গত বুধবার মুম্বই শেয়ার বাজারে কাটা হয় ৩০ কেজি ওজনের এক অতিকায় কেক। উপলক্ষ ছিল প্রথম বারের জন্য সেনসেক্সের ৩০ হাজারে সওয়ার হওয়া। ওই দিন বিএসই সূচক প্রথম বারের জন্য বন্ধ হয় ৩০ হাজারের উপরে ৩০,১৩৩ অঙ্কে। বাজার বন্ধের সময়ে এটাই এ পর্যন্ত সেনসেক্সের রেকর্ড উচ্চতা। ওই দিন নজির গড়ে নিফ্টিও। বন্ধ হয় ৯,৩৫২ অঙ্কে।
২০০৩ সালের এপ্রিলে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের এই সূচক এক দিন নেমে এসেছিল মাত্র ৯২০ অঙ্কে। পরের ১৪ বছর ধরে নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও (২০০৮ সালের বিশ্ব মন্দা-সহ) নিফ্টি বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। বড় মেয়াদে এই ধরনের উত্থান শেয়ার বাজারেই সম্ভব।
নানা ধরনের অনুকূল হাওয়া এখন বইছে বাজারে। ফলে বাইরে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শেয়ার বাজারও। কারণগুলি দেখে নেব এক নজরে:
• আবহাওয়া দফতরের তরফে স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস। এল নিনোর প্রভাব কমে আসার পথে
• আশঙ্কার তুলনায় এখনও পর্যন্ত ভাল ফলাফল ঘোষণা বিভিন্ন সংস্থার
• উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির পুর নির্বাচনে বিজেপি-র বড় সাফল্য।
• নভেম্বরে বড় অঙ্কের নোট বাতিলের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়া
• চলতি ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে আর্থিক বৃদ্ধি উপরে ওঠার আশা।
• বিশ্ব বাজারে চাঙ্গা ভাব। ফ্রান্সের নির্বাচনী ফলাফলে বাজার খুশি।
এতটা উঠলেও বাজার যে এখন ‘বুল বলয়ে’, তা কিন্তু বলা হচ্ছে না। যে-কোনও ছোটখাটো কারণে তার চূড়া কিন্তু কিছুটা ভাঙতে পারে। এই কারণে এতটা উচ্চতায় শুধু মাত্র ভাল শেয়ারে লগ্নি করতে হবে। হাতে মাঝারি থেকে নিম্নমানের শেয়ার ধরা থাকলে এই চড়া বাজারের সুযোগ নিয়ে তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ও রয়েছে।
শেয়ার বাজার এতটা তেতে ওঠায় গত কয়েক মাসে বেশ আকর্ষণীয় হারে বেড়েছে ইকুইটি ফান্ডগুলির ন্যাভ। ফান্ডগুলি এতটা ভাল করায় এবং অন্য দিকে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদ কমে আসায় বহু মানুষ ঝুঁকছেন মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে। দ্রুত বাড়ছে এসআইপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও মোট মাসিক জমার পরিমাণ। মাসিক জমা পৌঁছেছে ৪,৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। মিউচুয়াল ফান্ডের আওতায় থাকা মোট সম্পদের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা।
ভাল বর্ষার দেখা মিললে শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ ভাল বলেই মনে করা হচ্ছে। আশা, ডিসেম্বরের মধ্যে নিফ্টি ১০ হাজারে ও সেনসেক্স ৩২ -৩৩ হাজারে পৌঁছে যেতে পারে। অর্থাৎ যাঁরা শেয়ার কেনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তাঁরা ফান্ডের পথে বাজারের স্বাদ নিতে পারেন। তবে এত উঁচু বাজারে এক লপ্তে লগ্নি না-করে এসআইপি অথবা এসটিপি-র (সিস্টেম্যাটিক ট্রান্সফার প্ল্যান) পথে লগ্নি করলে ঝুঁকি কম থাকবে।
যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানি ফলাফল তার তুলনায় অনেকটাই ভাল। বেশ ভাল ফল প্রকাশ করেছে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ফল খারাপ হলেও তা আশঙ্কার তুলনায় ভাল। উন্নত ফলাফলের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও। বছরের শেষ তিন মাসে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ঘরে তুলেছে ৩২০ কোটি টাকার নিট মুনাফা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল মাত্র ৯৪ কোটি টাকা।
চড়ছে পারদ
•
স্বাভাবিক বর্ষার ইঙ্গিত। এল নিনোর প্রভাব কমে যাওয়ার সম্ভাবনা
•
এখনও পর্যন্ত ভাল কোম্পানি ফলাফল, যদিও এ নিয়ে আশঙ্কা ছিল যথেষ্টই
•
উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির পুর ভোটে বিজেপি-র বড় সাফল্য মোদী সরকারের হাত শক্ত করবে বলে আশা
•
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নোট বাতিলের বিরূপ প্রভাব কমে আসা
•
২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে আর্থিক বৃদ্ধি নতুন উচ্চতা ছোঁয়ার আশা
•
ফ্রান্সের নির্বাচনী ফলাফলে বাজার খুশি
•
শেয়ার বাজারের হাত ধরে ইক্যুইটি ফান্ডের ন্যাভ ফুলে-ফেঁপে ওঠা
•
রমরমা নতুন ইস্যুর বাজারেও
•
ডিসেম্বরের মধ্যে সেনসেক্স ৩২-৩৩ হাজার, নিফ্টি ১০ হাজার ছোঁয়ার আশা বিশেষজ্ঞদের
নোট বাতিল সত্ত্বেও ফলাফলে তাক লাগিয়েছে পয়লা নম্বর গাড়ি সংস্থা মারুতি-সুজুকি। জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে মারুতির নিট মুনাফা ১৫.৮ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১৭০৯ কোটি টাকায়। ২০.৪ শতাংশ বেড়ে আয় পৌঁছেছে ২০,৭৫১ কোটি টাকায়। ওই তিন মাসে মারুতি বিক্রি করেছে ৪.১৪ লক্ষ গাড়ি। প্রতিটি ৫ টাকার শেয়ারে কোম্পানির পরিচালন পর্ষদ ৭৫ টাকা ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। গত শুক্রবার বেলা শেষে মারুতি শেয়ারের বাজার দর ছিল ৬,৫২৫ টাকা।
বাজার চাঙ্গা থাকায় রমরমা অবস্থা নতুন ইস্যুতেও। অনেক ইস্যু আসছে এই বাজারে এবং ভাল সাড়াও পাচ্ছে। মোটা লাভের মুখ দেখছেন সফল লগ্নিকারীরা। গত সপ্তাহে বেশ ভাল ভাবে উতরে গিয়েছে এস চাঁদ অ্যান্ড কোম্পানির আইপিও। ৮ মে খুলছে সরকারি সংস্থা হাডকো-র পাবলিক ইস্যু। আকার ১,২০০ কোটি টাকা। মূল্য-বন্ধনী ৫৬-৬০ টাকা। গৃহঋণ সংস্থাগুলির এখন বেশ কদর বাজারে। অর্থাৎ অল্প দামের এই ইস্যুতে ভাগ্য পরীক্ষা করা যেতেই পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy