Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কিস্তি-কথা

বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার পরে ইএমআই গোনা নিয়ে খামোখা টেনশন করে লাভ নেই। বরং মাসিক কিস্তিতে দু’পয়সা বাঁচাতে পারলে চনমনে বোধ করবেন খানিকটা। জানাচ্ছেন প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরীকোনও একটি ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নিয়েছেন। ইএমআই গোনা শুরুও হয়েছে। এর মধ্যেই হঠাৎ একদিন হয়তো আবিষ্কার করলেন আপনার পড়শি অন্য ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় একই টাকা ধার নিয়েছেন কিছুটা কম সুদে।

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০০:৩৮
Share: Save:

ফ্ল্যাট কেনার পরে প্রথম মাসের ইএমআই গুনতে গিয়ে আচমকাই জ্যান্ত হয়ে উঠল ছোটবেলায় মা-বাবার হাতখরচে দিন চালানোর স্মৃতি। মাস জুড়ে তখন দু’পয়সা বাঁচানোর কী প্রাণপণ চেষ্টা। যাতে ছোটখাটো ইচ্ছেগুলো পূরণ করা যায়। টিফিনে প্রবল লোভ জয় করে ডিমের ডেভিলের বদলে ৫ টাকার ঝালমুড়ি। কিংবা বাড়ি থেকে রিক্সার লম্বা রাস্তাটা হেঁটে ফেলে রোজ গোটা আষ্টেক টাকা জমানো। তবে বড়বেলায় এ ভাবে চাহিদায় রাশ টানা সহজ নয়। প্রয়োজন বাড়ে। আর তার খরচও। বিশেষত ফ্ল্যাটের চাবি হাতে আসার পরে মাসিক কিস্তির (ইএমআই) নিয়ে আফসোস সাজে না। কিন্তু চাপ যদি একটু কমানো যায়! পরে জেনেছিলাম, তেমন উপায়ও আছে কিছু। যার কোনওটা ধার শোধের পথ সহজ করে। কোনওটা একটু হলেও কমায় ইএমআইয়ের চাপ। আসুন আজ সেই পথগুলোতেই চোখ রাখি।

বদলে সাশ্রয়

ব্রহ্মপুরের সুমেধা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১৪ লাখ টাকা গৃহঋণ নিয়েছিলেন ২০১৩ সালে। সে সময় বেস রেটের হিসেবে সুদ ছিল বছরে ৯.৫০%। বেস রেট হল সেই হার, যার নীচে কোনও ঋণের সুদ বাঁধতে পারত না ব্যাঙ্ক। তখন সুমেধাকে মাসে ইএমআই দিতে হত ১৩,৭৪৩ টাকা।

এর পরে চালু হল সুদ হিসেবের নতুন ব্যবস্থা, এমসিএলআর। ঋণের তহবিল সংগ্রহের খরচের ভিত্তিতে ওই হার হিসেব করার নতুন পদ্ধতি। সুমেধা ২০১৬ সালে বেস রেটের পরিবর্তে এমসিএলআরের ভিত্তিতে তাঁর গৃহঋণের সুদ ঠিক করার জন্য আবেদন জানান ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে। যার দৌলতে বছরে তাঁর সুদ এক ধাক্কায় নেমে আসে অনেকখানি। দাঁড়ায় ৮.৬৫ শতাংশে। ইএমআইয়ের অঙ্ক কমে হয় ১২,০১৪ টাকা। স্রেফ সুদের হার হিসেবের পথ বদলিয়ে মাসে তাঁর সাশ্রয় হচ্ছে ১,৭২৯ টাকা।

শুধু বেস রেট নয়, তারও আগে ব্যাঙ্কে সুদ ঠিক হত প্রাইম লেন্ডিং রেটের (পিএলআর) ভিত্তিতে। তখন পিএলআরের নির্দিষ্ট শতাংশ উপরে বা নীচে সুদ বাঁধতে পারত ব্যাঙ্ক।

২০১৬ সালের এপ্রিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আনে এমসিএলআর পদ্ধতি। তার পর থেকে আর নতুন ঋণে বেস রেট বা পিএলআরের ভিত্তিতে সুদ ঠিক করে না কোনও ব্যাঙ্ক। শুধু পুরনো ধারগুলির ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা রয়ে গিয়েছে। ফলে আপনার ঋণ পুরনো হলে এবং পুরনো পদ্ধতিতে হিসেব করা হলে, এমসিএলআরে বদলে নিয়ে ইএমআই কিছুটা কমানোর চেষ্টা করতে পারেন।

বাড়তেও পারে

একটা কথা অবশ্য মাথায় রাখবেন, হিসেবের পদ্ধতি বদলাতে এমসিএলআরে গেলে সব সময়ই যে গৃহঋণের সুদ কমবে তা নয়। এটা নির্ভর করবে সেই মুহূর্তে বেস রেট ও এমসিএলআর কত শতাংশে দাঁড়িয়ে তার উপর। ঋণের জন্য তহবিল সংগ্রহের খরচ বাড়লে কিন্তু এমসিএলআরের হিসেবে সুদ বাড়ার কথা। সুতরাং বেস রেট থেকে এমসিএলআরে হিসেব পদ্ধতি বদলে নেওয়ার পরে সুদ বাড়ার আশঙ্কাও থাকে। তখন সেই অনুপাতে বাড়বে ইএমআইয়ের অঙ্কও।

কোন পথে?

আপনার ঋণ পিএলআর বা বেস রেট ভিত্তিক হলে তাকে এমসিএলআরে পরিবর্তনের কাজ ব্যাঙ্ক নিজে থেকে করে দেবে না। এর জন্য খোঁজখবর নিয়ে এগোতে হবে আপনাকেই। চলুন জেনে নিই কী ভাবে—

• প্রথমে আপনার ব্যাঙ্কের বেস রেট বা পিএলআর এবং এমসিএলআর, দু’টির হারই জানতে হবে। এমসিএলআরের ভিত্তিতে হিসেব হলে, গৃহঋণের সুদ বছরে কত দাঁড়াবে, তা বলতে বাধ্য ব্যাঙ্ক। সেটা জানলেই স্পষ্ট হবে মাসিক কিস্তির অঙ্ক। তখন তুলনা করে দেখতে পারবেন বর্তমান কিস্তির সঙ্গে।

• এমসিএলআরের নিরিখে সুদ ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিলে, এর পরে আবেদন করতে হবে ব্যাঙ্কের কাছে।

• বেশির ভাগ ব্যাঙ্কই ওই পরিবর্তনের জন্য এককালীন একটা ফি নিয়ে থাকে। সাধারণত তার অঙ্ক হয় ১,০০০ টাকার আশেপাশে। তার সঙ্গে যুক্ত হবে জিএসটি।

• এমসিএলআরে আসার আবেদন করার সময়েই জানিয়ে দিতে হবে কত দিন অন্তর সুদ পর্যালোচনার সুবিধা নিতে চান আপনি। ছ’মাস অন্তর (ষান্মাষিক), নাকি ১২ মাস (বার্ষিক)। সে ক্ষেত্রে ষাণ্মাসিক সুদ পর্যালোচনার সুযোগ নিলে, এমসিএলআরের হার মাসিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে বদলালেও, আপনার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে ছ’মাস পরেই। তা সুদ কমুক বা বাড়ুক, যা-ই হোক না কেন। একই নিয়ম খাটবে ১২ মাস বা এক বছরের ক্ষেত্রে।

• বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন কোনও সংস্থার কর্মীরা যদি সকলেই নির্দিষ্ট একটি ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নেবেন বলে স্থির করেন, তা হলে সাধারণত ৩ মাস অন্তরও সুদ পর্যালোচনার সুযোগ খুলতে পারে ব্যাঙ্কগুলি।

না বদলালে

এমসিএলআরে না এসে কেউ যদি পিএলআর বা বেস রেটেই থাকেন এবং পরিবর্তনশীল হারে (ফ্লোটিং রেটে) যদি সুদ ঠিক হয়, তা হলে ওই হারের যখন পরিবর্তন হবে, সেই মতো বাড়বে বা কমবে ইএমআই। বেস রেট বা পিএলআর যে দিন পরিবর্তন হয়, সে দিন থেকেই গ্রাহকের ঋণে নতুন সুদ কার্যকর হয়। তার ভিত্তিতে বদলায় মাসিক কিস্তির অঙ্ক।

এমসিএলআর কমানো উচিত না কি বাড়ানো, তা পরীক্ষা করে দেখা হয় প্রতি মাসে। কিন্তু গ্রাহক যদি ৬ বা ১২ মাস অন্তর কিস্তির অঙ্ক বদলের ইচ্ছে আবেদনপত্রে উল্লেখ করে থাকেন, তা হলে মাসিক কিস্তির অঙ্ক পরিবর্তন হবে ওই ৬ বা ১২ মাস বাদে বাদেই।

মেয়াদ বাছুন ভেবেচিন্তে

সাধারণত সব থেকে বেশি হলে ২৫ বছরের জন্য গৃহ-ঋণ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু কোন মেয়াদ আপনার পক্ষে উপযুক্ত হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা অন্তত দশ বার ভাবুন আপনি। কারণ এক দিকে, খামোখা বেশি মেয়াদের ঋণ নিলে অনর্থক বেশি সুদ গুণতে হতে পারে আপনাকে। আবার তেমনই খুব কম মেয়াদে নিতে গেলে, কমে যেতে পারে ঋণের অঙ্ক।

ধাপে ধাপে

ধরুন, আপনি একটা ফ্ল্যাট বুক করতে চান। কিন্তু যা বেতন, তাতে সব খরচখরচা সামলে এগোনোর তেমন সাহস পাচ্ছেন না। পছন্দ হয়ে যাওয়া ফ্ল্যাটটি ওই দামে কেনার সুযোগ পরে না-ও মিলতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে বেতন বাড়ার সুযোগ অনেক। এখানেই একটা ছোট্ট মুশকিল আসান রয়েছে, যার নাম ব্যাঙ্কিং পরিভাষায় স্টেপ আপ। এটি হল, বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাসিক কিস্তি বা ইএমআইয়ের অঙ্ক ঠিক করা।

সাধারণত গৃহঋণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো মেয়াদেই মাসিক কিস্তির অঙ্ক একই থাকে। অথচ চাকরি জীবনের প্রথম দিকে বেতন থাকে তুলনায় অল্প। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে স্টেপ আপ মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে। এই পদ্ধতিতে ঋণ নেওয়ার সময়ে প্রথমে আপনার ইএমআই হবে কম। ফলে বেতন কম হলেও, সুবিধা হবে তা সামাল দিতে। পরে বেতন বাড়লে, তাল মিলিয়ে বাড়াতে পারবেন কিস্তির অঙ্ক। অর্থাৎ, শুরুতে রোজগার কম হওয়ার ঋণের কিস্তি কম। পরে বেতন বাড়লে, বাড়বে মাসিক কিস্তিও।

এই সুবিধা নিতে চাইলে, ঋণ নেওয়ার সময়ই ব্যাঙ্ককে সে কথা জানিয়ে দিতে হবে।

তুলনা করুন

কোনও একটি ব্যাঙ্ক থেকে গৃহঋণ নিয়েছেন। ইএমআই গোনা শুরুও হয়েছে। এর মধ্যেই হঠাৎ একদিন হয়তো আবিষ্কার করলেন আপনার পড়শি অন্য ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় একই টাকা ধার নিয়েছেন কিছুটা কম সুদে। তখন কিন্তু স্রেফ বসে বসে হাত না কামড়ে, দ্রুত লেগে পড়বেন ব্যাঙ্ক বদলের কাজে। এটা করা যাবে তুলনায় কম সুদ নিচ্ছে যে ব্যাঙ্কটি, তাকে দিয়ে আপনার নেওয়া ঋণকে অধিগ্রহণ করালে। অর্থাৎ একটি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে, পরে তা অন্য ব্যাঙ্ককে দিয়ে তার আওতায় স্থানান্তরের সুবিধা। কোনও স্বীকৃত আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া গৃহঋণও এই উপায় কোনও ব্যাঙ্ককে দিয়ে অধিগ্রহণ করানো যায়। এই কাজ সেরে ফেলার পরে, ঋণের ব্যাপারে পুরনো ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থার সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক থাকবে না গ্রাহকের।

কী ভাবে?

জানবেন, ইএমআইয়ের চাপ কমানোর ইচ্ছে থাকলে শুরু থেকেই আপনাকে একটু চোখ-কান খুলে রাখতে হবে। কোথায় কোন ব্যাঙ্ক কী রকম সুদ নিচ্ছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর না রাখলে, পাঁচটা লোকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা না করলে, আদতে কোনও সুবিধাই নেওয়া হবে না। এ বার বলি কী ভাবে গৃহঋণ এক ব্যাঙ্ক থেকে আর এক ব্যাঙ্কে স্থানান্তরের পথে হাঁটবেন—

• প্রথমে নতুন ব্যাঙ্ক অর্থাৎ যাকে দিয়ে আপনার গৃহঋণ অধিগ্রহণ করাতে চাইছেন, তার কাছে এ ব্যাপারে আবেদন করতে হবে।

• কেন তা করাতে চাইছেন, সেই কারণ জানাতে হবে আবেদনপত্রে।

• সঙ্গে যে সব নথি জমা দিতে হবে, তার অন্যতম ঋণ মঞ্জুরের ব্যাপারে পুরনো ব্যাঙ্কটির দেওয়া চিঠি, সেখানকার অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট ইত্যাদি। মোদ্দা কথা, নিয়মিত মাসিক কিস্তি জমা দিচ্ছেন কি না, তার প্রমাণ দিতে হবে।

• পুরনো ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও সংস্থা থেকে এর আগে কোনও সময় ঋণ নিয়ে থাকলে তা মিটিয়েছেন কি না, সেটাও দেখে নেয় ব্যাঙ্কটি। এ জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই সিবিলে (ক্রেডিট ইনফর্মেশন ব্যুরো অব ইন্ডিয়া লিমিটেড) খোঁজ নেবেন। অর্থাৎ ধার শোধের ইতিহাস দেখে তারা।

আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে বা কখনও ঋণ নিলে, সিবিলে নথিভুক্ত হয়ে যায় আপনার নাম। সেই সব কিছুর হিসাব জমা পড়ে সিবিলের খাতায়। কোনও ঋণ বাতিল হয়েছে কি না, ধার পুরো শোধ করা হয়েছে কি না, ক্রেডিট কার্ডের টাকা মেটানো হয়েছে কি না— নাম ধরে ধরে সব খতিয়ান রাখে তারা। সেই অনুযায়ী তৈরি করে রিপোর্ট।

• সিবিলে যদি ঋণ খেলাপি হিসাবে নাম নথিভুক্ত না থাকে, তা হলেই নতুন ব্যাঙ্ক আবেদন গ্রহণ করবে।

• গৃহঋণ নিতে গেলে যে যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, এর পর নতুন ব্যাঙ্কেও সেই পুরো প্রক্রিয়াটি পূরণ করতে হবে।

• এ ভাবে কম সুদের সুবিধা নিতে এক ব্যাঙ্কের ঋণ অন্য ব্যাঙ্ককে দিয়ে অধিগ্রহণ করানোর পথে চাইলে একাধিক বারও হাঁটা যায়। যদিও ঘন ঘন ঋণ অধিগ্রহণ কারানোয় সাধারণত ব্যাঙ্কগুলি তেমন উৎসাহ দেয় না।

মাথাব্যথা কমাতে

আগে ধারের টাকা মেয়াদের আগে শোধ করে দিলে অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি চার্জ দিতে হত। সেই নিয়ম এখন উঠে গিয়েছে। ফলে কিস্তির চাপ কমানোর সবচেয়ে ভাল উপায় একলপ্তে বেশি টাকা শোধ করতে করতে এগোনো। অর্থাৎ হাতে যখনই বাড়তি তহবিল আসবে, তখনই ঋণের বেশ খানিকটা একসঙ্গে মিটিয়ে দিতে পারেন। এতে কমতে থাকবে মাসিক কিস্তির অঙ্ক। ব্যাঙ্কের ভাষায় একে বলে স্টেপ ডাউন।

অর্থাৎ বোনাস কিংবা অন্য কোনও খাতে যদি মোটা টাকা হাতে পান, তার একটা অংশ গৃহঋণ অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে মাসিক কিস্তি অনেকখানি কমাতে পারেন।

এর জন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হয়।

মনে রাখবেন, অবসরের পরেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাসিক কিস্তি চালিয়ে যাওয়া যায়। তবে সে ক্ষেত্র গ্রাহকের পেনশন অথবা নির্দিষ্ট আয়ের অন্য কোনও সূত্র থাকতে হবে। অনেক ব্যাঙ্ক ৭০ বছর পর্যন্ত ঋণ শোধের সুযোগ দেয়।

অন্য রকম ঋণ

আজকের প্রজন্ম বাড়ি কেনার জন্য আর মাথার চুল পাকার অপেক্ষা করে না। হা পিত্যেশ করে বসে থাকে না অবসরের পরে থোক টাকা হাতে আসার জন্য। তার বদলে বরং ৩০-৪০ বছরেই পছন্দের ফ্ল্যাটের চাবি চলে আসে তাঁদের অনেকের পকেটে। সৌজন্যে গৃহঋণ। তবে এখন সেই বাড়ি কিনতে ধারও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে। একজন মহিলা হয়তো চাকরির জন্য মাথা গোজার ঠাঁই চাইছেন বড় শহরে। অন্য কারও উপর নির্ভর না-করে নিজেই এক চিলতে বাসা জোগাড় করতে চান তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রয়োজন এক রকম। আবার কেউ হয়তো আর্থিক ভাবে তেমন সচ্ছল নন। ছাদ জোগাড়ের জন্য তিনি খুঁজছেন সরকারি সাহায্যের হাত। সুতরাং তাঁর চাহিদার ধাঁচ আবার কিছুটা অন্য হবে। এই সমস্ত মাথায় রেখেই এখন বেশ কিছু উদ্ভাবনী গৃহঋণ প্রকল্প এনেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। বাড়ি কিনতে নেওয়া গড়পড়তা ধারের থেকে যা বেশ কিছুটা আলাদা। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিতে।

খেয়াল রাখুন

প্রস্তাব

কিছু দিন আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে ঋণের সুদ হিসেব করার জন্য এ বার বেস রেট এবং এমসিএলআরের নিয়মের মধ্যে সমন্বয় আনা হবে। যা কার্যকর হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকেই।

শীর্ষ ব্যাঙ্কের যুক্তি

• গত কয়েক বছর ধরে এমসিএলআর কমেছে। তাই যে সব গ্রাহক এর ভিত্তিত ঋণ নিয়েছেন তাঁদের ইএমআইয়ের অঙ্কও কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু যাঁদের সুদ বেস রেট বা পিএলআর ভিত্তিক, তাঁরা এই সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।

• এখনও বেস রেটের থেকে প্রায় সব ব্যাঙ্কে এমসিএলআরের হার কম।

• বেস রেট বদলের নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই। এক একটি ব্যাঙ্ক নিজেদের ব্যবসার পরিস্থিতি বিচার করে সেই হার বদলায়। কিন্তু এমসিএলআরের ক্ষেত্রে সুদ বদলের বিষয়টি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাধ্যতামূলক ভাবে খতিয়ে দেখতে হয় সব ব্যাঙ্ককে। ঋণ দেওয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহের খরচ কত কমেছে বা বেড়েছে, সেই অনুযায়ী তখন নির্ধারিত হয় এমসিএলআরের হার বাড়বে না কমবে।

কোন পথে

কী ভাবে দু’ধরনের সুদের হারে সমন্বয় আসবে, তার প্রভাব কী হতে পারে, সে সম্পর্কে কোনও ইঙ্গিত দেয়নি শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, এতে বেস রেটের ভিত্তিতে নেওয়া পুরনো বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ইএমআই কমবে। কতটা কমবে তা অবশ্য বলা যাচ্ছে না। ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সমন্বয় আনার ফর্মুলা স্থির করলে পরিষ্কার হবে ছবিটা।

থাকছে আশঙ্কাও

বিশেষজ্ঞদের একাংশের অবশ্য আশঙ্কা, এখন কমছে বলে যে আগামী দিনেও এমসিএলআর কমতেই থাকবে, তার নিশ্চয়তা নেই। ব্যাঙ্কের আমানত সংগ্রহের খরচ বেশি হলে বাড়াতে হবে এমসিএলআর। তখন ওই হার ভিত্তিক সুদও বেশি গুনতে হবে না তো?

পাঠকের প্রশ্ন?

প্রঃ জিএসটি চালুর আগেই দুর্গাপুরে ১৪৩০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বুক করেছিলাম ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে। ৩ লক্ষ টাকা মিটিয়েছি। সঙ্গে পরিষেবা কর। ফ্ল্যাটটি তৈরির কাজ চলছে। এখন বিল্ডার বলছেন বাকি টাকায় ১২% হারে জিএসটি দিতে হবে। কী করব?

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

বিল্ডারের ১২% জিএসটির দাবি ভুল নয়। তবে ব্যবসার নীতিবোধের জায়গা থেকে চাইলে তিনি তার মূল হার কিছুটা কমাতে পারতেন। কারণ নির্মাণের সব উপকরণে তিনি ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের সুবিধা ভোগ করবেন। অর্থাৎ ফ্ল্যাট তৈরির জন্য ব্যবহৃত কাঁচামাল ও পরিষেবার উপর মেটানো কর ফেরত পাবেন। এই নিয়ম গত জুলাইয়ের জিএসটি চালুর আগে, অর্থাৎ যখন ফ্ল্যাটটি বুক করেছিলেন তখন ছিল না। ফলে বিল্ডার আগে যতটা খরচ হিসেব করে দাম ঠিক করেন এবং নির্মাণে নামেন, তার অঙ্ক এখন কমারই কথা।

তা ছাড়া, কর ছাড়ের সুবিধা ক্রেতাকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে জিএসটি আইনেও। কেন্দ্রীয় জিএসটি আইনের ১৭১ নম্বর ধারার অ্যান্টি প্রফিটিয়ারিং ব্যবস্থায় বিক্রেতা করের যে সুবিধা পাবেন, তা ক্রেতার কাছে পৌঁছতে দায়বদ্ধ। এমনকী ক্রেতা জিএসটি-তে দাম কমার সুবিধা তাঁকে দেওয়া হল না বা বেশি টাকা নেওয়া হল মনে করলে, অভিযোগ জানাতে পারেন জাতীয় অ্যান্টি প্রফিটিয়ারিং কর্তৃপক্ষের কাছে।

পরামর্শদাতা:
তিমির বরণ চট্টোপাধ্যায়

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

installment Loan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE