, তা হলে পরে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় না। এ জন্য প্রতিটি লগ্নির ক্ষেত্রে করতে পারেন আলাদা আলাদা ফাইল। অথবা একটি ফাইলেই তা গুছিয়ে রাখতে পারেন।

• আপনার উত্তরাধিকারী অথবা নিকট আত্মীয়কে জানিয়ে রাখতে হবে এই ডায়েরি এবং ফাইলের বিষয়টি। যাতে আপনার অবর্তমানে তাঁরা ওই সম্পদের হদিশ পান।

• যাঁরা অনেক দিন ধরে ‘উইল’ করবেন ভাবছেন, তাঁরাও আর দেরি না করে নতুন বছরের গোড়াতেই তা করে ফেলুন। অসুবিধা কী?

শপথ ভাঙা নয়

আমরা অনেকেই ভাবি, বছর তো সবে শুরু হল। কিছু দিন যাক। তার পরে না হয় কোমর বেঁধে নামা যাবে। কিন্তু এই করেই বছর গড়িয়ে যায়। কথা রাখা আর হয়ে ওঠে না। তাই আর দেরি নয়। কোমর বাঁধুন। শপথ কিন্তু ভাঙার জন্য নয়।

লেখক: বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

পাঠকের প্রশ্ন?

প্রঃ আমার বয়স ৬১। স্ত্রীর ৫৬। অবসর জীবনের সঞ্চয়ের জন্য ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস) শুরু করতে চাই। কোথায়, কী ভাবে এর ফর্ম পাব?

পি কে প্রধান

এনপিএস-এর একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেটি হল— https://e•ps.•sdl.com। সেখান থেকে ফর্মটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। ওই সাইটে টাকা মেটানো সমেত সব কিছুই চাইলে অনলাইনে সারতে পারবেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের বড় শাখায় গিয়েও সরাসরি এনপিএস অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

প্রঃ আমি প্রবীণ নাগরিক। তাই ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেমে যোগ দিইনি। তবে আমার স্ত্রী ও মেয়ে দিয়েছে। ওরা কেউ এনপিএস করলে করছাড় পেতে পারি?

মৃণাল মুখোপাধ্যায়

এনপিএসে যোগদানের সর্বাধিক বয়স সম্প্রতি ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়েছে। অর্থাৎ আপনার বয়স যদি ৬৫ বছরের মধ্যে হয়, তবে প্রবীণ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ওই প্রকল্পে যোগ দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর স্ত্রী ও মেয়ে যদি এনপিএসে যোগ দিয়ে থাকেন, তবে তাঁরা কর ছাড়ের সুবিধা অবশ্যই পেতে পারেন। কিন্তু সে জন্য আপনি কোনও সুবিধা পাবেন না।

পরামর্শদাতা:
অমিতাভ গুহ সরকার

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

savings Year Planning Income Tax Insurance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE