Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সুদ কমানোর রাস্তা খোলা, জানালেন রাজন

ঋণনীতির কমিটি নিয়ে একমত কেন্দ্র, আরবিআই

অবশেষে ঐকমত্যের ঘোষণা। দু’তরফ থেকেই। শনিবার মার্কিন মুলুকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন জানালেন, সুদ নির্ধারণের (মনিটারি পলিসি) কমিটি গঠন নিয়ে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তাঁরা।

রঘুরাম রাজন ও অরুণ জেটলি

রঘুরাম রাজন ও অরুণ জেটলি

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৯
Share: Save:

অবশেষে ঐকমত্যের ঘোষণা। দু’তরফ থেকেই।

শনিবার মার্কিন মুলুকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন জানালেন, সুদ নির্ধারণের (মনিটারি পলিসি) কমিটি গঠন নিয়ে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তাঁরা। শীঘ্রই যার খুঁটিনাটি জানাবে মোদী সরকার। একই দিনে নয়াদিল্লিতে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিরও ঘোষণা, কমিটি গড়া নিয়ে এখন একই নৌকায় তাঁর মন্ত্রক এবং শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কমিটি সম্পর্কে বিশদ জানানো হবে সংসদে।

একই সঙ্গে, এ দিন সরাসরি সুদ কমানোর কথা না-বললেও, অন্তত তার দরজা খোলা রাখার কথা জানিয়েছেন রাজন। বলেছেন, ‘‘(সুদ কমানোর) সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্যই পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখব। তবে আমরা কখনও বলিনি যে, সুদ কমানোর পালা শেষ।’’ অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমে আসলে সেপ্টেম্বরের ঋণনীতিতে সুদ ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সুদ কমানোর প্রয়োজনের কথা এ দিন ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন জেটলিও। বলেছেন, ৮-১০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে মূলধন সংগ্রহের খরচ কমা জরুরি। ইঙ্গিত স্পষ্ট, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ ছাঁটাইয়ের পক্ষে আবার সওয়াল করেছেন তিনি।

কানসাস সিটি ফেডারেল রিজার্ভের জ্যাকসন হোল ইকনমিক সিম্পোজিয়ামে যোগ দিতে মার্কিন মুলুকে গিয়েছেন রাজন। সেই মঞ্চ, যেখানে দাঁড়িয়ে এক সময় ২০০৮ সালের বিশ্বজোড়া ভয়াল মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি। শনিবার ফের সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ঋণনীতি নির্ধারণের জন্য যে কমিটি গড়া নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চলছিল, তার চেহারা কেমন হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছনো গিয়েছে।’’

ওই কমিটি কেমন হবে, তা নিয়ে জুলাইয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করেছিল কেন্দ্র। তাতে পাল্লা ভারি ছিল সরকারি প্রতিনিধিদের। তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। এ দিন রাজনের অবশ্য দাবি, যে কমিটির বিষয়ে তাঁরা একমত হয়েছেন, তার চেহারা ওই প্রস্তাবের থেকে আলাদা।

চলতি সপ্তাহেই এই ঐকমত্যে পৌঁছনোর দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হা। এ বার একই দিনে সেই একই কথা বললেন রাজন আর জেটলিও। শেষ পর্যন্ত নতুন নিয়ম চালু হলে বদলে যাবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ নির্ধারণের পদ্ধতি।

এখন সুদ বাড়ানো-কমানো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার একান্ত ভাবেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধারের। এ নিয়ে উপদেষ্টা পর্ষদের মতামত শুনলেও, তা মানতে বাধ্য নন তিনি। যেমন গত ঋণনীতিতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পর্ষদের সিংহভাগ সদস্য সুদ কমানোর পক্ষে ছিলেন। অথচ শেষ পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন রাজন। কিন্তু নতুন নিয়ম কার্যকর হলে, সুদ নির্ধারণের দায় বর্তাবে ওই কমিটির ঘাড়ে। তা ঠিক হবে সেখানে ভোটাভুটির ভিত্তিতে। গভর্নরের একার ইচ্ছেয় নয়। ঠিক যে ভাবে সুদের হার ঠিক করে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ কিংবা ব্রিটেনের ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড।

কমিটির সিদ্ধান্তে সুদ নির্ধারণের কথা আজ দীর্ঘ দিন বলে আসছেন রাজনও। তাঁর যুক্তি, তাতে ব্যক্তি বিশেষের উপর চাপ কমে। একই সঙ্গে গভর্নর বদলালেও বজায় থাকে ঋণনীতির ধারাবাহিকতা। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছুতেই কেন্দ্রের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না কমিটির গঠন নিয়ে। কেন্দ্র চাইছিল, সেখানে তাদের প্রতিনিধি বেশি থাকুক। খর্ব হোক গভর্নরের একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার (ভেটো প্রয়োগ) ক্ষমতা। উল্টো দিকে, নিছক ভোটের রাজনীতির কথা ভেবে তড়িঘড়ি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গিয়ে কেন্দ্র যাতে ইচ্ছেমতো সুদ কমাতে না-পারে, সেই কারণে কমিটিতে নিজেদের প্রতিনিধি বেশি রাখার পক্ষে সওয়াল করছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। শেষ পর্যন্ত দর কষাকষির কোন বিন্দুতে ঐকমত্যে পৌঁছনো গেল, তা বোঝা যাবে সরকারি ঘোষণার পরই। তবে গভর্নরের ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা ছাড়তে যে তাঁর আপত্তি নেই, এ দিন ফের তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজন।

সুদ কমানো নিয়েও রাজনের ‘মত বদলের’ ইঙ্গিত মিলেছে এ দিন। বৃদ্ধির চাকায় গতি জোগাতে সুদ ছাঁটাইয়ের জন্য আজ অনেক দিন ধরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে কেন্দ্র। একই দাবি তুলেছে শিল্পমহলও। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যে তিনি কোনও তাড়াহুড়োয় রাজি নন, সে কথা বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজন। গত ২০ অগস্টও বলেছেন, আপাতত দেশে বর্ষার গতিবিধি খুঁটিয়ে খেয়াল রাখছেন তাঁরা। নজর রাখছেন বিশ্ব অর্থনীতিতে। সেই আতসকাচের নীচে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্ত যেমন রয়েছে, তেমনই আছে চিনা মুদ্রা ইউয়ানের দাম ক্রমাগত পড়তে থাকা। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মূল্যবৃদ্ধির উপর এই সবের প্রভাব খতিয়ে দেখে তবেই সুদ কমানোর পথে হাঁটবেন তিনি।

উল্টো দিকে, সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্কের এক অনুষ্ঠানে এসে জেটলি বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে, নিশ্চয় তা খেয়াল করছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ, ঘুরিয়ে ফের সেই সুদ কমানোর পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন তিনি। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তারও দাবি ছিল, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির হার এই মুহূর্তে যেখানে দাঁড়িয়ে, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ২০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানো উচিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। সেখানে এ বছর এখনও তা কমেছে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট।’’ বিশেষত খুচরো ও পাইকারি, দুই বাজারেই মূল্যবৃদ্ধির হার যখন তলানিতে, তখন সুদ না-কমানোর কোনও কারণ নেই বলে মনে করছে নর্থ ব্লক। ঋণনীতির কমিটির পাশাপাশি সুদ কমানো নিয়ে দু’পক্ষের দূরত্বও এ দিন কিছুটা কমার ইঙ্গিত পেয়েছেন অনেকে। ব্যবসার পথ সহজ করতে দেউলিয়া ঘোষণার নতুন আইন আনা নিয়েও একই সুরে কথা বলেছেন রাজন ও জেটলি।

রাজনের আশ্বাস, দেশের অর্থনীতির হাল ফিরছে। চিনা অর্থনীতির সঙ্কট নিয়ে ভয়ের কারণ নেই। তার প্রভাব সে ভাবে পড়বে না ভারতের উপর। তবে বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি বিচার করে সুদ বাড়ানোর বিষয়ে ফেড রিজার্ভকে ধীরে চলার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE