Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

এক দেশ-এক কর

এ বার জিএসটি। এবং সবার জন্য। তবে সব থেকে সুবিধার হকদার সম্ভবত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প। কেন? আসুন দেখিসাধারণত কর নিয়ে যা হয় না, সেই টানটান উত্তেজনাই তোলা ছিল পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি-র জন্য। আট-ন’বছর ধরে বিস্তর দড়ি টানাটানির পরে সম্প্রতি যে ভাবে তার সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হল, তা যেন অনেকটা থ্রিলারের পাতা থেকে উঠে আসা।

সুমিত দত্ত মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

সাধারণত কর নিয়ে যা হয় না, সেই টানটান উত্তেজনাই তোলা ছিল পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি-র জন্য। আট-ন’বছর ধরে বিস্তর দড়ি টানাটানির পরে সম্প্রতি যে ভাবে তার সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হল, তা যেন অনেকটা থ্রিলারের পাতা থেকে উঠে আসা।

বাকি ধাপগুলি টপকে আগামী ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি সত্যিই চালু হবে কি না, তা এখনও অনেক দূরের প্রশ্ন। কিন্তু ইতিমধ্যেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে জিএসটি-র সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ নিয়ে। কেউ বলছেন, পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় এখনও পর্যন্ত সব থেকে বড় সংস্কার। আবার কারও মতে, দেশের অর্থনীতির চালচিত্রই আমূল বদলে যাবে এই করের হাত ধরে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, জিএসটি ঘিরে এমন প্রবল আগ্রহ কেন? কী এমন সুবিধা লুকিয়ে আছে এই নতুন বিলে? আসুন আজ অন্তত সংক্ষেপে তার উত্তর খুঁজি।

জিএসটি কী?

এত দিনে এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই সবার জানা। তবু আলোচনার শুরুতে এক বার মনে করে নেওয়া ভাল।

এর পুরো নাম গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা পণ্য-পরিষেবা কর। সংক্ষেপে জিএসটি।

বদল কেন?

সহজ কথায়, পুরনো কর ব্যবস্থায় যে ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং জটিলতা রয়েছে, তা দূর করতেই চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছিল জিএসটি নিয়ে।

এখন যে-পরোক্ষ কর ব্যবস্থা চালু, তাতে গলদ বিস্তর। যেমন—

অনেক ক্ষেত্রে একই পণ্য বা পরিষেবার উপর কেন্দ্র ও রাজ্য বারবার কর চাপানোয় ওই খাতে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। বলতে গেলে, করের উপরেও কর চাপে
(ট্যাক্স অন ট্যাক্স)। তাতে জিনিসপত্তরের দাম বেড়ে যায়।

বিভিন্ন কর অনেকগুলি জায়গায় গিয়ে জমা দেওয়ার ঝক্কিও যথেষ্ট। একে সময়ের অপচয়। তার সঙ্গে উপরি পাওনা হয়রানি।

অনেক রাজ্যে (যেমন পশ্চিমবঙ্গ) আবার প্রবেশ কর (এন্ট্রি ট্যাক্স বা অকট্রয়) রয়েছে। তাতে পণ্য পরিবহণের খরচ বাড়ে। রাজ্যগুলির সীমান্তে কর মেটাতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ট্রাকগুলিকে। ফলে নষ্ট হয় সময়। সঙ্গে হেনস্থার পুরনো গল্প তো রয়েইছে।

এক-এক রাজ্যে যুক্তমূল্য করের (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা ভ্যাট) হার এক-এক রকম। তা শিল্পমহল ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে যেমন অসুবিধার, তেমনই সুবিধাজনক নয় রাজ্যগুলির পক্ষেও।

আমার মতে, জিএসটি চালু হলে, এ ধরনের অনেক সমস্যারই হিল্লে হবে। সরল হবে কর ব্যবস্থা। অল্প কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া (যেমন, পেট্রোপণ্য, মদ) দেশের মধ্যে যাবতীয় পণ্য ও পরিষেবা জোগান দেওয়া এবং কেনা-বেচা আসবে এর আওতায়। প্রতি রাজ্যে আলাদা আলাদা পরোক্ষ করের ঝক্কি প্রায় থাকবে না। দেশ জুড়ে তৈরি হবে অভিন্ন বাজার। সব থেকে বড় কথা, একই পণ্যের উপর বারবার কর গোনার সমস্যা আর বইতে হবে না। কারণ, কোনও পণ্যের উৎপাদন, জোগান দেওয়া তথা বিক্রির প্রক্রিয়ায় আপনি কর দেবেন ঠিক সেটুকুর উপর, যেটুকু মূল্য তাতে যোগ করেছেন (ভ্যালু অ্যাডিশন)।

উঠবে কোন কর?

জিএসটি-র মস্ত সুবিধা একলপ্তে ১৪টি কর, সেস ও সারচার্জ স্রেফ উধাও হয়ে যাওয়া। এর মধ্যে রয়েছে— কেন্দ্রের নেওয়া উৎপাদন শুল্ক, পরিষেবা কর, আমদানি শুল্কের একটি অংশ (যাকে বলে কাউন্টারভেলিং‌ ডিউটি), সেস ও সারচার্জ ইত্যাদি।

আছে রাজ্যের সংগৃহীত যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট), কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর, ক্রয় কর, বিলাস কর, বিনোদন কর (পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনের বসানো ছাড়া), প্রবেশ কর, বিজ্ঞাপন কর, লটারি বা বাজি ধরার উপর বসানো কর ইত্যাদি। উঠে যাবে রাজ্যের চাপানো সেস, সারচার্জও। এখন এই সব কিছুর আওতায় যা যা পড়ে, তার প্রায় সবই ঢুকে পড়বে জিএসটি-র চৌহদ্দিতে।

ফলে কর মেটানোর প্রক্রিয়া অনেক সরল হবে। বাঁচবে সময়ও।

এক বারই কর

এ বিষয়ে এখনকার জমানার সঙ্গে জিএসটি আমলের ফারাক কোথায় হবে, তা একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে—

বিস্কুট তৈরিতে ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি ইত্যাদি লাগে। এই প্রতিটির উপর কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক বসে। কাঁচামাল হিসেবে কেনার সময়ে যা প্রথমে মেটাতে হয় বিস্কুট উৎপাদনকারীকে। কারণ, তা তাদের দামের মধ্যেই ধরা থাকে। এর পর যখন সেই বিস্কুট তিনি কারখানা থেকে বার করেন (ক্লিয়ারেন্স), তখন সেই মেটানো করের টাকা সরকারের থেকে ফেরত পান। একই ভাবে দিয়ে পরে ফেরত পান পরিষেবা করের টাকাও। এই পর্যন্ত তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু এর পরে যেই কেন্দ্রের কর মিটিয়ে কারখানা থেকে বিস্কুট বেরোল এবং বিক্রি করা হল, তখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কাছে তার জন্য ভ্যাট দিতে হবে। গোলমাল শুরু তখন থেকেই।

কারণ, রাজ্যের যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) বসবে বিস্কুটের দামের উপর। যার মধ্যে ধরা রয়েছে কেন্দ্রের উৎপাদন শুল্ক এবং পরিষেবা করও। কিন্তু এ বার লেনদেন রাজ্যের সঙ্গে হওয়ায় ওই কেন্দ্রীয় কর কিন্তু বিস্কুট উৎপাদক আর ফেরত পান না।

ধরুন, বিস্কুটের প্যাকেটের দাম ১২০ টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা কর ১০ টাকা করে মোট ২০ টাকা। এখন রাজ্যে ভ্যাটের হার ১০% হলে, বিস্কুটের প্যাকেটে ওই কর গুনতে হবে (১২০x১০%)= ১২ টাকা। কিন্তু এর মধ্যে ২ টাকা যুক্তমূল্য কর আসলে গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা কেন্দ্রীয় করের জন্য। তার মানে, কার্যত করের উপর ফের কর চাপছে। জিএসটি জমানায় এই সমস্যা আর থাকবে না। কারণ, তখন আর অসুবিধা থাকবে
না করের ওই ২০ টাকা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রেও।

তবে এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কেউ হয়তো যাঁদের কাছে কাঁচামাল কিনেছেন, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া রসিদের ভিত্তিতে তার উপর গোনা করের টাকা ফেরত নিলেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে নিশ্চিত করতে হবে যে, কাঁচামাল বিক্রেতারা সত্যিই কর জমা দিয়েছেন এবং তার রিটার্ন দাখিল করতেও ভোলেননি। নইলে পরে সমস্যা হতে পারে।

তিন ধরন

প্রতি ক্ষেত্রেই পণ্য বা পরিষেবা যেখানে জোগান দেওয়া তথা কেনা-বেচা হচ্ছে, জিএসটি বসবে সেখানে। তা তিন রকম হতে পারে:

(১) কেন্দ্রের বসানো (সেন্ট্রাল জিএসটি বা সিজিএসটি)।

(২) রাজ্যের বসানো (স্টেট জিএসটি বা এসজিএসটি)।

(৩) ইন্টিগ্রেটেড বা সম্মিলিত (আইজিএসটি)। সংগ্রহ করবে কেন্দ্র। যা কার্যত সিজিএসটি এবং এসজিএসটি-র যোগফল।

পণ্য বা পরিষেবা জোগান দেওয়া তথা বেচা-কেনা একটি রাজ্যের মধ্যেই হলে, বসবে সিজিএসটি ও এসজিএসটি। কিন্তু একাধিক রাজ্যে তা হলে আইজিএসটি। আমদানি হওয়া পণ্য বা পরিষেবা কোথায় এসে কোথায় যাচ্ছে এবং খরচ বা ব্যবহৃত হচ্ছে, কর চাপবে তার ভিত্তিতে। পণ্য বা পরিষেবা যে-রাজ্যে খরচ বা ব্যবহারের জন্য জোগান দেওয়া হবে, আইজিএসটি-র মধ্যে ঢুকে থাকা এসজিএসটি সেই রাজ্য সরকারের রাজস্ব খাতে পড়বে। আর সিজিএসটি সোজা চলে যাবে কেন্দ্রের রাজকোষে।

এ ক্ষেত্রে একটি কথা মাথায় রাখা ভাল। জিএসটি-র টাকা কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কী ভাবে ভাগাভাগি হবে, সেই নিয়ে মাথাব্যথা করদাতার নয়। এ বিষয়ে তাঁর চিন্তুা বরং আটক থাকা উচিত শুধু নিজের তরফ থেকে সমস্ত তথ্য ঠিকঠাক জমা দেওয়া
নিয়ে। পণ্য কোথায় তৈরি হচ্ছে, কোন জায়গা থেকে কোথায় যাচ্ছে এবং শেষমেশ কোথায় গিয়ে আমজনতার ব্যবহারের জন্য বিক্রি হচ্ছে, এই বিষয়গুলি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জমা করা জরুরি। বিশেষত সতর্ক থাকতে হবে পরিষেবা সম্পর্কে। কারণ, পণ্যের তুলনায় পরিষেবা সম্পর্কে ওই সমস্ত তথ্য জমা দেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

দু’চার কথা

এই তিন ধরনের জিএসটি সম্পর্কে আর দু’চার কথা মাথায় রাখা ভাল। যেমন—

সংস্থা বা ব্যবসার হিসাবের খাতায় খুব স্পষ্ট ভাবে লেখা থাকা উচিত যে, তিন রকম জিএসটি-র কোন খাতে কত টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে। এসজিএসটি হলে, তা দেওয়া হচ্ছে কোন রাজ্যকে।

সিজিএসটি ও এসজিএসটি-কে একেবারে আলাদা ভাবে দেখতে
হবে। সিজিএসটি-র টাকা ‘ট্যাক্স ক্রেডিট’ হিসেবে ফেরত নিলে, পরের ধাপে ফের সিজিএসটি মেটানোর জন্যই তা ব্যবহার করা যাবে। এসজিএসটি-র জন্য নয়। আবার রাজ্যের জিএসটি-র ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। একটি দিয়ে অন্যটি মেটানো শুধু আইজিএসটি-র ক্ষেত্রেই করা যেতে পারে।

আইজিএসটি বাবদ ফেরত পাওয়া টাকা প্রথমে পরবর্তী ধাপের আইজিএসটি, তার পরে সিজিএসটি এবং শেষে এসজিএসটি মেটানোয় ব্যবহার করা যাবে। একই ভাবে, সিজিএসটি-র টাকা ব্যবহার করা যাবে প্রথমে সিজিএসটি এবং তার পরে আইজিএসটি মেটানোর জন্য। কিন্তু এসজিএসটি-র টাকা দিতে তা কাজে লাগানো যাবে না।

একই ভাবে, এসজিএসটি-র টাকা দেওয়া যাবে পরের ধাপের এসজিএসটি এবং আইজিএসটি-তে। কিন্তু সিজিএসটি-র জন্য তাতে হাত দেওয়া চলবে না।

জিএসটি-র জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের কাছে সময়ে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এ নিয়ে পরে বিশদে আলোচনা
করব আমরা।

প্রত্যেক করদাতাকে তাঁর নিজস্ব পরিচিতি হিসেবে ১৩ বা ১৫ সংখ্যার একটি নম্বর দেওয়া হবে। যা তাঁদের প্যান নম্বরের সঙ্গে যুক্ত। এখন আয়করের ক্ষেত্রে যেমনটা করা হয়।

পোর্টালের কেরামতি

এই যে এত সহজে জিএসটি-র টাকা জমা দেওয়া বা তা ফেরতের কথা বলছি, তার মূলে রয়েছে একটি তথ্যপ্রযুক্তির শক্তপোক্ত পরিকাঠামো আর ইন্টারনেটের কারসাজি। যে-সংস্থা ওই পরিকাঠামো জোগাবে, তার নাম জিএসটি-নেট। যা কেন্দ্র, সমস্ত রাজ্য এবং বেসরকারি আর্থিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি।

এদের তৈরি ওয়েবসাইটে করদাতারা যাবতীয় তথ্য এবং টাকা জমা দেবেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের কর আধিকারিকদের কাছে তা পৌঁছে
যাবে ওই পোর্টাল থেকেই। তাতে সুবিধা হবে ঢের।

কারণ, পোর্টালে তিনটি জায়গা থাকবে—

(১) করদাতাদের নাম ও তথ্য নথিভুক্তির জায়গা।

(২) কর জমা ও সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেওয়ার জায়গা

(৩) রিটার্ন দাখিলের জায়গা।

এই তিন ঘরে জমা দেওয়া সব কিছু প্রযুক্তি মারফত আপনা-আপনিই ভাগ হয়ে চলে যাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর কর্তৃপক্ষের কাছে। তার মানে, পুরো কাজই সেরে ফেলা যাবে ই-ফাইলিং মারফত। ফলে এমনিতে দফতরে চক্কর কাটতেই হবে না করদাতাদের। পুরো বিষয়টি নিয়ে কারও অভিযোগ বা আপত্তি থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যেন শুধু কেন্দ্র বা রাজ্য, যে-কোনও এক তরফের কর আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করলেই চলে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

সুতরাং একটু আগে যে-কথা বলছিলাম, এখন নিশ্চয়ই তা আরও স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছেন। এই কারণেই বলছিলাম, আইজিএসটি জমা দেওয়ার পরে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে তার ভাগ-বাটোয়ারা কেমন হবে, সেই দুশ্চিন্তা করদাতার নয়। আপনার কাজ বরং সেই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ঠিক ভাবে দাখিল করা।

রিটার্ন দাখিল

করের হিসেব প্রথমে নিজেরা কষে তা জমা দিলেও, নির্দিষ্ট সময়ে জিএসটি-র রিটার্ন দাখিল করতে হবে সংস্থা ও ব্যবসাগুলিকে।

সিজিএসটি, এসজিএসটি এবং আইজিএসটি— সবগুলির জন্য থাকবে একটিই (কমন) ই-রিটার্ন।

এক এক ধরনের করদাতাকে এক একটি ফর্মে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যেমন—

(ক) সাধারণ এবং ক্যাজুয়াল (যাঁরা মাঝেমধ্যে লেনদেন করেন) করদাতা: জিএসটিআর- ১, ২, ৩ এবং ৮

(খ) কমপাউন্ডিং করদাতা (যাঁদের ব্যবসার অঙ্ক একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে এবং তার ভিত্তিতে ঠিক রয়েছে ন্যূনতম করের হারও) : জিএসটিআর- ৪ ও ৮

(গ) অনাবাসী করদাতা: জিএসটিআর- ৫

(ঘ) পরিষেবা সরবরাহকারী (ইনপুট সার্ভিস ডিস্ট্রিবিউটর): জিএসটিআর-৬

(ঙ) কর কাটছেন যিনি (ট্যাক্স ডিডাক্টর): জিএসটিআর-৭

শেষমেশ একেবারে অবিকল এই নাম ও নম্বরের ফর্মেই রিটার্ন জমা হচ্ছে কি না, তা অবশ্য বোঝা যাবে জিএসটি চালু হলে।

জিএসটি-র হার

এখনও ঠিক হয়নি। তা স্থির করবে জিএসটি কাউন্সিল। তবে সুব্রহ্মণ্যন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, সব পণ্য ও পরিষেবায় একটি হারে কর বসিয়ে যদি এখনকার রাজস্বই সংগ্রহ করতে হয়, তা হলে তা (রেভিনিউ নিউট্রাল রেট) হওয়া উচিত ১৫ থেকে ১৫.৫ শতাংশ। কমিটির পরামর্শ, বেশির ভাগ পণ্য-পরিষেবায় কর চাপুক ১৭%-১৮%। অত্যাবশ্যক পণ্যে ১২%। করের হার কম হতে পারে সোনা-রুপোর মতো দামি ধাতুতে। তবে দামি গাড়ির মতো বিলাস সামগ্রী এবং পানমশলা, ঠান্ডা পানীয়, তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যে ৪০%। তেমনই কিছু অত্যাবশ্যক
পণ্য ও পরিষেবার উপর আবার জিএসটি বসবেই না।

চোখের নিমেষে

ব্যবসার বার্ষিক অঙ্ক নির্দিষ্ট সীমা পেরোলে, জিএসটি জমা দিতে হবে।

এ জন্য প্রথমে নথিভুক্ত হতে হবে জিএসটি নেটে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগবে বড়জোর তিনটি কাজের দিন।

সিজিএসটি, এসজিএসটি এবং আইজিএসটি— তিন ধরনের করই দিতে হবে বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে। ইলেকট্রনিক ক্যাশ লেজার মারফত। তেমনই করের টাকা ফেরতও নিতে হবে ইলেকট্রনিক ক্রেডিট লেজারে।

কাঁচামাল কেনা এবং পণ্য-পরিষেবা বিক্রির যাবতীয় তথ্য জানাতে হবে ইন্টারনেটে। রিটার্ন দাখিলও করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে।

শেষ পাত

করের বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের দ্বৈত অধিকার এ দেশের সংবিধান দেয় না। সেই কারণেই আগে সংবিধান সংশোধন। সম্প্রতি সেই সংক্রান্ত বিল সংসদে পাশ হয়েছে। এ বার অর্ধেক রাজ্যের বিধানসভায় তা উতরেও গিয়েছে। রাষ্ট্রপতির সবুজ সঙ্কেতও মেলার কথা শীঘ্রই।

এই সব কিছু শেষ হলে, সিজিএসটি এবং আইজিএসটি আইনকে পাশ করাতে হবে সংসদে। বিধানসভাগুলিতে অনুমোদিত হতে হবে এসজিএসটি আইন। ১ এপ্রিল থেকে জিএসটি চালুর লক্ষ্য ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। শেষ পর্যন্ত সত্যিই সেটি করা যাবে কি না, তা নির্ভর করবে উপরের সমস্ত কাজ কত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা সম্ভব হবে, তার উপরই।

আমার মতে, জিএসটি চালু হলে, করদাতাদের সঙ্গে লাভ দেশের অর্থনীতির। কারণ, এতে করদাতাদের সময় বাঁচবে। কমবে হয়রানি। উল্টো দিকে লাভ দেশেরও। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের, যেখানে শিল্প কম কিন্তু জনসংখ্যা যথেষ্ট হওয়ায় কেনাকাটা তথা খরচ বা ব্যবহার বেশি।

কেন এ কথা বলছি?

জিএসটি সব সময়ই বসবে পণ্য বা পরিষেবা কেনাকাটা তথা খরচ বা ব্যবহারের জায়গায়। ফলে গুজরাতের মতো শিল্পোন্নত রাজ্য থেকে আসা পণ্য পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি হলে, তার ভাগ পাবে এই রাজ্যই। ফলে শিল্পে তুলনায় পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলির রাজস্ব বাড়বে। যা তারা খরচ করতে পারবে পরিকাঠামো গড়তে। যা আগামী দিনে লগ্নি টানায় সহায়ক হবে। আশা করি, এগিয়ে দেবে প্রগতির পথে।

লেখক: উৎপাদন ও আমদানি শুল্ক পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান

(মতামত ব্যক্তিগত)

জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের

পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না।

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

GST one nation one tax expert analysis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE