আগাছায় ভরা। ছাঁটতে হবে লম্বা চা গাছও। ফাইল চিত্র
পাহাড়ে আন্দোলনের জন্য বিপর্যস্ত দার্জিলিঙের চা শিল্পকে আর্থিক সুবিধা দিতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে বাড়তি টাকা চাইল বাণিজ্য মন্ত্রক।
টানা ধর্মঘটের জেরে এ বার মরসুমের সিংহভাগ সময়েই দার্জিলিঙের বাগানগুলিতে কোনও চা তৈরি হয়নি। উপরন্তু বাগানে দীর্ঘ দিন কাজ না হওয়ায় চা গাছগুলির উচ্চতা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। বাগান ভরেছে আগাছায়। পুজোর মুখে বাগান খুললেও সে সব পরিষ্কার করে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে এ বার বাড়তি সময় ও খরচের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল চা শিল্প। তাদের মতে, বাগান চালু থাকলে সাফাইয়ের বোঝা কম থাকে। তাই এখন বাড়তি খরচের বোঝা সামলানো তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এই যুক্তিতে সরকারের তরফ থেকে এককালীন ক্ষতিপূরণের দাবি করেছিল চা শিল্প।
সেই সূত্রে টি বোর্ডের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার সাহায্য চেয়েছিল তারা।
রাজ্যের কাছেও পৃথক সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও তা কার্যত এগোয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, চা শিল্পের দাবি ও টি বোর্ডের সুপারিশ খতিয়ে দেখে নিজেদের মতো করে হিসেব কষেছে তারা নিজেরা। সাধারণত প্রতি বছর দার্জিলিং ও দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ি এলাকার বাগানগুলির গাছ ছেঁটে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বোর্ড তাদের ভর্তুকি দেয়। প্রতি বছর বাগানের মোট চা গাছ এলাকায় ১-২% এলাকার গাছ ছাঁটা হয়। ফলে সেই ভর্তুকির অঙ্ক সামান্যই হয়। কিন্তু এ বার দার্জিলিঙে সব বাগানের সব গাছই ছাঁটতে হবে। এ জন্য অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন। যা বোর্ডের বার্ষিক বরাদ্দ বহির্ভূত। তাই বাড়তি আর্থিক সুবিধা দিতে হলে আলাদা করে এই খরচের অনুমোদন ও তার জন্য অর্থ বরাদ্দ জরুরি। সে সব পর্যালোচনা করে সেই বাড়তি খরচের জন্য অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় দফতরের কাছে গত মাসে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রক।
• ধর্মঘটে ধাক্কা দার্জিলিঙের ৮৭টি বাগানের কাজকর্মে
• দুনিয়া জুড়ে আকর্ষণ ‘ফার্স্ট ফ্লাশ’ ও ‘সেকেন্ড-ফ্লাশ’ চায়ের। যা মোট ব্যবসার ৭০-৭৫%। কিন্তু এ বার মুখ থুবড়ে পড়েছে সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের উৎপাদন
• হারাতে হয়েছে প্রায় পুরো রফতানি বাজারই
• পুজোর মুখে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে অল্প সংখ্যায় কর্মীরা যোগ দেন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি
• কিন্তু বাগান ভরেছে আগাছায়। অস্বাভাবিক উঁচু চা গাছও। যা ছাঁটাই করে স্বাভাবিক
করতে সময় লাগবে
• দার্জিলিং চা শিল্পের হাল ফিরতে বছর কয়েক লেগে যাওয়ার আশঙ্কা
দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল কৌশিক বসু বলেন, ‘‘আশা করব, দ্রুত অনুদানের প্রস্তাবটি গৃহীত ও কার্যকর হবে।’’
প্রসঙ্গত, আর্থিক সুবিধার অঙ্ক নিয়ে চা শিল্পমহল ও টি বোর্ডের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। চা শিল্পের দাবি, উৎপাদন না-হওয়ায় এ বার বাগানগুলির আয় কমেছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। এর উপর বাগান পরিষ্কার করে গাছগুলিকে চা তৈরির উপযুক্ত করতে খরচ হবে প্রায় ৩২০ কোটি। যা অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি। তাই কেন্দ্রের কাছে ৩০০ কোটির সুবিধা চেয়েছে তারা।
কিন্তু বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রভাত বেজবড়ুয়ার দাবি, দার্জিলিঙের বাগানগুলির মালিক অল্প কয়েকটি সংস্থা। দেশের মোট চা শিল্পের মধ্যে তাদের সংখ্যা হাতে গোনা। দার্জিলিঙের চা শিল্পের বিপুল ক্ষতির কথা মানলেও তাঁর দাবি, অল্প কয়েক জনের জন্য ত্রাণ প্রকল্পের বহর বেশি হওয়া উচিত নয়। তাঁর প্রস্তাব ছিল, ওই খরচের এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকার ভার বহন করুক সরকার। বাকিটা দিক বাগানগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy