দায় ২০০ কোটি। মূল্যায়ন অনুযায়ী, সম্পদ সেখানে ৮০০ কোটি টাকার। গত চার বছরে টানা বেড়েছে উৎপাদন। চার বছর পরে সম্ভব হয়েছে মুনাফার মুখ দেখাও। পুনরুজ্জীবনের ‘এত সম্ভাবনা উঁকি দেওয়া সত্ত্বেও’ বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে ঘিরে রয়েছে বকেয়া নিয়ে ধোঁয়াশা।
পাওনাদারদের নিয়ে তৈরি ক্রেডিটর্স কমিটির মূল্যায়ন অনুযায়ী, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের সম্পদের মোট মূল্য দায়ের প্রায় চার গুণ। আগে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছিল, যদি শেষমেশ দেখা যায় যে, সংস্থার সম্পদ তার দায়ের দ্বিগুণ, তাহলেই তার পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ফলে এখন সংস্থা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, কর্মীদের পাওনার অঙ্ক কী দাঁড়ায়, তার উপরে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের পুনরুজ্জীবন নির্ভর করছে অনেকখানি। কারণ, কর্তৃপক্ষ দায় ২০০ কোটির মতো বলে দাবি করলেও সংস্থার বিভিন্ন ইউনিয়নের দাবি, বেতন সংশোধনজনিত বকেয়া-সহ শুধু কর্মীদের পাওনা মেটাতেই লাগবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষের আবার দাবি, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তাই কর্মী-অফিসারদের বেতন সংশোধন-সহ সমস্ত পাওনা মেটানো হবে এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী। ওই নির্দেশ অনুযায়ী হিসেব করলে, কর্মী এবং অফিসারদের বকেয়া তাঁদের দাবির থেকে অনেক কম বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দু’পক্ষের এই দু’রকম দাবিতে কোথাও একটা ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। তাই তা স্পষ্ট হওয়ার উপরে সংস্থার ভবিষ্যৎ অনেকখানি নির্ভর করবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
অথচ অনেকেই মনে করছেন, অন্য অনেক মাপকাঠিতে ফেললে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো রসদ মজুত রয়েছে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে। গত চার বছর ধরে টানা বাড়ছে সংস্থার উৎপাদন এবং আয়। চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে তারা ফের মুনাফার মুখ দেখেছে। যার জোরে রাজ্যে ওয়াগন এবং অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য তৈরির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের সিএমডি আসদ আলম জানান, ‘‘এই আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসে আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫১.৫% বেড়েছে। ২০১৬-’১৭ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে মোট আয় ছিল ৫৪.৯১ কোটি। চলতি অর্থবর্ষের ওই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১৩৮.১ কোটি টাকা। গত অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে যেখানে ১১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল, সেখানে এই বছরে মুনাফা ৪৯.৫০ লক্ষ টাকা।’’
উৎপাদনও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। আলম জানান, ‘‘গত বারের তুলনায় চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে ওয়াগন উৎপাদন ৪৩০.৫৫% বেড়ে হয়েছে ৫৭৩টি। ২৫০টি নতুন ওয়াগন তৈরি এবং ১,২০০টি মেরামতের বরাত এসেছে।’’
ফলে এ সব কিছুর পরে ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে সেই বকেয়া নিয়ে। কারণ, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, পণ্য সরবরাহকারী সংস্থাগুলির কাছে তাদের মোট বকেয়া প্রায় ৪৭ কোটি টাকা। কিন্তু কর্মীদের কত টাকা পাওনা মেটাতে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত কর্মীদের তরফে ৩,৭০০টি বকেয়ার দাবি জমা পড়েছে রেজলিউশন প্রফেশনালের কাছে। এনসিএলটি জানিয়েছে, রেজলিউশন পরিকল্পনা জমা পড়া পর্যন্ত ওই দাবি জমা দেওয়া যাবে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে পুনরুজ্জীবিত করা বা গুটিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য সংস্থায় নিযুক্ত রেজলিউশন প্রফেশনালকে নির্দেশ দিয়েছে এনসিএলটি। ওই পরিকল্পনা উপযুক্ত এজেন্সি দিয়ে তৈরি করাতে হবে। জানাতে হবে, পাওনাদারদের টাকা কী ভাবে মেটানো হবে। তার পরে যদি চাঙ্গা করার সম্ভাবনা থাকে, তবে তার জন্য অর্থের সংস্থান, বিশদ পরিকল্পনা জানাতে হবে। দায়ের বিষয়টি স্পষ্ট তাই জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy