Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ পতনে সস্তায় কিনুন ভাল শেয়ার

যে-সপ্তাহে নতুন নজির গড়ল নিফ্‌টি, সেই সপ্তাহেই ধস নামল শেয়ার বাজারে। নিফ্‌টি যখন পিছলে যায় ১০ হাজার থেকে, তখনই ৩২ হাজারের মায়া ত্যাগ করে নীচে নামে সেনসেক্স। এতটা তেজি বাজারে হঠাৎ কেন এমন হল, এই প্রশ্নই এখন সব লগ্নিকারীর মুখে।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৩
Share: Save:

পুজোর মুখে বড় ধাক্কা।

যে-সপ্তাহে নতুন নজির গড়ল নিফ্‌টি, সেই সপ্তাহেই ধস নামল শেয়ার বাজারে। নিফ্‌টি যখন পিছলে যায় ১০ হাজার থেকে, তখনই ৩২ হাজারের মায়া ত্যাগ করে নীচে নামে সেনসেক্স। এতটা তেজি বাজারে হঠাৎ কেন এমন হল, এই প্রশ্নই এখন সব লগ্নিকারীর মুখে।

কারণ বিশ্লেষণ করে যা যা পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে প্রথমেই চিহ্নিত করা যেতে পারে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে। উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যেই আবার হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করার হুমকি দিয়েছে। ঋণের বহর অত্যধিক বাড়ায় চিনের রেটিং কমিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা এস অ্যান্ড পি, যে পথে আগেই হেঁটেছিল মুডিজ। ভারতের অর্থনীতিতেও বৃদ্ধি নেমে আসার জেরে ও বেসরকারি বিনিয়োগ কার্যত থমকে থাকায় ঘনাচ্ছে শঙ্কার মেঘ। সে কথা পরোক্ষ ভাবে মেনেও নিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বৃদ্ধি আরও কমতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ। বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারও এই মুহূর্তে কিছুটা পড়ছে। ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার শেয়ার বিক্রিকেও পতনের জন্য দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুধু শেয়ার নয়, এই হঠাৎ পতন দেখা গিয়েছে টাকা এবং বন্ডের দামেও। সেই সুযোগে বেয়ার-রা চেপে বসতে চাইছে শেয়ার বাজারে। ছোট ব়ড় বহু শেয়ারের ভাল রকমের পতন বাজার দেখেছে শুক্রবার। টাটা স্টিল, এল অ্যান্ড টি, রিলায়্যান্স, আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক, হিরো মোটোকর্প ইত্যাদির মতো বড় মাপের শেয়ারের দাম কমেছে ২.৫৯% থেকে ৪.৭০%। একই সঙ্গে শেয়ার এবং বন্ডের দাম অনেকটা নেমে আসায় সাময়িক ক্ষয় হয়েছে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের নিট অ্যাসেট ভ্যালুতেও। অর্থনীতির এই অবস্থায় বিভিন্ন মহল থেকে জোরালো হয়ে উঠেছে সুদ কমানোর দাবি। এ ব্যাপারে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আর বি আই) তার ঋণনীতি ফিরে দেখতে বসে এই সিদ্ধান্ত নেবে ৪ অক্টোবর অর্থাৎ পুজোর ঠিক পরেই।

কেন্দ্রীয় সরকার বুঝতে পারছে, কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছে অর্থনীতি। গর্ত থেকে তাকে টেনে তুলতে এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন অরুণ জেটলি। সরকারের তরফে উন্নয়ন উসকে দেওয়ার লক্ষ্যে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প আনার কথা ভাবা হচ্ছে। এই ব্যাপারে যে সব পদক্ষেপ করা হতে পারে, তার মধ্যে আছে: রফতানিতে উৎসাহ দেওয়া, ছোট এবং মাঝারি শিল্পে ভর্তুকি, রেলের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত তহবিল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বাড়তি মূলধন জোগানো, বেসরকারি লগ্নির পথ প্রশস্ত করা, গ্রামে পরিকাঠামো তৈরিতে জোর এবং গৃহনির্মাণে উৎসাহ দেওয়া। এই সব খাতে খরচ অনেক বাড়লেও সরকার রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখতে চায়। অর্থাৎ সরকারকে ভাবতে হবে আয় বাড়ানোর কথা। এই পরিস্থিতিতে গতি বাড়াতে হবে বিলগ্নিকরণে। অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড চাইতে হবে আর বি আই এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির কাছে। কেন্দ্রীয় বাজেটেও পড়তে পারে এই পরিস্থিতির প্রভাব।

শঙ্কার মেঘ

• উত্তর কোরিয়ার তরফে নতুন করে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার হুমকি

• চিনের ক্রেডিট রেটিং নেমে আসা

• ভারতের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ছে, কার্যত তা কেন্দ্রীয় সরকারের মেনে নেওয়া

• আর্থিক বৃদ্ধি আরও কমার ইঙ্গিত বিশেষজ্ঞদের

• বিশ্ব বাজারের পতন

• ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রি

• সব মিলিয়ে ফের মাথা তুলছে বেয়ার-রা

• হঠাৎ পতনের গ্রাসে টাকা, বন্ডের বাজারও

তবে সরকার যে-পদক্ষেপই করুক, তাতে রাতারাতি ফল মিলবে না। অর্থাৎ এত উঁচু বাজারে ভিতরে ভিতরে দুর্বলতা থেকেই যাবে। এ ছাড়া আছে আন্তর্জাতিক অশান্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কাও চাপে রাখছে বাজারকে। শেয়ার বাজারের এই পরিস্থিতিতে পা ফেলতে হবে বেশ সাবধানে। বাজার যদি আরও কিছুটা নামে, তবে তা সুযোগ করে দেবে সস্তায় ভাল শেয়ার কেনার। একটু বড় মেয়াদের জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, তুলে রাখা যেতে পারে কিছু সম্ভাবনাময় শেয়ার।

বাজারে সাময়িক দুর্দিন দেখা দিলেও আশা জুগিয়েছে কিছু কিছু শেয়ার। চাহিদা এবং দাম বাড়ার কারণে সামনে সুদিন দেখতে পাচ্ছে ইস্পাত শিল্প। কর চাপানো হয়েছে সস্তার ইস্পাত আমদানির উপর। এই ইতিবাচক পরিবেশে খরচ কিছুটা কমিয়ে লাভের খাতায় ফিরতে চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা স্টিল অথরিটি (সেল)। দেশে-বিদেশে সুদিনের আশায় টাটা স্টিলও। ইউরোপে এই সংস্থা তার ব্যবসা মেশাচ্ছে জার্মান বহুজাতিক থাইসেনক্রুপের সঙ্গে। টাটা মোটরসের নতুন গাড়িগুলি বাজারে ভাল সাড়া পাচ্ছে। ভাল ব্যবসা করছে ইউরোপে এদের শাখা জাগুয়ার-ল্যান্ডরোভার।

টেলিকম ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিষেবা সংস্থার একে অপরের সংযোগ ব্যবহারের খরচ বা ইন্টারকানেক্ট ইউসেজ চার্জ (আইইউসি) বেশ খানিকটা কমে যাওয়ায় লাভ বাড়বে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের। গত সপ্তাহে এই সংস্থা বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে ১:১ অনুপাতে। একই সপ্তাহে শেয়ার বিভাজন করেছে ইয়েস ব্যাঙ্ক। প্রতিটি ১০ টাকার শেয়ার ভাঙা হয়েছে ২ টাকার ৫টি শেয়ারে।

গত সপ্তাহে বাজারে এসেছিল দু’টি বিমা সংস্থার ইস্যু। একটি সাধারণ বিমা এবং অন্যটি জীবন বিমা সংস্থা। মোটের উপর ভাল ভাবে উতরেছে আইসিআইসিআই লম্বার্ড ইস্যু। আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৩ গুণ। শুক্রবার বন্ধ হয়েছে এসবিআই লাইফ ইস্যু। আবেদন জমা পড়েছে ৩.৫৮ গুণ বেশি। দু’টি ইস্যুতেই শেয়ার হাতে পাওয়া সহজ হবে। তাৎক্ষণিক লাভ খুব বেশি না-ও হতে পারে। দু’টিই দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখার শেয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Share Market Stock Market Nifty Sensex BSE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE