Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
ভারত কিন্তু উল্টো মেরুতেই

নিরপেক্ষ নেট-নীতি বাতিল আমেরিকায়

সপ্তাহ দুয়েক আগেই ভারতে নেট নিরপেক্ষতা (নেট নিউট্রালিটি) বজায় রাখতে সুপারিশ করেছিল টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই। ঠিক তার উল্টো পথে হেঁটে সেই নিয়ম তুলে দিল মার্কিন নিয়ন্ত্রক ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন (এফসিসি)।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েক আগেই ভারতে নেট নিরপেক্ষতা (নেট নিউট্রালিটি) বজায় রাখতে সুপারিশ করেছিল টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই। ঠিক তার উল্টো পথে হেঁটে সেই নিয়ম তুলে দিল মার্কিন নিয়ন্ত্রক ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন (এফসিসি)। যা বিশ্ব জুড়ে ফের বিতর্ক তুলে দিল নেট-নিরপেক্ষতা নিয়ে। আগামী দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে বিষয়টি আদালতে গড়ানোর সম্ভাবনা।

ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই নিয়ম প্রত্যাহারের কথা জানায় এফসিসি। ট্রাই কিন্তু শুক্রবার বলেছে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকার কথাই। তাদের যুক্তি, ইন্টারনেট পরিষেবা মুক্ত মঞ্চ। সেখানে সবার সমান অধিকার। সেই সম-অধিকার বা নেট-নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। নেট পরিষেবা সংস্থাগুলির এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে কোনও বৈষম্য করা উচিত নয়।

গ্রাহকদের অধিকার নিয়ে এখন দু’ভাগ দুনিয়া। এক পক্ষের মতে, সেখানে সব গ্রাহকের অধিকার সমান। বৈষম্য তাই অনৈতিক। অন্য পক্ষের দাবি, বাড়তি সুবিধায় গ্রাহকের নেট পরিষেবা বিঘ্নিত হয় না। বরং টেলিকম শিল্পের আয় বাড়ে। যা দিয়ে নতুন পরিকাঠামো গড়ে আরও বেশি গ্রাহকের কাছে নেট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। নিয়ন্ত্রণের রাশ আলগা হলে উদ্ভাবনও সহজ হয়। ভারতে এখনও প্রথম পক্ষের পাল্লা ভারী হলেও, এফসিসি দ্বিতীয় পক্ষের পাশে দাঁড়াল।

২০১৫ সালে বারাক ওবামার প্রশাসন নেট-নিরপেক্ষতার নীতি চালু করে। তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন এফসিসি চেয়ারম্যান অজিত পাই। যা ৩-২ ভোটে যেতে। মার্কিন আইনসভার স্পিকার পল রায়ানের দাবি, এতে টেলিমেডিসিন, দূর-শিক্ষা ইত্যাদি নতুন দিশা পাবে। ভারতে টেলি পরিষেবাগুলির সংগঠন সিওএআই-এর ডিজি রাজন ম্যাথুজেরও দাবি, এতে নিয়ন্ত্রণের রাশ আলগা হওয়ায় নতুন ভাবনা উঠে আসবে। বাড়বে পরিকাঠামো।

তবে এই সিদ্ধান্তে মার্কিন মুলুকে এটিঅ্যান্ডটি, কমকাস্টের মতো বড় সংস্থা একচেটিয়া সুবিধা পাবে বলে অভিযোগ উঠছে। ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলসি বলেন, বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত। নেটফ্লিক্স-ও জানিয়েছে, এটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সূচনা।

ভারতেও বছর কয়েক আগে এয়ারটেল ও ফেসবুকের বিনামূল্যে কিছু অ্যাপ ও ওয়েবসাইট পরিষেবা দেওয়া নিয়ে মাথাচাড়া দিয়েছিল এই বিতর্ক। দেড় বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শুনে নেট নিরপেক্ষতা বজায় রাখার পক্ষ নেয় ট্রাই।

নেট নিরপেক্ষতা কী?

ইন্টারনেট অনেকটা সেই রাস্তার মতো যা দিয়ে জোড়া যায় দুনিয়ার সমস্ত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা মোবাইল। ওই রাস্তার উপর সমস্ত গ্রাহকের অধিকারও সমান। কাউকে তার কোনও অংশ ব্যবহারে সাধারণত বাধা দেওয়া চলে না। কিছুটা এই কারণেই আমরা নেট বেয়ে যাতায়াত করা তথ্য (ডেটা) ব্যবহারের জন্য টাকা গুনি। কিন্তু রাস্তার ‘টোল’ গুনি না। সহজ কথায় এটিই নেট নিরপেক্ষতা।

বিতর্ক কোথায়?

ধরা যাক, একটি নেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা নির্দিষ্ট কিছু পরিষেবা তার গ্রাহকদের জন্য চিহ্নিত করল। এবং হয়তো বলল, শুধু ওই ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ এবং ‘ঘ’ পরিষেবার গোছা তাদের কাছে নিলে মিলবে বাড়তি সুবিধা। তা সে দ্রুতগতির নেট হতে পারে কিংবা কম মাসুলের (এমনকী নিখরচার) সুবিধা। অর্থাৎ, ওই নেটের রাস্তায় অন্যদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তাঁরা। অন্য দিক থেকে দেখলে, বাকিরা কিছুটা বঞ্চিত। বিতর্কের শিকড় এখানেই।

সংস্থার যুক্তি

যে সব সংস্থা নিরপেক্ষতা এড়িয়ে বিশেষ পরিষেবায় বিশ্বাসী, তাদের যুক্তি, এতে সস্তায় (কিছু ক্ষেত্রে নিখরচাতেও) প্রাথমিক ভাবে জরুরি কিছু ওয়েবসাইটের তথ্য ও পরিষেবা গ্রাহকের দরজায় পৌঁছনো সম্ভব। তাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো জরুরি ক্ষেত্রের সুবিধা। সব একসঙ্গে দিতে গেলে যা করা যাবে না।

পাল্টা সওয়াল

উল্টো পক্ষের মতে, ওটি নিছকই বিপণন কৌশল। আদপে তা খোলা ভাবে নেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ।

ধরা যাক, কেউ উল্টোডাঙ্গা থেকে ধর্মতলা যেতে চান। তার অনেক রাস্তা রয়েছে। যে যেটা খুশি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যদি বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে গেলে তবেই তিনি সুবিধা পাবেন, তাহলে সমান অধিকারের তত্ত্ব খারিজ হয়। নির্দিষ্ট কয়েক জনের জন্য দ্রুতগতির রাস্তা আলাদা করে দিলেও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে না। মুশকিল সেখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Net neutrality Rules FCC US India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE